বাংলাদেশ-মিয়ানমারের অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা গরু-মহিষে সয়লাব হয়ে পড়েছে কক্সবাজার। কয়েক দফায় বিজিবি কর্তৃক আটক পুর্বক নিলামে দেয়া কাগজ চোরা কারবারীদের হাতে আসায় একই কাগজ বার বার ব্যবহার করে কয়েক লাখ অবৈধ গরু হজম ও বিক্রী করছে চোরা কারবারী সিন্ডিকেট। ফলে কপাল পুড়েছে দেশীয় গরুর খামারীদের। অবৈধভাবে আসা এ গবাদিপশুর কারণে সরকার একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে, অপর দিকে মুনাফা নিয়ে বিপাকে পড়ে গেছেন গরুর স্থানীয় খামারিরা। সরেজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায়ই বেশী চোরাই গরুর তিনটি হাট বসিয়েছে চোরাকারবারীরা। তৎমধ্যে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রংমহলে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর ও পার্বত্য লামা উপজেলার ও কয়েকজন মেম্বার এবং ৩ নং ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন ও তারপুত্র সজিব, কুতুব উদ্দিন মেম্বার, মামুন মেম্বার ও আপ্রোসিং মার্মা সিন্ডিকেট বিশাল অবৈধ বাজার নিয়ন্ত্রন করছে। রংমহলের ওই হাটের সিন্ডিকেট প্রধান ৩নং ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন সম্প্রতি নাইক্ষংছড়ি বিজিবি থেকে মাত্র ৮৪ টি গরু নিলামে নিয়েছে।ওই একটি নিলামের কাগজকে পুঁজি করে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বিক্রী করছেন লক্ষাধিক গরু-মহিষ। এ ছাড়াও চিরিঙ্গা ভিত্তিক আদা ফরিদ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চিরিঙ্গা বাস টার্মিনাল বাজার, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামিলীগ, যুবলীগের নিয়ন্ত্রনে ফাসিয়াখালীতে সৃষ্ট অবৈধ বাজারে অবাধে বিক্রী হচ্ছে প্রতিদিন কয়েক হাজার গরু-মহিষ। এ ছাড়াও গরু-মহিষ রাখা হয়েছে চকরিয়ার খুটাখালী, কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া গরুর বাজার ও ঈদগাঁও উপজেলার পাহাড়ী এলাকার ২/৩ টি স্পটেসহ নানা স্থানে। জায়গায় জায়গায় রীতিমতো মিয়ানমারের পশুর হাট বসে গেছে। দৈনিক শত শত গরু ভর্তি ট্রাক দিনে দুপুরে মহাসড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম অভিমুখে পাচার হচ্ছে। এসব অবৈধ হাট উচ্ছেদে স্থানীয় প্রশাসন গতকাল পর্যন্ত কোনো অভিযান পরিচালনা করেননি। তবে এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন সভা করেছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, অবৈধ হাট এবং মিয়ানমার থেকে গরু-মহিষ আসা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সভায় কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাত উজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যদর্শীদের ধারনায় এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক পথে লক্ষাধিক গবাদিপশু বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পাচারের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও জড়িত।
রাজনীতি নিয়ে একে অপরের মধ্যে তীব্র বিরোধ থাকলেও পাচারের প্রশ্নে তারা ঐক্যবদ্ধ। পাচারচক্রে প্রশাসনের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করার কাজটিও করে। সম্প্রতি বিজিবি অভিযান চালিয়ে বান্দরবানের লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছডড়িও চকরিয়ার মানিকপুর থেকে ৫ শতাধিক গরু-মহিষ জব্দ করেছে। এ ছাড়া মানিকপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ির নিয়ন্ত্রণাধীন তৃ-ডেভা বিজিবি ক্যাম্প ২৫টি গরু ভর্তি ৫ টি ট্রাক জব্দ ও ৫ জন ড্রাইভারকে আটক করে চকরিয়া থানায় হেফাজতে দিয়েছে। সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক বলেন, অবৈধভাবে আসা গবাদিপশুর কারণে স্থানীয় খামারিরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। স্থানীয় খামারিরা বলেন, বর্তমান বাজারে পশু খাদ্যের দাম চড?া। তারপরও বেশি দামে খাদ্য কিনে গবাদিপশু লালন-পালন করেছি। কিন্তু মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে গবাদিপশু আসায় বাজারে দাম পাচ্ছি না। লোকসান গুনতে হচ্ছে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, গরু-মহিষ আসা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ বিষয়ে সভাও হয়েছে। যেসব জায়গায় মিয়ানমারের পশুর হাট বসে, সেসব হাটে অভিযান চালানো হবে।