মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন

নতুন বছর ২০২৩ এর প্রত্যাশা: শান্তি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২

শুভ নববষ ২০২৩। গতকাল শনিবার সূর্যাস্ত যেতেই শুরু হয় নতুন বছরের প্রহর গণনা। শনিবার রাতে ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছুঁতেই বদলে গেলো ঘরের কোণায় ঝুলে থাকা ক্যালেন্ডার।
২০২২ সালের চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে অসীমের পানে মহাকালের যে যাত্রা, সেখানে সূচিত হলো আরেকটি মাইলফলক ২০২২৩। এই যে মহাকালের যাত্রা, সেখানে একেকটি বছর আসে নতুন উদ্দীপনা ও প্রেরণা নিয়ে। ফলে নববর্ষ আসে পুরনো বছরের স্তূপে ভর করে। প্রবাদ আছে পুরনো সকল কর্মকা-ের ফলাফলই বহন করে নতুন বছর। যে কারণে পুরাতন ও নতুন বছরের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আত্মসমালোচনা, আত্মমূল্যায়ন ও আত্মসমীক্ষার সুযোগ ঘটে। নিছক উৎসব ও হুল্লোড়ে মেতে তা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ইদানিং বাংলাদেশে নববর্ষ বরণের নামে উগ্র উৎসব সীমাহীন বেলেল্লাপনার যোগ হয়েছে। এ কারণে আত্মসমালোচনা, আত্মমূল্যায়ন ও আত্মসমীক্ষার বারোটা বেজে যায় এবং নববর্ষ পালনের উৎসবটি নোংরামি, অশ্লীলতা ও আতঙ্কের বিষয়ে পরিণত হয়। বিশেষত, ইংরেজি নববর্ষ পালনের নামে থার্টিফাস্ট নাইটের সময় যে উদ্দামতা দেখা যায়, তা আইন, সংস্কৃতি, মূল্যবোধকে বিপন্ন করে ছাড়ে।
রাজধানী ঢাকা এবং বড় শহরগুলোর অভিজাত এলাকার একশ্রেণির উৎশৃঙ্খল তরুণ-তরুণী থার্টিফার্স্ট নাইটের নামে উদ্দামতা, উন্মত্ততা ও উচ্ছলতার বল্গাহীন স্রোতে নিজেকে সঁপে দেয়। ঢাকার গুলশান, বনানী, উত্তরা, বারিধারায় সেসময় স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নিরীহ নাগরিকগণ আতঙ্কিত হন তখন। পরদিন সেসব এলাকার রাস্তা থেকে মদ, বিয়ারের খালি বোতল পরিষ্কার করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যান পরিচ্ছন্ন কর্মীগণ। কখনো কখনো নেশাপ্রবণ তারুণ্য সংঘর্ষ ও রক্তপাতের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা-দুর্ঘটনারও জন্ম দেয়।
এই ধরনের লাগামহীন উৎসব ধর্ম, দর্শন, নীতি, নৈতিকতা, আইন ও মূল্যবোধের আলোকে অনাচারের শামিল গর্হিত কাজ। ফলে নববর্ষ বা বর্ষবরণের নামে কোনো ধরনের সীমালঙ্ঘন ও অশ্লীলতাকে ধর্ম-দর্শন নির্বিশেষে শুভবোধসম্পন্ন সভ্য মানুষ সমর্থন করতে পারেন না।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে কোনো উন্মুক্ত স্থানে নাচ, গান, কনসার্টসহ কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না- বলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও অনেকে তা মান্য করেন না। যদিও করোনার মহাপ্লাবন ধেয়ে আসার সময় মাস্ক, স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব প্রতিপালন করা আইনগত ও স্বাস্থ্যগত দিক থেকে অবশ্যপালনীয় বিষয়। বিশেষ করে করোনার নতুন ও আগ্রাসী ভ্যারিয়্যান্ট ওমিক্রনের ধাবমান উদ্বেগের মধ্যে শুধু বাংলাদেশই নয়, সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশেষজ্ঞগণ সতর্কবার্তা দিয়েছেন। ফলে ইংরেজি বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণে ভিড় এবং উৎসব থেকে বিরত থাকা অতীব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, ওমিক্রন কিন্তু কোভিডের আগের রূপগুলোর থেকে অনেক বেশি সংক্রামক। অল্প সময়ের মধ্যেই একাধিক মানুষকে সংক্রমিত করার ক্ষমতা রয়েছে ওমিক্রনের।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, কড়াকড়ি এবং বিধিনিষেধের মধ্যেই রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোতে ইংরেজি নতুন বছর বা থার্টিফার্স্ট নাইট উদ্যাপন করতে নেয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি। জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে হোটেলের হল, বলরুম। হোটেলগুলোতে সন্ধ্যা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত ডিজে ড্যান্স পার্টি, ককটেল পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া অভিজাত ক্লাবগুলোতে পার্টির জন্য ভাড়া করা হয় ডিজে গার্লদের। হোটেলগুলোতে ডিজে পার্টি ছাড়াও নানা জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া এসব আয়োজন চলে ভোররাত পর্যন্ত। হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের অনুষ্ঠান অর্গানাইজার মিডিয়াকে বলেছেন, ‘থার্টিফার্স্ট উপলক্ষে ক্যাফে বাজারের স্পেশাল ডিনার, স্পেশাল নাইট মিউজিক উইথ বার-বিকিউ ডিনারের ব্যবস্থা করা হয়। নানা আয়োজন করা হয় ওয়েস্টিন হোটেলে, রেডিসন ব্লু ঢাকায়, হোটেল লা মেরিডিয়ানে।
দেশে নানাবিধ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সবকিছুতেই। গণতন্ত্রহীনতা, রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, মানবাধিকরের লঙ্ঘন, দুর্নীতি-লুটপাট, সুশাসনের অভাব যেন আষ্টেপৃষ্টে রেখেছে পুরো জাতিকে। বিজয়ের পঞ্চাশ বছরেও জাতি মুক্তি পায়নি দুঃশাসন থেকে। ৫১তম বছরে এসে এসব থেকে পরিত্রাণ চায় দেশের মানুষ। এছাড়া নতুন বছর সমৃদ্ধির প্রতীক হয়ে আসুক এই প্রত্যাশা সবার।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com