চড়ুইভাতি বা বনভোজনের ইতিহাস আমাদের বেশ পুরনো। একটা সময় গ্রাম্য আবহে চোখে পড়ত দল বেঁধে রান্না-বান্না আর খাওয়া-দাওয়া দৃশ্য। এর আগে সংগ্রহ করা হতো চাল – ডাল, মসলাপাতি। চড়ুইভাতিতে গরু নাকি মুরগি রান্না হবে? এ দ্বন্দ্ব লেগে যেতেন মা-চাচিরা। গ্রামীণ পরিবেশের সেই ছোট বেলার চড়ুইভাতি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় চড়ুইভাতি হারিয়ে যাচ্ছে পিকনিক আর শিক্ষা সফরের ভীড়ে। তাই আমাদের ছোট বেলার সেই চড়ুইভাতির আসল নামকরণ ও বিশেষত্বটা তুলে ধরতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মার্কেটিং বিভাগের ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা প্রথমবারের মতো মুক্ত মঞ্চে চড়ুইভাতির আয়োজন করে।
চড়ুইভাতি কে ঘিরে জাঁকজমক ভাবে সাজানো হয় মুক্ত মঞ্চ । নানারকম বাহারি রঙ আর ককশিটের উপর সুনিপুণ কারুকার্যে অতিচমৎকার ভাবে তুলে ধরা হয় বাংলার সংস্কৃতি। ককশিট ব্যবহার করে বানানো হয় হাড়ি-পাতিল, উনুন, কুলা, ঢালা, চায়ের কেতলি, স্বাগতম গেইট, সেলফি জুন ইত্যাদি। এই সকল কারুকার্য মিলিয়ে যেনো মুক্ত মঞ্চ টা ছিল উনিশ শতক কিংবা তারও আগের কোনো একটা আধুনিকতা বিহীন শান্ত, নির্মল, সৌন্দর্য মন্ডিত ও সুশৃঙ্খল গ্রামের খণ্ডাংশ। গ্রামীণ পরিবেশে যেমন বাড়ির উঠোনেই চলতো চড়ুইভাতির রান্নাযজ্ঞ ঠিক একইভাবে মুক্ত মঞ্চের পাশেই করা হয় মার্কেটিং ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের রান্নার আয়োজন। কে কোন কাজটা করবে সেটা নিয়ে সর্বদা সবাই ব্যস্ত ছিল। কার আগে কে হাতের কাজ শেষ করে অন্য আরেকটা কাজ শুরু করবে তা নিয়েই ছিল রান্নার প্রতিযোগিতা। সকাল থেকেই শুরু হয় রান্নার আয়োজন। আগের দিন রাতেই রান্নার সকল কিছু বাজার থেকে নিয়ে আনা হয়। রান্নার জন্য লাড়কি সংগ্রহ করা হয় মুক্ত মে র পাশে ‘পাখি নিবাস’ বাগান থেকে। সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে না হতেই রান্নার ঘ্রাণে মৌ মৌ করছিলো পুরো মুক্ত মঞ্চ। কেউ ছিল মাংস কাটাকাটিতে পারদর্শী আবার কেউ ছিল মাংস রান্না করতে পারদর্শী। কেউ ছিল মাংসে মসলা দিতে পারদর্শী আবার কেউ পারদর্শী ছিল পর্যাপ্ত পরিমাণ মসলা হয়েছে কিনা সেটা পরিক্ষা করতে। এখানে সবাই যেনো এক একটা রন্ধন শিল্পী। মধ্যাহ্ন ভোজের প্রধান আকর্ষণ ছিল আমন্ত্রিত শিক্ষক মন্ডলী ও সিনিয়র ভাই – আপুরা। কেক কাটার মাধ্যমে চড়ুইভাতির উদ্বোধন করে শিক্ষক মন্ডলী। তারপর প্রত্যেক শিক্ষক কে মার্কেটিং ১৫ তম ব্যাচের পক্ষ থেকে আলাদা করে উপহার দেওয়া হয়। ডেকোরেশন থেকে শুরু করে খাবারের স্বাদ গ্রহন পর্যন্ত সবকিছু নিয়েই প্রশংসায় পঞ্চ মুখ ছিলেন অতিথিগণ।
‘হেমন্ত কালের শুরুটা খুব দুর্দান্ত ভাবে হলো। আজ ৩ কার্তিক, আমাদের অর্থাৎ মার্কেটিং ১৫ তম আবর্তনের চড়ুইভাতি। শিক্ষক, বড় ভাই এবং বন্ধুদের সাথে দারুন একটা সময় কাটছে। আমাদের সম্পর্ক গুলো আরও মায়াময় হয়ে উঠুক এই প্রত্যাশা গাপন করি।’ নিজেদের চড়ুইভাতি নিয়ে এভাবেই আনন্দ প্রকাশ করে মার্কেটিং ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সৈয়দা রাইসা তাসনীম। বাজার করা থেকে শুরু করে রান্না পরিবেশন সহ সকল আনুষাঙ্গিক কাজ ভাগাভাগি করে নিজেরাই করে। এমনকি বাবুর্চি ছাড়াই ৮০ জন সদস্যের জন্য অতি সুস্বাদু রান্না প্রস্তুত করা সম্ভব হয় সঠিক দিক নির্দেশনা ও সুশৃঙ্খল কাজের মাধ্যমে। আর এই জন্যেই শিক্ষক ও সিনিয়র ভাই-আপুদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছে । মার্কেটিং ১৫ তম ব্যাচের সুর বাঁধা সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশটাই ছিলো চড়ুইভাতি উৎসবের সারাংশ।