শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তি দামে নাকাল মানুষ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২

কয়েক মাস ধরেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তি দাম ভোগাচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কিছুতেই যেন নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। গত এক সপ্তাহে এ ধারার খুব বেশি একটা পরিবর্তন হয়নি। এ সময়ে ডিম, পেঁয়াজ ও ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমলেও নতুন করে বেড়েছে চাল, ভোজ্যতেল ও ডালের দাম। ফলে পেঁয়াজ, ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমলেও তা নি¤œ আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিচ্ছে না। বরং চাল-তেলের মূল্যবৃদ্ধি তাদের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বংলাদেশ-টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে চাল, তেল, ডাল, আটা, ময়দা, মসুর ডাল, শুকনো মরিচ, জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ ও এলাচের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ব্রয়লার মুরগি, ডিম, আলু, আদা, হলুদ, রসুন, পেঁয়াজ ও ছোলার।
রাজধানীর শাহজাহানপুর, মালিবাগ, কারওয়ান বাজার, বাদামতলী, সূত্রাপুর, শ্যামবাজার, কচুক্ষেত, মৌলভীবাজার, মহাখালী, উত্তরা আজমপুর, রহমতগঞ্জ, রামপুরা এবং মীরপুর-১ নম্বর বাজারের পণ্যের দামের তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে টিসিবি।
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে কথা হয় খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা আমেনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম এখন কিছুটা কম। কিন্তু চাল, আটা, তেল, ডালের অনেক দাম। সবজির দামও বেশি। চাল, তেল, ডাল কিনতেই টাকা শেষ হয়ে যায়। মাংস খুব একটা খাওয়া হয় না। ব্রয়লার মুরগির বদলে চাল, ডাল, তেলের দাম কমলে আমরা একটু শান্তি পাই। চাল, ডাল, তেল কিনতে না পারলে মুরগি দিয়ে কী করবো! রামপুরার বাসিন্দা রিকশা চালক মো. ফয়েজ বলেন, ছেলে-মেয়ে নিয়ে টিনশেডের একটি বাসায় ভাড়া থাকি। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যে আয় হয়, তা দিয়ে কোনো রকমে চারজনের সংসার চলে। জিনিসপত্রের যে দাম তাতে মাছ-মাংস খুব একটা খাওয়া হয় না। কোনো রকমে ডাল-ভাত খেতে পারলেই আমরা খুশি।
তিনি বলেন, চাল-ডালের দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। ৫০ টাকার নিচে এক কেজি চাল পাওয়া যায় না। অনেক সময় আমি দুপুরে না খেয়ে অথবা কলা-রুটি খেয়ে কাটিয়ে দেই। এরপরও খরচ কমাতে পারছি না। যদি চাল, ডাল, তেলের দাম কমতো তাহলে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেতাম। কিন্তু এগুলোর দাম তো কমে না, বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এতে এক কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫৩ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এই চালের কেজি ছিল ৪৬ থেকে ৫২ টাকা।
গরিবের মোটা চালের পাশাপাশি দাম বেড়েছে সরু চাল নাজিরশাইল ও মিনিকেটের। একই সঙ্গে মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের দামও বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে এক দশমিক ৭৯ শতংশ। এতে এখন এক কেজি মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৬০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা। আর সরু চালের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ২৪ শতাংশ। এতে এক কেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭২ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এই চালের দাম ছিল ৬২ থেকে ৭২ টাকা। টিসিবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরু, মোটা ও মাঝারি মানের সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে ২৩ নভেম্বর। একই দিন বেড়েছে প্যাকেট আটা, ময়দা, বোতলের সয়াবিন তেল এবং খোলা পাম অয়েলের দাম। তার তিন দিন আগে অর্থাৎ ২০ নভেম্বর বাড়ে খোলা সয়াবিন, মসুর ডাল ও পাম অয়েলের দাম।
সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, খোলা পাম অয়েলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। সুপার পাম অয়েলের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। এতে এক সপ্তাহ আগে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা লিটার বিক্রি হওয়া সুপার পাম অয়েল এখন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৭২ থেকে ১৮৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে এই তেলের দাম বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ। বোতলের এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এখন বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা। আর বোতলের পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৭৫ থেকে ৯২৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৮৭০ থেকে ৯০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে বোতলের সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে এক দশমিক ৬৯ শতাংশ।
দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্যাকেট আটার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। প্যাকেটের এক কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। আর প্যাকেট ময়দার দাম বেড়েছে এক দশমিক ২৭ শতাংশ। এতে এক কেজির প্যাকেট ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। তবে খোলা আটার দাম এক দশমিক ৬৪ শতাংশ কমে কেজি ৫৮ থেকে ৬২ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে খোলা আটার কেজি ছিল ৬০ থেকে ৬২ টাকা।
টিসিবি জানিয়েছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বড় দানার মসুর ডালের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে এই মসুর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। মাঝারি দানার মসুর ডালের দাম ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। তবে ছোট দানার মসুর ডালের দাম এক দশমিক ৮২ শতাংশ কমেছে। এক সপ্তাহ আগে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া এই মসুর ডাল এখন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
দাম বাড়ার তালিকায় থাকা আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১১০ থেকে ১৩০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। তবে দেশি রসুনের দাম ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কমেছে। দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭০ থেকে ৯০ টাকা। জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৭০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। শতকরা হিসেবে দাম বেড়েছে এক দশমিক ৯০ শতাংশ। ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ দাম বেড়েছে দারুচিনির। এতে এক কেজি দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৫২০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৪২০ থেকে ৪৬০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ৩২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া লবঙ্গের দামও বেড়েছে। এখন প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা। আর ছোট এলাচ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল এক হাজার ৬০০ থেকে তিন হাজার টাকা।
অপরদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ কমেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৬০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬৫ থেকে ১৭৫ টাকা। ফার্মের ডিমের দাম ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ কমে হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৩ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৪৩ থেকে ৪৮ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে সব থেকে বেশি কমেছে দেশি আদার দাম। এক সপ্তাহে ২৩ দশমিক ৯১ শতাংশ কমে দেশি আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ২২০ থেকে ২৪০ টাকা। আমদানি করা আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ২০০ টাকা, যা আগে ছিল ১৪০ থেকে ২০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এ পণ্যটির দাম কমেছে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ২ দশমিক ১৭ শতাংশ দাম কমে দেশি হলুদের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা বিক্রি হয় ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়। দাম কমার তালিকায় থাকা দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যার দাম ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আলুর দাম ৬ শতাংশ কমে কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২২ থেকে ২৮ টাকা। ছোলার দাম ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ কমেছে। বর্তমানে প্রতিকেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, যা আগে ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com