আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে অন্যতম দু’টি নিয়ামত হলো অর্থসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি। কেননা, একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই সন্তান ও সম্পদ দানের মালিক। পবিত্র কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘অতঃপর যখন জুমার নামাজ আদায় করা হয়ে যাবে, তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাও এবং আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ তালাশ করো’ (সূরা জুমআ-১০)। এখানে অর্থসম্পদ ও ব্যবসায়কে অনুগ্রহ সাব্যস্ত করা হয়েছে। তেমনিভাবে কুরআন মাজিদে সম্পদকে ‘খাইরুন’ অর্থাৎ কল্যাণ সাব্যস্ত করা হয়েছে। তবে এই নিয়ামতের সাথে সাথে আল্লাহর কাছে এ দুনিয়ার মূল্য কতটুকু এ বিষয়ে হাদিস শরিফে এসেছে- ‘দুনিয়া যদি আল্লাহ তায়ালার কাছে মাছির ডানার বরাবর মূল্যও রাখত, তাহলে আল্লাহ তায়ালা কোনো কাফেরকে এক ঢোক পানিও পান করতে দিতেন না’ (তিরমিজি-২৩২০)। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদের অপর এক আয়াতে বর্ণনা করেছেন- ‘কিয়ামতের দিন অর্থসম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি কারো কোনো উপকারে আসবে না। কেবল তারাই মুক্তি পাবে, যারা সুস্থ অন্তঃকরণ নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে’ (সূরা শুআরা, আয়াত : ৮৮/৮৯)। হজরত ইবনে আব্বাস রা: বলেন, সুস্থ অন্তঃকরণ দ্বারা সেই অন্তর বোঝানো হয়েছে, যা কালেমায়ে তাওহিদের সাক্ষ্য দেয় এবং শিরক থেকে পবিত্র।
এই বিষয়বস্তুই হাসান বসরি ও সাইদ ইবনে মুসাইয়াব রহ: থেকে ভিন্ন ভাষায় বর্ণিত আছে। তারা বলেন, সুস্থ অন্তর একমাত্র মুমিনের হতে পারে। কাফেরের অন্তর রুগ্ন থাকে। যেমনটি কুরআন মাজিদে বলা হয়েছে- ‘ফি কুলুবিহিম মারদুন’। অর্থাৎ মুমিন ব্যক্তি বাদে কিয়ামতের দিন কাফেরদের ধনসম্পদ না কোনো উপকারে আসবে, না তাদের সন্তান-সন্ততি; এমনকি বাহ্যিকভাবে জনসাধারণের কল্যাণ ও মঙ্গলের কাজে যেসব অর্থ ব্যয় করে, তাও ব্যর্থ হয়ে যাবে।
সুতরাং বহুল আলোচিত তাফসিরে জানা যায়, মানুষের অর্থসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিও কিয়ামতের দিন উপকারী হতে পারে, যদি তা মুমিনের হয়। আর তা এভাবে যে, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে স্বীয় সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করেছিল কিংবা কোনো সদকায়ে জারিয়া করার সাথে সাথে যদি সে খাঁটি ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করে, তবে তার ব্যয়কৃত অর্থসম্পদে সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব কিয়ামতের দিনে হিসাবের পাল্লায় তার উপকারে আসবে। পক্ষান্তরে সে যদি মুসলমান না হয়, অথবা মৃত্যুর আগে ঈমানহারা হয়ে যায়, তাহলে দুনিয়াতে সম্পাদিত কোনো সৎকর্মই তার পরকালে কাজে আসবে না। সন্তান-সন্ততির ব্যাপারটিও তদ্রুপ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মুসলমান হলে পরকালেও সে সন্তানের উপকার পেতে পারে এভাবে যে, তার মৃত্যুর পর তার সন্তান তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করবে। অথবা সে তার সন্তানকে সৎকর্মপরায়ণরূপে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। মৃত্যুর পর সেই সন্তানের সৎকর্মের সওয়াব আপনা আপনি সেও পেতে থাকবে। অথবা কিয়ামতের দিন সৎকর্মপরায়ণ সন্তান তার জন্য সুপারিশ করবে। সুপারিশের বিষয়টি কুরআন ও হাদিসে প্রমাণিত। কুরআনে বিষয়টি এভাবে বর্ণিত হয়েছে- ‘আমি আমার সৎ বান্দাদের সাথে তাদের সন্তান-সন্ততিকেও মিলিত করে দেবো।’ আলোচ্য আয়াতের প্রসিদ্ধ তাফসিরে জানা যায়, পরকালে যেখানেই পারিবারিক সম্পর্ক কাজে না আসার কথা বলা হয়েছে, সেখানেই উদ্দেশ্য হলো, যারা মুমিন নয় তাদের কাজে আসবে না। এমনকি পয়গম্বরের আত্মীয়ও না। যেমনটি হজরত নূহ আ:-এর ছেলে ও ইবরাহিম আ:-এর পিতার ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপার্জিত সম্পদ দিয়ে সদকায়ে জারিয়া ও পরকালে উপকার পাওয়ার মতো সৎকর্মপরায়ণ সন্তান-সন্ততি রেখা যাওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন। লেখক : শিক্ষার্থী, আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, সারুলিয়া, ডেমরা, ঢাকা