শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৯:২৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
চিতলমারীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রাণ নাশের হুমকি : থানায় জিডি গজারিয়ায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চমক দেখালেন মীনা খাগড়াছড়িতে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান আজিজ উদ্দিন বগুড়া ও জয়পুরহাটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জামালপুর সদর উপজেলা পরিষদে বিজন কুমার চন্দরকে বিজয়ী ঘোষণা ডিমলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন মেলান্দহে দুগ্ধ সমবায় প্রকল্পের সদস্যদের মাঝে ঋণের চেক বিতরণ গলাচিপায় জেলেদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরণ তারাকান্দায় অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে বিএনপির ত্রাণ নুরে আলম সিদ্দিকী শাহীন নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত

অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধ করে উপকূলীয় বাঁধ রক্ষা করুন

খবরপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলজুড়ে প্রায় ৩ কোটি লোকের বসবাস। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে প্রায় প্রতিবছরই বসতভিটা, ফসল ও গবাদি পশু হারিয়ে তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ক্ষতি প্রতিরোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে প্রতি বছর সরকারের শত শত কোটি টাকা ব্যয় হয়। বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও বাঁধগুলো টেকসই করে গড়ে তোলা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি এর অন্যতম কারণ। এর ফলে উপকূলীয় মানুষ সবসময়ই একধরনের আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করছে। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা তাদের আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের সময় বেড়িবাঁধ উপচে কোনো কোনো এলাকায় লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ে। ঐসব অঞ্চলের মানুষ এমন এক বৈরি পরিবেশেই বসবাস করছে। ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে কয়রাসহ সংশ্লিষ্ট এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যেই বিদ্যমান বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে চিংড়ি চাষের জন্য প্রভাশালীরা লবণাক্ত পানি ঢুকাচ্ছে। এতে শুধু কোটি কোটি টাকায় নির্মিত বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকাও ক্ষতির মুখে পড়ছে। চিংড়ি চাষের সাথে জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা জড়িয়ে থাকায় এর প্রতিবাদ করার সাহস কেউ করতে পারছে না। কয়রা উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তাও স্বীকার করেছেন, সেখানে ৬ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে নোনা পানির চিংড়ি চাষ হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সনাতন পদ্ধতিতে লবণাক্ত পানি তুলে চাষ করা হয়। বলা বাহুল্য, এখন বিশ্বের অনেক দেশে আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। দেশে এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে না। এতে বাঁধ ছিদ্র বা কেটে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করাতে গিয়ে বাঁধের অপূরণীয় ক্ষতি করা হচ্ছে। বাঁধকে ভঙ্গুর করে ফেলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে এসব বাঁধ মুহূর্তে ভেসে যাবে এবং মানুষের জানমালের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হবে। পরিবেশবিদরা বলছেন, চিংড়ি চাষে যে লাভ হয় বা হবে, জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙ্গে গেলে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হবে ঐ অঞ্চলের মানুষের। সাময়িক লাভের জন্য যে ক্ষতি হবে তা বছরের পর বছর ধরেও পোষানো যাবে না। তারা মনে করছেন, বাঁধ যদি ছিদ্র বা কেটে ফেলা হয়, তাহলে তা নির্মাণ করে জনগণের অর্থের অপচয় করা হচ্ছে কেন? বাঁধ রক্ষা ও দেখভালের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা তাহলে কি করছেন? স্থানীয় প্রশানই বা কি করছে?
ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষায় বেড়িবাঁধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এসব বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে বরাবরই নানা অভিযোগ থাকে। যথাযথভাবে বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ না করা, অর্থের অপচয়, দুর্নীতির মতো অভিযোগের অন্ত নেই। বেড়িবাঁধ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মানুষের ক্ষতি থেকেও রক্ষা পাচ্ছে না। গতকাল একটি দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলায় বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে ও পাইপ ঢুকিয়ে লবণ পানি উঠিয়ে চলছে মাছের ঘের ব্যবসা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূলের বেড়িবাঁধ। কয়রা উপজেলার লোকা, মঠবাড়ি, দশালিয়া, শিকারিবাড়ি, নয়ানি, গাজীপাড়া, গোবরাসহ আরও অনেক জায়গায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে চার শতাধিক স্থানে বাঁধের নিচে পাইপ ঢুকিয়ে বা ছিদ্র করে বা কেটে লবণাক্ত পানি ঢোকানো হচ্ছে। এতে এসব এলাকার প্রায় ২১ কিলোমিটার বাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকির মুখে রয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে, এসব স্থান দিয়ে সারা বছর নদী থেকে নোনা পানি তুলে চিংড়ি চাষ করছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এলাকার জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা চিংড়ি চাষের সঙ্গে জড়িত থাকায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। আমরা আশা করব, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন অবিলম্বে বাঁধ সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। বলা বাহুল্য, চিংড়ি চাষের নামে বাঁধ ও বিপুল মানুষের ক্ষতি মেনে নেয়া যায় না। মাছ চাষ করতে হলে সংশ্লিষ্টদের আধুনিক পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করতে হবে। বাঁধ সুরক্ষিত করে চাষীদের বিকল্প পদ্ধতিতে উৎসাহী করে তুলতে হবে। ইতোমধ্যে যেসব এলাকায় বাঁধ ছিদ্র বা কাটা হয়েছে, তা বন্ধ করে দিতে হবে। বাঁধের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কিছু মানুষের স্বার্থের জন্য বিপুল মানুষের জানমালের ক্ষতি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বাঁধের যারা ক্ষতি করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধ করে উপকূলীয় বাঁধ রক্ষা করুন। মানুষের জীবন ও সম্পদ বাঁচাতে কঠোর হোন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com