ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। পৌঁষ ও মাঘ এই দুই মাস শীতকাল। তবে পৌষ মাস শুরু হওয়ার আগেই প্রকৃতিতে শীত হাজির হতে শুরু করেছে। গ্রামে রাতে এখন গায়ে কাঁথা জড়াতে হয়। শেষ রাতের শীতে কাঁথার উষ্ণতা খোঁজে সবাই। সন্ধ্যার পর উল্লাপাড়া নগরীর ফুটপাতে ভাপাপিঠা, পাটিসাপটা সহ শীতের নানা পিঠাপুলি পাওয়া যায়। আর শীতের সবজি বাজারে অনেক আগে থেকেই উঠতে শুরু করেছে। গ্রাম, নগর-মহানগর সব জায়গায়ই চলছে শীতের আয়োজন। সকালের নরম রোদ, শিশির ভেজা ঘাঁস, আবছা কুয়াশায় ঘেরা সকাল-সন্ধ্যার রহস্য, আদ্রতা হারাচ্ছে বাতাস, খসখসে হচ্ছে ত্বক, শুরু হচ্ছে পাতা ঝড়ার দিন এগুলো জানান দিচ্ছে শীতে আসতে আর বেশি দেরি নেই। তবে শীতের ঋতু পৌষ ধরা দিতে ঢের দেরি থাকলেও দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা আর সকালের ঘাঁস, লতাপাতার ওপর জমে থাকা শিঁশির বিন্দু জানান দিচ্ছে ‘শীত এসে গেছে’। শীতের আগমনে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার লেপ-তোষক কারিগররা লেপ- তোষক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে লেপ-তোষক প্রস্তুতকারী কারিগরদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। শীতের সময় উষ্ণতার আবেশ পেতে তুলার তৈরি লেপের প্রচলন বেশ আগে থেকেই। বছরের ৮ মাস অলস সময় পার করলেও শীতের ৪মাস লেপ-তোষক কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলে লেপ তৈরির কাজ। বছরের অন্যান্য সময় শীতবস্ত্রের বেচাকেনা কম হলেও শীত মৌসুমে শীতবস্ত্র বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে যে যার মতো প্রস্তুতি নিচ্ছে। তেমনি লেপ-তোষকের দোকানেও ছিল ক্রেতাদের আনাগোনা সেই সাথে কারিগরদের লেপ বানানোর ব্যস্ততা। দোকানিরাও অর্ডার গ্রহণ এবং ক্রেতাদের বিভিন্ন রঙ-মানের কাপড় ও তুলা দেখাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ দৃশ্য শুধু উল্লাপাড়া বাজারেই নয় বরং উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের হাট-বাজার গুলোতেও। লেপ-তোষক ব্যবসায়ী মোঃ সাইফুল জানান, কিছুদিন পর ক্রেতাদের ভিড় আরও বাড়বে। ক্রেতাদের এ আনাগোনা চলবে পুরো শীত জুড়ে। শীত বাড়ার সাথে সাথে চাহিদা বাড়তে পারে। তিনি আরও জানান, একটি লেপ বা তোষক তৈরিতে একজন কারিগরের সময় লাগে ১ ঘণ্টা। একজন কারিগর দিনে ৮ থেকে ১০টি লেপ বা তোষক তৈরির কাজ করে থাকেন। সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত কয়েকজন সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এবার তুলার দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় লেপ-তোষকের দামও বেড়ে গেছে। মাঝারি মানের লেপ বানাতে খরচ পড়ছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। তোষক বানাতে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। তবে তুলার প্রকারভেদে লেপ-তোষকের দাম কমবেশি হয়। সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লেপ-তোষক বিক্রিতে এবার লাভ কম হচ্ছে। তবে সব কিছুর দাম বাড়লেও লেপ-তোষক কারিগরদের মজুরি বাড়েনি। তারা যে মজুরি পাচ্ছে তা দিয়ে তাদের সংসার চালানোটাই কঠিন হয়ে দ্বাড়িয়েছে বলে জানান কারিগররা। লেপ-তোষক কারিগর আনোয়ারের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সব কিছুর দাম বাড়লেও আমাদের মজুরি বাড়েনি। যা মজুরি পাই তা দিয়ে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। লেপ-তোষক ব্যবসায়ী নাজমুল জানায়, শীতের এই সময়টিতে তাদের আয় ভালো হয়। বছরের বাকি সময়টুকু অলসতায় কাটায়। তবে শীতের আগমনে দোকানের কারিগরেরা দিনরাত পরিশ্রম করে লেপ-তোষক তৈরি করছেন। এখন লেপ তোষক তৈরির অর্ডারও বেশি। প্রতিদিনই নতুন অর্ডার আসছে। তা ছাড়া তৈরি করা লেপ-তোশক কিনতেও প্রতিদিন বেশ ভিড় করছেন ক্রেতারা। তোষক কিনতে আসা ফয়সালের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বর্তমানে লেপ-তোষক বানাতে বেশি টাকা লাগছে। আগে দের থেকে দুই হাজারের মধ্যেই হয়ে যেতো কিন্তু এখন সেটা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম একটু বেশি।