বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন

দৃশ্যমান হচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দর-রানওয়ের নির্মাণকাজ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২

সাগরগর্ভে দৃশ্যমান হচ্ছে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের রানওয়ের কাজ। আর এর নির্মাণকাজ শেষ হলে দেশের সর্ববৃহৎ রানওয়ে পরিণত হবে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আকাশ পথে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি পর্যটন শিল্প বিকাশে আমূল পরিবর্তন আসবে। কক্সবাজার বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ৬ মে সম্প্রসারিত রানওয়েতে বিমানের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময়ই এই বিমানবন্দরের রানওয়ে ৯ হাজার ফিট থেকে ১২ হাজারে উন্নীতকরণের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ২৯০ হেক্টর ভূমি বন্দোবস্ত এবং ৮.৩৭ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট হতে ৯ হাজার ফুটে এবং চওড়া ১০০ ফুট হতে ২০০ ফুট উন্নীত করা হয়। এছাড়া সুপরিসর বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান রানওয়ের পিসিএন ১৭ হতে ৯০-এ উন্নীতকরণসহ আইএলএস ডিভিওআর, ক্যাট-১ এজিএল লাইট স্থাপন, নিরাপত্তা সীমানা প্রাচীর ও ড্রেনেজ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে কাজের ব্যয় দাঁড়ায় ৬০৩ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার টাকা।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী সমুদ্রগর্ভে আরও ১৭০০ ফুট রানওয়ে বর্ধিতকরণের লক্ষ্যে ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরে রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প কাজ উদ্বোধন করেন। এ প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে পূর্ণলোডে সুপরিসর বিমান তথা বি-৭৭৭-৩০০ ইজার, বি-৭৪৭-৪০০ জাতীয় বিমানের উড্ডয়ন-অবতরণ নিশ্চিত হবে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সিওয়াইডাব্লিউইবি-সিসিইসিসি জেভি প্রকল্প কাজ বাস্তবায়নে নিয়োজিত রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় সমুদ্রগর্ভে ৪৩ হেক্টর ভূমি রিক্লেমেশন প্রক্রিয়ায় ভরাটের মাধ্যমে ১৭০০ ফুট রানওয়ে বর্ধিত করা হবে। ফলে রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত হবে। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প পরিচালক মো. ইউনুস ভুঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের সর্ববৃহৎ রানওয়ে হিসেবে কক্সবাজারকে বহির্বিশ্বে পরিচিত করে তুলবে। এ প্রকল্পের আওতায় সমুদ্রগর্ভে আরও প্রায় ২২০০ ফুট দৈর্ঘের প্রিসিশন অ্যাপ্রোচ লাইট স্থাপনসহ বিদ্যমান রানওয়েতে ক্যাট-২ এজিএল সিস্টেম স্থাপন করা হবে। ফলে সুষ্ঠু ও নিরাপদ বিমান উড্ডয়ন-অবতরণ নিশ্চিত হবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের প্রভাব থেকে রানওয়ে সুরক্ষা করতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের করা ডিজাইন অনুযায়ী সমূদ্রতীর রক্ষাকারী বাঁধ নির্মাণসহ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে অপারেশনাল এলাকার চারপাশে নিরাপত্তা টহল রাস্তাও নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে সর্বমোট ব্যয় হবে ১৫ হাজার ৬৮৮ কোটি ৮৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।’ তিনি জানান, প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৪২.৬৫ শতাংশ। ২০২৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তজা হোসেন বলেন, ‘আমরা বিমানের শিডিউল বৃদ্ধি করেছি। বর্তমানে কক্সবাজার বিমাবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ২৫-৩০টি যাত্রীবাহী বিমান ও ৬-৮টি কার্গো বিমান ওঠানামা করছে। রাতে বিমান ওঠানামার জন্যও বিমানবন্দর প্রায় প্রস্তুত। সমুদ্রগর্ভে আরও লাইটিং সিস্টেম স্থাপনের কাজ চলছে।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমরা খুবই উজ্জ্বীবিত। রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজটা ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে শেষ হতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ২০২৩ সালের জুন মাসে চালু হবে— এমন লক্ষ্য আছে। বিমানবন্দর এবং রেলপথের কাজ যেভাবে এগাচ্ছে, সেভাবে যদি আমরা এগোতে পারি, তাহলে কক্সবাজার সত্যিকার অর্থে একটি আন্তর্জাতিকমানের পর্যটন স্থান হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।’ মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে জিডিপিতেও কক্সবাজার জেলা অবদান রাখবে।’
বাংলাদেশ বিমান চলালচল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার লক্ষ্যে এ বিমানবন্দরে ২৭৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি আন্তর্জাতিক যাত্রী প্রাপ্তিক ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের কাজ ৮২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত আন্তর্জাতিক যাত্রী প্রান্তিক ভবন, একটি বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন, সুপরিসর বিমান পার্কিং অ্যাপ্রোজ ও ১৯০টি অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক যাত্রী এবং ৩৫টি ভিআইপি ভেহিক্যাল পার্কিং বিশিষ্ট কারপার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের শেষ হলে কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভবপর হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন,পর্যটন শিল্প বিকাশে কক্সবাজারকে ঢেলে সাজাতে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে। বিশেষ করে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন প্রকল্পসহ কক্সবাজারে বহু মেঘা প্রকল্প চালু রয়েছে। ইতোমধ্যে এসব কাজের গতি আর বৃদ্ধি পেয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কাজগুলো নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে শেষ করা গেলে সত্যিকার অর্থে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক পর্যটন এলাকা হিসেবে আরও পরিচিতি লাভ করবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তিতে কক্সবাজারের যে অবদান, এটা জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com