ঝিনাইদহের শৈলকুপায় নতুন করে আবারও তীব্র আকারে গড়াই নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে জমিজমা ও ঘরবাড়ি হারানোর ভয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে উপজেলার একাধিক গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের। ইতোপূর্বে নদীগর্ভে সবকিছু হারিয়ে অনেকেই এখন নিঃস্ব। এমন ভাঙন রোধে আগাম কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতাকে দুষচ্ছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। এতে করে চরম ক্ষুদ্ধ ওই এলাকার ভুক্তভোগীরা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নতুন করে বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছেন সারুটিয়া ইউনিয়নের বড়–রিয়া, কৃষ্ণনগর, হাকিমপুর ইউনিয়নের মাদলা এবং ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের কাশিনাথপুর, মাজদিয়া ও উলুবাড়িয়া গ্রাম। প্রায় দুই যুগ ধরে একে একে গড়াই নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বদলে গেছে নদীর গতিপথ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বড়–রিয়া, কৃষ্ণনগর, খুলুমবাড়ি, মাদলা, কাশিনাথপুর ও লাঙ্গলবাঁধ। ভিটেবাড়ি ও সহায়-স¤॥^ল হারিয়ে কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন পাউবোর প্রধান সেচ খালের কাছে। সারুটিয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের রহিম মিয়া বলেন, নদী ভাঙন একদম আমার বাড়ির কাছে চলে এসেছে। সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকি কোন সময় ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়। প্রায় ২ মাস ধরে ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীর পানি কমছে আর গড়াই নদী ভাঙনের ভয়াল রূপ নিচ্ছে। ইতোপূর্বে নদীগর্ভে ভিটেমাটি চাষাবাদের জমি ও সহায়-স¤॥^ল হারিয়েছি আমরা। হাকিমপুর ইউনিয়নের পূর্ব মাদলা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সোবহান বলেন, গড়াই নদীর ভাঙনে এলাকার অনেক বাড়িসহ ফসলি জমি যেকোনো সময় বিলীন হতে পারে। আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। অতিসত্বর নদী ভাঙন রুখতে না পারলে গুচ্ছগ্রাম, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভিটেমাটি ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাবে। সহায় সম্বল হারানো একই গ্রামের রেবেকা খাতুন বলেন, নদীগর্ভে সবকিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব। নদীর ভয়াল আচরণে গত বিশ বছওে চারবার জায়গা পরিবর্তন করেছি, আবারও আমরা ভাঙনের হুমকির মুখে। আমার স্বামী মারা গেছে, এক ছেলেকে নিয়ে স্বামীর ভিটা আঁকড়ে ধরে আছি। বর্তমানে খুব কষ্টে দিন পার করছি। আমরা যে কষ্টে আছি এলাকার চেয়ারম্যান, মে¤॥^াররা খোঁজ নেয় না। এই ভাঙন রোধে আগাম কোনো ব্যবস্থা নিলে হইতো এতো ভয়ানক রুপ নিতো না সর্বনাশা গড়াই। এ বিষয়ে ৬নং সারুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মামুন ও ৮নং ধলরাহচন্দ্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বিশ্বাস উভয়ই বলেন, নদী ভাঙন রোধে ঝিনাইদহ নির্বাহী প্রকৌশলীর এসব এলাকায় পরিদর্শন করার কথা ছিল। তিনি তা না করে দায়িত্ব অবহেলা করেছেন। যদি আগাম ব্যবস্থা নিতেন হইতো এমন ভাঙন রুপ নিতো না। অতি দ্রুত ভাঙনরোধে পদক্ষেপ না নিলে হইতো পরিবারগুলো সব হারিয়ে একদম নিঃস্ব হয়ে যাবে। তারা অতি দ্রুত ভাঙন রুখতে কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন। শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) বনি আমিন বলেন, বিষয়টি আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে জানলাম। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান বাপ্পি মুঠোফোনে জানান, আমাদের শাখা কর্মকর্তা ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন রুখতে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।