নেত্রকোনা জেলার মধ্যে পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় উপজেলার নাম দুর্গাপুর। সীমান্তবর্তী এলাকা জুরে সবুজ পাহাড় আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ঘেরা পুরো চারিদিক। শীত মৌসুমে এখানে পর্যটকদের আনাগোনাও প্রচুর। পূর্বে কলমাকান্দা ও পশ্চিমে ধোবাউড়াসহ তিন উপজেলার লাখো মানুষ ও পর্যটকদের দাবী সোমেশ্বরী নদীতে সেতু নির্মান। এই নদীর উপর বিরিশিরি-শিবগঞ্জ এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ হলে পাল্টে যেতে পারে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং বাড়তে পারে পর্যটকদের সমাগম। এ নিয়ে সোমবার সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, সড়ক যোগাযোগ কিছুটা ভালো হলেও সোমশ্বরী নদীতে সেতু না থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতায় পর্যটক হারিয়ে ফেলে প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি নেত্রকোণার সুসং দুর্গাপুর। দীর্ঘ সময়ের পর শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়ক সংস্কার হওয়ায় ভ্রমন পিপাসুদের অত্র এলাকায় আনাগোনা বেড়ে গেলেও নদীতে সেতু সমস্যা থাকায় অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কোলঘেঁষা গারো পাহাড়ে আচ্ছাদিত সুসঙ্গ দুর্গাপুর উপজেলায় রয়েছে ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন। এ উপজেলার উত্তরে ভারত, দক্ষিণে পূর্বধলা ও নেত্রকোনা সদর এবং পূর্বে কলমাকান্দা উপজেলা। পশ্চিমে রয়েছে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা। সোমেশ্বরী, আত্রাখালি নদী আর কংশ নদ উপজেলাটিকে জড়িয়ে রেখেছে। সুসং রাজ্যের পৃথক পৃথক জমিদার বাড়ি, পাহাড়ের চূড়ায় সাধু যোসেফের ধর্ম পল্লী, টঙ্ক ও কৃষক আন্দোলনের পথিকৃৎ নেত্রী হাজংমাতা শহীদ রাশিমণি স্মৃতিসৌধ, দুর্গাপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি, মানব কল্যানকামী অনাথালয়, সোমেশ্বরী নদী, গারো পাহাড়, ঐতিহ্যবাহী সাদামাটির পাহাড় ও নীল পানির কূপ দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানকার মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবনধারা সহজেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে তোলে। এখানে সনাতন ও ইসলাম ধর্মের মানুষের সঙ্গে গারো, হাজং, হদি, কোচ, বানাই ও ডালু নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষ নিবিড় সম্পর্কে বসবাস করেন। শীত মৌসুমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দূর্গাপুরের বিজয়পুর ও রানীখংয়ের অসাধারণ চোখ ধাঁধাঁনো সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভ্রমন পিপাসুদের। বিরিশিরি কালচারাল একাডেমি এলাকা থেকে বিজয়পুর যেতে কিংবা দুর্গাপুর তেরীবাজার ঘাট থেকে শিবগঞ্জ থেকে কোনো সেতু না থাকায় সম্প্রতি নদীর ঘাটের ইজারাদারের উদ্যোগে দুইদিক দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে অস্থায়ী কাঠের সেতু। ৪শ’ ১৮ ফুট দৈর্ঘ্যে ও ৮ ফুট প্রস্থ অস্থায়ী কাঠের সেতু। এ সেতুর কাজ শেষ হতে সময় লেগেছে প্রায় ১৫ দিন। নদীর এপার থেকে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল বা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, ওপাড়ে যেতে ব্রীজের ভাড়া ও পাড়াপারে ভোগান্তি থাকায় সৌন্দর্য্যরে প্রতিক সুসঙ্গ দুর্গাপুর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকগণ। ওপাড়ের প্রাকৃতিক সম্পদের সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে সেতু নির্মানের কোন বিকল্প নেই, এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা। সোমেশ্বরী নদীতে সেতু নির্মিত হলে পর্যটক সহ ওই এলাকার লোজজনের আর কোন ভোগান্তী থাকবে না। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যে সকল পর্যটক বিজয়পুরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন, তাদের পরিবহন নিয়ে কোন ভোগান্তীতে পড়তে হবে না। শীত মৌসুমে পর্যটকের সংখ্যাও অনেক বেড়ে যাবে। ওই এলাকার খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্যের চাকা খুলে যাবে। উপজেলাবাসীর ভাগ্যোন্নয়ন ও সাড়া বছর পর্যটকগণের আগমনের বিষয়টি মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট দপ্তর একটি সেতু নির্মাণে কার্যকরী ভূমিকা রাখবেন এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসী ও পর্যটকদের। কাঠেরসেতু নির্মানের ইজারাদার মো. রুকন উদ্দিন মাস্টার জানান, নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় আধা কিলোমিটার। বর্তমানে পানি আছে প্রায় চারশ’ ফুট এলাকায়। স্থানীয়দের সুবিধার্থে এলাকার অন্যান্য যুবকদের সহায়তায় প্রায় দশ লাখ টাকা ব্যয়ে অস্থায়ী কাঠের সেতুটি নির্মান করা হয়েছে। তবে এটা কোন স্থায়ী সমাধান নয়। সোমেশ্বরী নদীতে স্থায়ী ব্রীজ নির্মানের জোর দাবী জানাচ্ছি। স্থানীয় এমপি মানু মজুমদার বলেন, সোমেশ্বরী নদীতে একটি ব্রীজ নির্মানের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। কোনদিক দিয়ে কতটুকু দৈর্ঘ্যের ব্রীজ নির্মান করা হবে এসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে একটি টিম গঠনেরও কাজ চলছে। সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে যত শীঘ্র সম্ভব জনমানুষের কাঙ্খিত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।