সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪, ০৬:০৪ অপরাহ্ন

শ্রমিক থেকে শীর্ষ ধনী ঝং শেনশেন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২২

দিনদিন পৃথিবী হয়ে উঠছে আরও বেশি প্রযুক্তিনির্ভর। বাড়ছে প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহার। তাতে হু হু করে আয় বাড়ছে প্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের। ফলে বিশ্বের শীর্ষধনীদের তালিকার বেশিরভাগ জায়গাই আজ তাদের দখলে। কিন্তু এর মধ্যেই যেন ব্যতিক্রম ঝং শেনশেন। তিনি চীনের মতো একটি ধনাঢ্য দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন পানির ব্যবসা করে।
ঝংয়ের বিলিয়নিয়ার হয়ে ওঠার এই অনুপ্রেরণাদায়ক যাত্রার শুরুতে ছিল কয়েক দশকের কঠোর পরিশ্রম আর অভিজ্ঞতা। সঙ্গে ব্যর্থতা সামলানোর অসীম ধৈর্য। ঝং শেনশেনের জন্য চীনের শীর্ষ ধনীর আসনে বসার পথটা মোটেও সহজ ছিল না। এই পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে গণমাধ্যম, বিপণন, এমনকি কৃষি খাতে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তিনি।
১৯৬৬-৭৬ সালে চীনে ‘কুখ্যাত’ সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় ঝংয়ের বাবা-মাকে বুদ্ধিজীবী হিসেবে দেখা হয়েছিল। এ কারণে তার শিক্ষার সুযোগ কমে যায়। জুনিয়র স্কুল থেকে ড্রপ আউট হয়ে পরিবারের অর্থ উপার্জনে সাহায্য করতে শুরু করেন ঝং। পরবর্তী ১০ বছর ইটভাটার শ্রমিক ও কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ১৯৭৭ সালে শিক্ষা ব্যবস্থা স্বাভাবিক হলে কলেজে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেন ঝং শেনশেন। কিন্তু দু’বার পরীক্ষা দিয়েও ব্যর্থ হন তিনি। শেষ পর্যন্ত এখনকার ঝেজিয়াং রেডিও অ্যান্ড টিভি ইউনিভার্সিটিতে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হন ঝং। গ্রাজুয়েশন শেষে ঝেজিয়াং ডেইলি পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন তরুণ ঝং শেনশেন। ১৯৮৮ সালে হাইনানকে বিশেষ অর্থনৈতিক অ ল ঘোষণা করা হয়। এটি ঝংকে সাংবাদিকতার চাকরি ছেড়ে দ্বীপ প্রদেশটিতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করে।
সেখানে গিয়ে তিনি প্রথমে প্যাসিফিক পোস্ট নামে একটি সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু এটি ব্যর্থ হলে পরে মাশরুমের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু হাইনানের আবহাওয়া মাশরুম উৎপাদনের উপযোগী ছিল না। ফলে দ্রুতই অর্থকড়ি হারিয়ে বসেন ঝং। সেই তুলনায় পর্দা বিক্রির ব্যবসায় বেশ লাভবান হন তিনি। এ থেকে আয় হয় কয়েক হাজার ডলার। কিন্তু চিংড়ির ব্যবসায় হাত দিয়ে আবারও লোকসানের মুখে পড়েন ঝং শেনশেন। এমন সময়ে তার সঙ্গে পরিচয় হয় হাংঝৌয়ের বাসিন্দা জং কিংহোর সঙ্গে। কিংহো ওয়াহাহা নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী। এটি বোতলজাত পানি, জুসসহ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে থাকে। হাইনান বিশেষ অর্থনৈতিক অ ল হওয়ায় সেখান থেকে কম দামে ওয়াহাহার পণ্য কিনতে পারতেন ঝং শেনশেন। শোনা যায়, এসব পণ্য তিনি চীনের মূল ভূখন্ডে নিয়ে বিক্রি করতে শুরু করেছিলেন এবং তা থেকে আয়ের অংশটুকু নিজের পকেটে পুরতেন। এ নিয়ে ঝং ও কিংহোর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্য বাজারের সম্ভাবনা বুঝতে পেরে ১৯৯৩ সালে হাইনান ইয়াং শেং ট্যাং প্রতিষ্ঠা করেন ঝং। কোম্পানিটি ‘কচ্ছপের বড়ি’সহ বিভিন্ন সম্পূরক খাদ্য বিক্রি করতো (চীনে কচ্ছপকে দীর্ঘায়ু ও সুস্থতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়)। ‘কচ্ছপের বড়ি’ বিক্রি ভালোই চলছিল ঝংয়ের। কিন্তু বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে ব্যবসার সম্ভাব্য বিকল্পগুলো নিয়ে ভাবতে বাধ্য হন তিনি। শেষ পর্যন্ত উপসংহারে আসেন, যা-ই ঘটুক না কেন, মানুষের পানি পান করতেই হবে। এই ভাবনা থেকেই ১৯৯৬ সালে বোতলজাত পানি বিক্রির প্রতিষ্ঠান নংফু স্প্রিং প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। গত দুই দশকে শুকনো মাংস, বোতলজাত চা, জুসসহ নানা ধরনের বেভারেজ পণ্য বাজারে এনেছেন ঝং শেনশেন। ভ্যাকসিন নির্মাতা ওয়াংতাই বায়োলজিক্যাল ফার্মেসি এন্টারপ্রাইজের মালিকানাও তার। তবে ঝংকে চীনের শীর্ষ ধনীর আসনে বসিয়েছে মূলত পানির ব্যবসাই। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে নংফু স্প্রিং হংকংয়ের শেয়ারবাজারে নথিভুক্ত হতেই একলাফে কয়েক হাজার কোটি ডলার বেড়ে যায় ঝংয়ের সম্পদ। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের রিয়েল টাইম বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স বলছে, এই মুহূর্তে ঝং শেনশেনের সম্পদের পরিমাণ ৬ হাজার ৯৪০ কোটি মার্কিন ডলার। শীর্ষ ধনীদের তালিকায় বিশ্বে ১৫তম এবং চীনে এক নম্বরে রয়েছেন তিনি। কেবল কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্য্যের জেরে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছেন ঝং শেনশেন। বলা যায়, নিজের যোগ্যতাই তাকে এই সুউচ্চ অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। এ কারণে চীনে ‘লোন উলফ’ বা ‘একাকী নেকড়ে’ নামে পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি। তবে তার অগ্রযাত্রার গল্প কেবল চীনেই নয়, অনুপ্রাণিত করছে বিশ্বের লাখ লাখ তরুণ উদ্যোক্তাকে। সূত্র: ফোর্বস, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, দ্য স্ট্রেইট টাইমস




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com