ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। তারা চলে যাবে। গতকাল মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে নয়া পল্টনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তছনছ করে বর্বরতা চালানো হয়েছে। লণ্ডভণ্ড করেছে। সেখান থেকে সিনিয়র নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। কম্পিউটার ভেঙে ফেলছে। যার লক্ষ্য ছিল ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগের গণসমাবেশ প- করা। একইভাবে তারা বিভিন্ন বিভাগের গণসমাবেশ প- করতে পরিবহন ধর্মঘট ও হামলা চালিয়ে গ্রেফতার করেছিল। তবুও আমাদের গণসমাবেশ ঠেকাতে পারেনি। বরং জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল।
তিনি বলেন, সরকার ভেবেছিল আমাদের মহাসচিব সহ-সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার করে সমাবেশ প- করবে। কিন্তু সেটা করতে পারেনি। সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ভোটাধিকার হরণ করেছে। গণতন্ত্র হত্যা করে দিনের ভোট রাতেই ডাকাতি করে অবৈধভাবে সংসদ গঠন করেছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, আওয়ামী লীগ অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। দেশকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছে। বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছে। ব্যাংকগুলো লুট করা হচ্ছে। মানুষ আরো গরিব হচ্ছে। তারা ঠিকমতো খেতে পারে না। তিনি বলেন, বানোয়াট মামলায় ফরমায়েশ রায় দিয়ে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী রেখেছে। দেশনায়ক তারেক রহমানকে বিদেশে থাকতে বাধ্য করেছে। তেমনিভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজেদের ক্ষমতার জন্য ব্যবহার করছে। আওয়ামী লীগ এতো নির্যাতন করেও বিএনপি দুর্বল হয়নি। যার প্রমাণ বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণ। জনগণ পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে এই সরকারকে তারা চায় না। সেই লক্ষ্যে আমরা যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করেছি। তিনি বলেন, গোটা বিশ্বের নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই এই সরকারকে পতন ঘটানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন ফয়সালা হবে রাজপথে।
প্রশাসন ও পুলিশের সদস্যদের বলবো, আপনার কোনে দলের কর্মী নন। আপনারা শপথ নিয়েছেন। আপনারা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবেন। আপনাদের সাথে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। মনে রাখবেন সরকারের অনৈতিক কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে র্যাব নিষেধাজ্ঞা পেয়েছে। সুতরাং বেগুনী হুকুম তামিল করবেন না। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের নির্যাতনে বিএনপি দুর্বল হয়নি। এ সরকারকে সরানো ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ফয়সালা হবে রাজপথে।
তিনি আরো বলেন, আপনারা কোনো দলের কর্মচারী নন। আপনারা জনগণের সেবক। আপনাদের সাথে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। এই সরকারের অগণতান্ত্রিক। সরকার কারণে র্যাবের ওপর নিষধাজ্ঞা এসেছে। এটা কারো কাম্য নয়। সরকার তাদের চরির্থ হাসিল করতে র্যাব বাহিনীকে ব্যবহার করেছে।
ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করেছে নেতাদের গ্রেফতার করে সমাবেশ বন্ধ করবে। সরকারকে বুঝতে হবে, বিএনপি ভেসে আসেনি। সমাবেশ হয়েছে। আওয়ামী সরকারে থেকে নির্বাচন করবে, সেই নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। হতে দেবে না। জীবন দিতে রাজি আছি। তবুও হাসিনার অধীনে নির্বাচন হতে দিব না। সরকার কোনো দায়বদ্ধতা নেই, কারণ তারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড মঈন খান বলেন, ৭ ডিসেম্বর সমাবেশ প- করতে সরকার পাগল হয়ে গিয়েছিল। এরফলে তারা মির্জা ফখরুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার করে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। সমাবেশ হয়েছে। সফল হয়েছে। আওয়ামী লীগ লগি বৈঠার রাজনীতি করে। তারা বৈঠা দিয়ে মানুষ মেরেছে।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিদেশিদের কাছে কে ধর্ণা দেন জানেন? আওয়ামী লীগ। তবে লাভ হবে না। আন্দোলন আরো কঠোর হবে। এ সরকারের পতন ঘটিয়ে ছাড়ব। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে সমাবেশ ডাকে বিএনপি। সমাবেশের শুরু আগে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন পার্টি অফিসের সামনে। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন। বেগম খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ সকল গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন তারা।
প্রতিবাদ সমাবেশকে ঘিরে কার্যালয়ের সামনের রাস্তা নাইটিংগেল-ফকিরাপুলের মোড় বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ বাহিনীকে কঠোর অবস্থায় দেখা গেছে। সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল মাহমুদ টুকু ও ভাইস চেয়ারম্যান ডা: জাহিদ হাসান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা বিএনপির সভাপতি মির্জা আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।
এর আগে ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির গণসমাবেশে ১৩ ডিসেম্বর ঢাকাসহ বিভাগীয় ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সিনিয়র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।