শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ধনবাড়ীতে আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে শুরু প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্ত যুদ্ধ দিবস পালিত মাধবদীতে জ্যান্ত কই মাছ গলায় ঢুকে কৃষকের মৃত্যু বদলগাছীতে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী কালীগঞ্জে কৃষক মাঠ দিবস ও কারিগরি আলোচনা লতিফ মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শ্রীনগর গ্রামে ভ্যানচালককে পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন বরিশালে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী মেলার উদ্বোধন হাতিয়ায় দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার ক্যাম্পাসে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেলায়েত স্মৃতি কর্ণার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আমিরুল ইসলামের পক্ষে ছাত্রলীগের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ

শিশুদের নতুন কারিকুলামের বই নিয়েও অনিশ্চয়তা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২

গত বছরের জামানতের টাকা ফেরত না পাওয়া, জরিমানা ও কাগজ সংকটের কারণে এক সপ্তাহ ধরে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই মুদ্রণ বন্ধ রেখেছেন ছাপাখানা মালিকরা। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আর মাত্র ৩৫ দিন বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ২৫ শতাংশ বই ছাপানোর কাজ শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী বছরের শুরুর দিন (১ জানুয়ারি) খুব কমসংখ্যক বই শিশুদের হাতে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি নতুন কারিকুলামের বই জানুয়ারিতে পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রেস মালিকদের বই সরবরাহের নির্দিষ্ট দিনক্ষণ আছে। আমরা চাইবো সেই তারিখের মধ্যে বই যেন তারা সরবরাহ করেন। এটা সম্ভব করতে হলে একটি দিনও নষ্ট করা যাবে না। কিন্তু এরপরও কেউ কেউ (বই মুদ্রণ) বন্ধ রেখেছেন বলে আমরা শুনেছি। তাদের মৌখিক ও লিখিতভাবে সতর্কও করেছি। এরপরও যদি কেউ বই ছাপানোর কাজ বন্ধ রাখেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবো। চুক্তি অনুযায়ী প্রেস মালিকদের বই সরবরাহের দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করা আছে। আমরা চাইবো সেই তারিখের মধ্যে বই যেন তারা সরবরাহ করেন। তাদের মৌখিক ও লিখিতভাবে সতর্কও করেছি। এর পরও যদি কেউ বই ছাপানোর কাজ বন্ধ রাখেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবো। আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরে মোট ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ৮১২টি বই বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ৬৩ লাখ ২৯ হাজার ৮৪টি, প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫২৬টি ও তৃতীয়-পঞ্চম শ্রেণির জন্য ৬ কোটি ৬৪ লাখ ৩৪ হাজার ২৫টি বই বিতরণ করা হবে। এছাড়াও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের জন্য ২ লাখ ১৩ হাজার পাঠ্যবই ছাপানো হবে। আগে দরপত্র ও কার্যাদেশ দেওয়ায় এখন পর্যন্ত শুধু তৃতীয় থেকে প ম শ্রেণির প্রায় দেড় কোটি বই ছাপা সম্ভব হয়েছে। এর অধিকাংশ উপজেলা পর্যায়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন কারিকুলামে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রথম শ্রেণির বই দেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই কোনো প্রেসে ছাপা শুরু হয়নি। এমনকি আগে কার্যাদেশ দেওয়ার পরও এক সপ্তাহ ধরে তৃতীয় থেকে প ম শ্রেণির বই ছাপানোও বন্ধ।
অন্যদিকে, এবার মাধ্যমিক পর্যায়ে মোট ২৩ কোটি ৮২ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৮টি বই ছাপানো হবে। তার মধ্যে এ পর্যন্ত ছাপা হয়েছে ৮ কোটি ৯৭ লাখ ৭ হাজার ৩৯৪টি বই। বিভিন্ন উপজেলায় সরবরাহ করা হয়েছে ৬ কোটি ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ১৯৭টি। প্রয়োজনীয় বইয়ের তুলনায় এখন পর্যন্ত বিতরণ করা বইয়ের হার মাত্র ২৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের মুদ্রণ বন্ধ রাখার পেছনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে দায়ী করা হচ্ছে। গত বছরের জামানতের অর্থ এখন পর্যন্ত ফেরত দেয়নি সংস্থাটি। এনসিটিবির বইয়ের জন্য চুক্তিপত্রে ছয় মাসের গ্যারান্টি থাকে। কিন্তু ছয় মাস পার হওয়ার পরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে ডিপিই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মাধ্যমিক স্তরে ২৫ শতাংশ বই ছাপা হলেও অনেকেই নি¤œমানের কাগজে বই ছেপেছেন। যেসব প্রতিষ্ঠান নি¤œমানের কাগজে বই ছাপছে তাদের বেশিরভাগই ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল এলাকায় পাঠানো হয়েছে। যে ছাপাখানার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সেই প্রতিষ্ঠানের মালিক কয়েক বছর ধরে সর্বোচ্চ সংখ্যক বইয়ের কাজ পেয়ে আসছেন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে নি¤œমানের কাগজে বই ছাপানোর অভিযোগ ওঠে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এবারের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের কাগজ ও ছাপার মান তদারকির কাজ পেয়েছে ইনডিপেনডেন্ট ইন্সপেকশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটিও রহস্যজনক কারণে নি¤œমানের বইয়ের ছাড়পত্র দিচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক আগে কন্টিনেন্টাল নামে একটি ইন্সপেকশন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। চাকরি করেই তিনি উত্তরার মতো এলাকায় বাড়ি করেছেন বলে অভিযোগ আছে। শুধু তাই নয়, মতিঝিলে বিশাল জায়গা নিয়ে তিনি অফিস করেছেন। স্বল্প বেতনে চাকরি করা এমন একজনের এত সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন অনেকেরই। নি¤œমানের বইয়ের ছাড়পত্রের নেপথ্যে তিনি কোনো লেনদেন করেছেন কি না- এ বিষয়েও তদন্তের দাবি উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের মুদ্রণ বন্ধ রাখার পেছনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে (ডিপিই) দায়ী করা হচ্ছে। গত বছরের জামানতের (পারফরম্যান্স গ্যারান্টি-পিজি) অর্থ এখন পর্যন্ত ফেরত দেয়নি সংস্থাটি। এনসিটিবির বইয়ের জন্য চুক্তিপত্রে ছয় মাসের গ্যারান্টি থাকে। কিন্তু ছয় মাস পার হওয়ার পরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে ডিপিই। ওইসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে আনন্দ ও অ্যাপেক্স প্রিন্টার্স। এই প্রতিষ্ঠান দুটি এবারও কাজ নিয়ে তা ফেরত দিয়েছে। এখন পর্যন্ত শুধু তৃতীয় থেকে প ম শ্রেণির প্রায় দেড় কোটি বই ছাপা সম্ভব হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই কোনো প্রেসে এখনো ছাপা শুরু হয়নি। এমনকি এক সপ্তাহ ধরে তৃতীয় থেকে প ম শ্রেণির বই ছাপানো বন্ধ।
ডিপিই কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে অবশ্য বলছেন, গত বছর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিউজপ্রিন্টে বই ছেপেছে। ঢাকার উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে অভিযোগ এসেছে, সেখানে নিউজপ্রিন্টের ছাপানো বই দেওয়া হয়। এভাবে দেশের আরও কয়েকটি স্থানে নি¤œমানের ছাপা, বাঁধাই ও কাগজে বই দেওয়া হয়েছে। তবে বই বিতরণের অনেক পরে এ ধরনের অভিযোগ আসে। ফলে তথ্য বিলম্বে আসায় জরিমানা করতেও বিলম্ব হয়। এখন ওয়ারেন্টি সময়ের দোহাই দিয়ে শাস্তি থেকে পার পাওয়ার সুযোগ পাবেন- এমনটি তো হওয়ার নয়। নানান অভিযোগের কারণেই গত বছরের পিজি (জামানত) ফেরত দেওয়া হয়নি।
সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকের বইয়ের সংকট সামনে রেখে গত ১৬ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি সমঝোতা বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী, সচিব, ডিপিই’র মহাপরিচালক, এনসিটিবির চেয়ারম্যান ও ছাপাখানার কয়েকজন মালিক উপস্থিত ছিলেন। সেখানে জানামতের অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়। এছাড়া দেশে ভার্জিন পাল্পের কাগজ কম থাকায় রিসাইকেলড পাল্পের কাগজে বই ছাপানোর অনুমতির ব্যাপারেও আলোচনা হয়। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত ওই বৈঠকের আলোকে ডিপিই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ কারণেই ছাপাখানার মালিকরা বই মুদ্রণ শুরু করছেন না। এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিল দিতে দেরি করাসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে তাদের জরিমানা করা হয় বলে প্রেস মালিকরা অভিযোগ করেছেন। চুক্তিপত্র অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে তাদের পাওনা অর্থ পরিশোধ করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি। এরপরও যদি কেউ কাজ বন্ধ রাখেন, আমরা তা মেনে নেবো না। সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি, সময়মতো ব্যবস্থা নেবো।
নানা কারণে বিশ্ববাজারে কাগজ তৈরির কাঁচামালের দাম বেড়ে় গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রেস মালিকরা যেভাবে সংকট দেখাচ্ছেন আসলে এতটা সংকট তৈরি হয়নি। তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে শেষ সময়ে এসে নিজের মনের মতো কাগজ দেওয়ার এক ধরনের কৌশল নিয়ে থাকেন। আমরা সবকিছু মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা দেবে- তা কার্যকর করা হবে বলেও জানান তিনি। মুদ্রণশিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, দেশে ভার্জিন পাল্প একেবারেই যে নেই তা নয়। সংকট আছে, কিন্তু চাইলেই প্রাথমিকের বই ভালো কাগজে ছাপানো সম্ভব। তিনি বলেন, তবে এটা ঠিক যে, যেহেতু ডলার সংকটের বিষয়টি মাথায় রেখে ভার্জিন পাল্প আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়নি, তাই মাধ্যমিকের মতো প্রাথমিকের বইও রিসাইকেল পাল্পের কাগজে ছাপার সুযোগ দেওয়া হোক। তবে এ ধরনের কাগজের উজ্জ্বলতা ৮০ শতাংশের বেশি করা সম্ভব নয়। এরপরও পরিস্থিতি বিবেচনায় মাধ্যমিক স্তরের বইয়ে এ বিষয়ে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকও একই সুযোগ দিতে পারে। এক্ষেত্রে তারা (প্রাথমিক স্তর) কাগজের জিএসএম’র (পুরুত্ব) আপস না করলে সমস্যা নেই। কেননা, রিসাইকেল পাল্পে নির্ধারিত জিএসএম আনা সম্ভব।-জাগোনিউজ২৪.কম




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com