দীর্ঘ এক মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। কারা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে সোমবার ঢাকা সিএমএম আদালতের জুডিসিয়াল মুন্সিখানায় তাদের হাইকোর্টের দেয়া জামিনের আদেশ আসে। এরপর তাদের আইনজীবী জামিননামা দাখিল করেন। পরে বিকালে কারাগার থেকে মুক্তি পান বিএনপি’র এই দুই নেতা।
তাদের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন জানান, গত ৩রা জানুয়ারি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে ৬ মাসের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কেন স্থায়ী জামিন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারিও করেন আদালত।
আইনজীবী জানান, পরদিন (৪ঠা জানুয়ারি) বিএনপির এই দুই নেতার জামিন ঠেকাতে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই আবেদনের শুনানির জন্য রোববার (৮ই জানুয়ারি) দিন ধার্য করেছিলেন চেম্বার আদালত। এদিন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেে শুনানিতে তাদের জামিন বহাল রাখা হয়। তিনি বলেন, এর আগে মোট চারবার মির্জা ফখরুল এবং মির্জা আব্বাসের জামিন আবেদন নাকচ করেন নি¤œ আদালতের বিচারকরা। পরে তাদের পক্ষে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৭ই ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন বিএনপি সমর্থক নিহত এবং পুলিশসহ অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। সংঘর্ষের পর রাতের বেলা পুলিশ বিএনপির কার্যালয়ে অভিযান চালায়। পরদিন পল্টন, মতিঝিল, রমনা ও শাহজাহানপুর থানায় পৃথক চারটি মামলা করে পুলিশ। এতে ২ হাজার ৯৭৫ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ৭২৫ জনের। যদিও সেখানে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের নাম ছিল না।
৮ই ডিসেম্বর গভীর রাতে নিজ নিজ বাসা থেকে ফখরুল ও আব্বাসকে তুলে এনে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে। পরদিন তাদের পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। সেই থেকে তারা দুজন কারাগারেই ছিলেন। আজ তারা জামিনে মুক্তি পেলেন।
নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত ফখরুল-আব্বাস: পুলিশের করা মামলায় এক মাসেরও বেশি সময় পর কারামুক্ত হয়েই দলের নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
গতকাল সোমবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তারা নয়াপল্টনে পৌঁছান। এসময় দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে তাদের স্বাগত জানায়।
এসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী, দলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদল সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না প্রমুখ উপস্থিত রয়েছেন। এদিকে কারামুক্ত হয়েই দলের নেতাকর্মীদেরও অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল।
কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার সময় উপস্থিত সাংবাদিক ও দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজ আমি বলি, আমাদের শত শত নেতাকর্মী এখনো কারাগারে আটক হয়ে আছেন। এবং দুঃখজনকভাবে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমি অবিলম্বে আমাদের এই নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করছি। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সফল হবে। গত ৮ ডিসেম্বর দিনগত রাতে নিজ বাসা থেকে ফখরুল ও আব্বাসকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরদিন ৯ ডিসেম্বর পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা ও উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পল্টন থানায় করা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়। এরপর কয়েক দফায় তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন নি¤œ আদালত।
পরে গত ৩ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের সমন্বয়ে গঠিত বে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে ছয় মাসের অন্তর্র্বতীকালীন জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। গত ৮ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ বহাল রাখেন। এরপরই বিএনপির এই দুই শীর্ষ নেতার কারামুক্তির বাধা কাটে। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের স্থান নির্ধারণ নিয়ে উৎকণ্ঠা-উত্তেজনার মধ্যে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে জমায়েত হওয়া দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে একজনের মৃত্যু ও শতাধিক লোক আহত হন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে হাতবোমা ছোড়া হয়েছে অভিযোগ করে কার্যালয়ের ভেতরে অভিযান চালায় পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাসহ কয়েকশ নেতাকর্মীকে।