ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে উপজেলা পরিষদের নতুন ভবন নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রকৌশলীর যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের সিডিউলকে তোয়াক্কা না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ কাজ করেছে। খোদ উপজেলা পরিষদ চত্বরে এমন অনিয়মের ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় প্রশাসনের যেন কোনো দায় নেই। আর এর মাধ্যমে নতুন ভবনের স্থায়িত্ব ও মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের নতুন প্রশাসনিক ভবন ও হলরুম নির্মাণের জন্য প্রায় ৭ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। কাজটি পান ফরিদপুরের রাফিয়া কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ শুরু করার পর ওই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কারাগারে যাওয়ায় এক পর্যায়ে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় টেন্ডার হয়। পরবর্তীতে টেন্ডারের সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সিরাজগঞ্জের খাজা বিল্কিস রাব্বি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২ কোটি ৯ লাখ টাকায় কাজটি পায়। সরেজমিন পরিদর্শনকালে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, নির্মাণ কাজ চলাকালীনই উপজেলা পরিষদের হলরুমের বিভিন্ন স্থানের দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়। পরে পলেস্তরা করার সময় ফাটল ঢেকে দেয়া হয়। একটি সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জের খাজা বিল্কিস রাব্বি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ভবনের বিভিন্ন ধরনের কাজে নিম্নমানের দ্রব্যসামগ্রী ব্যবহার করেছেন। সিড়ির রেলিংয়ে এসএসের পরিবর্তে লোহা ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের নতুন ভবন এবং নির্মাণাধীন হলরুমে বরাদ্দ (এস্টিমেট) মোতাবেক টাইলস এবং স্যানিটারি মালামাল ব্যবহৃত হয়নি। এস্টিমেটে এ গ্রেডের টাইলস ব্যবহার করার কথা উল্লেখ থাকলেও বিভিন্ন কক্ষের মেঝে ও ওয়াশরুমের দেয়ালে বি গ্রেডের টাইলস ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি ওয়াশ বন্টকের বেসিন, কমড, প্যান বি গ্রেডের দেয়া হয়েছে। দরজার চৌকাঠসহ পাল্লার ক্ষেত্রেও এস্টিমেট অনুসরণ করা হয়নি। সেগুন কাঠ দিয়ে চৌকাঠসহ দরজার পাল্লা দেয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরজার পাল্লায় মেহেগনি কাঠ এবং চৌকাঠে কড়ই কাঠ ব্যবহার করেছে। ব্যবহৃত কাঠও নিম্নমানের বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা পরিষদের সামনেই আমার অফিস। পরিষদের দুটি ভবন নির্মাণেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদার নিজের ইচ্ছামতো নির্মাণ কাজ করেছেন। উপজেলা প্রকৌশলীর তদারকি করার কথা থাকলেও তিনি নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। নির্মাণ কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সাথে কথা বলার জন্যে ০১৮২৩-৩৩৮-৬৫১ নম্বরে ফোন দিলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি কোন কথা না বলে ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে প্রায় দুই ঘন্টার অধিক সময় পর্যন্ত ফোন বন্ধ থাকায় আর কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত তথ্য জানতে সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী প্রকৌশলী লুৎফর রহমানের অফিসে গেলে তিনি কোন তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ইতোপূর্বে একটা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে দেখেছি, সিডিউল মোতাবেক কাজ হয়েছে। অনিয়মের সাথে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিল্ডিংয়ে আমরাই অফিস করবো। সেহেতু এখানে কাজে ফাঁকি দেয়ার কোন সুযোগ নেই। স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহিদুজ্জামান খান বলেন, বিষয়টি দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ইউএনও-র। তারপরেও যেহেতু আপনি জানিয়েছেন আমি বিষয়টি দেখব এবং তদারকি করার জন্য ইউএনওকে বলব। এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসাইন বলেন, এ ব্যাপারে এর আগে কোন অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হতো। তারপরও আপনার মাধ্যমে যেহেতু অভিযোগ পেয়েছি অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।