রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলছে মেট্রোরেল সার্ভিস। দীর্ঘ অপেক্ষার পর নিজ দেশের আধুনিক এই সুবিধার সুফল ভোগ করার জন্য মানুষ দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে। কেউ সপরিবার, আবার কেউ একা এসে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন টিকিট সংগ্রহ করতে। তারপর কাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেলে চড়ে ইচ্ছা পূরণ করছেন সবাই। গত বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) আগারগাঁও ও উত্তরা মেট্রোরেলস্টেশনে সরেজমিনে দেখা গেছে, মেট্রোরেলের প্রবেশমুখে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গেট খুলে দিচ্ছেন। এরপর যাত্রীরা হুড়মুড় করে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছেন। সেখানে কাউন্টারের সামনে গিয়ে আবার লাইন ধরে অপেক্ষা করেন টিকিট সংগ্রহের জন্য।
কিন্তু উত্তরা কিংবা আগারগাঁও— মেট্রোরেলের কোনও স্টেশনেই দেখা মেলেনি নিরাপত্তার কোনও বিষয়। শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা স্টেশনের প্রবেশমুখে দায়িত্ব পালন করছেন। কোনও ধরনের তল্লাশি ছাড়াই স্টেশনে ঢুকতে পারছে সাধারণ মানুষ।
প্রবেশমুখগুলোয় নিরাপত্তা তল্লাশির জন্য নেই কোনও মেটাল ডিটেক্টরও। এ ছাড়া কেউ কোনও ধরনের ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করলেও তল্লাশি কিংবা স্ক্যান করার নেই কোনও ব্যবস্থা। অনেকেই ব্যাগ নিয়ে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। টিকিট পেয়ে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করছেন।
এসব বিষয়কে এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি হিসেবে দেখছেন সাধারণ যাত্রীরা।
বাড্ডা থেকে মাকে নিয়ে মেট্রোরেল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে আসা নোমান বলেন, ‘ঢোকার সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। প্রবেশমুখের কেঁচি গেট খুলে দিল, আমরা ঢুকে পড়লাম। এখানে ছিল না কোনও আরটুয়ারি কিংবা মেটাল ডিটেক্টর।’
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা আমান উল্লাহ বলেন, ‘নিরাপত্তা তল্লাশির জন্য বিশেষ কোনও ব্যবস্থা নেই। এত টাকা খরচ করে সরকার উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে, এসব বিষয় কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় আনা উচিত ছিল।’ মেট্রোরেলে চড়তে আসা সাথী নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘মেট্রোরেলের নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢিলেঢালা। প্রতিরোধমূলক কোনও নিরাপত্তাব্যবস্থা চোখে পড়েনি। মেট্রোস্টেশনে ঢোকার সময় কেউ কোনও চেকও করেনি। শুধু পুলিশ ও আনসারের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন দাঁড়িয়ে।’
এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, ‘নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় টেম্পোরারি হিসেবে। এ ধরনের স্থাপনায় ঝুঁকি যে মাত্রার, তা অনুধাবন করে নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। এখানে আলাদা কোনও ঝুঁকি এখন পর্যন্ত করা হয়নি বলে এখন সাধারণ অবস্থায় রয়েছে। তবে নিরাপত্তাব্যবস্থা যত জোরদার করা হয়, মানুষের বিড়ম্বনাও তত বাড়তে থাকে।’
মেট্রোরেল সূত্রে জানা গেছে, আগারগাঁও মেট্রোস্টেশনে ডিউটি করেন আনসারের ১৮ সদস্য, থানা পুলিশ ও রিজার্ভ পুলিশ মিলে ডিউটি করে ২০ জনের মতো। এ ছাড়া প্ল্যাটফর্ম ও রেলস্টেশনে সহায়ক হিসেবে কাজ করেন রোভার স্কাউটের সদস্যরা। ঠিক একইভাবে উত্তরা মেট্রোস্টেশনে ডিউটি করেন আনসারের ১৮ সদস্য, থানা পুলিশ ও রিজার্ভ পুলিশ মিলে ২০ জনের মতো। এই স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম এবং রেলস্টেশনে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে রোভার স্কাউটের সদস্যরা।
মেট্রোরেলের এআরও জাকারিয়া বলেন, ‘সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশকে বলা হয়েছে। স্টেশনের গেটে আনসার ও পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন এবং ভেতরে মেট্রোরেলের কর্মী ও রোভার স্কাউটরা সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। এ ছাড়া প্ল্যাটফর্মের সহায়তার জন্য আরও কয়েকটি পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গেটে এখন পর্যন্ত কোনও আরটুয়ারি বা মেটাল ডিটেক্টর বসানো হয়নি। তবে নিরাপত্তার বিষয় চিন্তা করে ভবিষ্যতে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মেট্রোরেলের নিরাপত্তার জন্য শুরু থেকেই পুলিশ আন্তরিক ছিল। হাজার-হাজার কোটি টাকা প্রকল্পের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ শুরু থেকেই আলাদা একটি ইউনিট করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এমআরটি পুলিশ নামে নতুন একটি ইউনিট চালুর প্রস্তাবনা পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এখনও এর অনুমোদন দেওয়া হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব কমিটিতে নতুন এই ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া রিভিউ কমিটিতে রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে অচিরেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, নতুন এই ইউনিট চালু হলে মেট্রো স্টেশনগুলোর নিরাপত্তা দেখভালের দায়িত্বে তারা থাকবেন। তখন মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিষয়ে কাজ করা সম্ভব হবে। মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বলেন, ‘সবেমাত্র চালু হলো। নিরাপত্তা প্রতিরোধমূলক সবকিছুই আমাদের আছে। মেটাল ডিটেক্টর, ফেস ডিটেক্টরসহ সবকিছুই বসানো হবে। তবে এখন যেহেতু জনগণের চাপ একটু বেশি রয়েছে, এসব বিষয় অনুধাবন করে পর্যালোচনা করছি।’- বাংলা ট্রিবিউন