রাজশাহীতে টানা শীত আর কুয়াশায় ধানের বীজতলা অনেকটায় নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে ক্ষতিমুখে পড়তে পারে ধান উৎপাদন-এমনটি আশঙ্কা করা হচ্ছে। ধানের চারা চাহিদা মতো উৎপাদন না হলে জমিতে চারা রোপন করতে গিয়ে বিপাকে পড়বেন কৃষকরা। ফলে বাড়তি টাকা খরচসহ ধান চাষেও ব্যাঘাত ঘটবে। এমন পরিস্থিতিতে বীজতলা ঠিক রাখতে রাজশাহীর কৃষকরা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার পরেও তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় পেরে উঠছেন না অনেকে। অনেকের বীজতলা এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। সোমবার রাজশাহীর তানোর, মোহনপুর ও পবা এলাকা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে। তানোরের আমশো এলাকার কৃষক বাশির মোল্লা জানান, এবার তিনি প্রায় ২০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করবেন। সেই লক্ষ্য নিয়ে ২০-২৫ দিন আগে বীজতলা তৈরী করেছেন। কিন্তু গত কয়েক দিনের টানা শীত এবং কুয়াশায় বীজতলা নষ্ট হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে ধানের চারা গজালেও প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ চারা নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি যেগুলো আছে, সেগুলো লাল হয়ে গেছে। ধানের চারাগুলোকে কুয়াশা থেকে রক্ষা করতে বাধ্য হয়ে তিনি বীজতলার ওপরে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। দেখা গেছে যাদের চারা এরই মধ্যে রোপণের উপযুক্ত হয়েছে, তাঁরা তীব্র শীতের কারণে বোরো ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না।
রাজশাহীতে যে পরিমাণ শীত পড়েছে, তাতে এখনই ধানের চারা রোপন করলে সেগুলো বেড়ে উঠতে সমস্যা হবে। বরং শীত না কমলে জমিতে চারা রোপন করলে মারা যাবে। তাই এখনো তেমন ভাবে ধান চাষ শুরু হয়নি রাজশাহীতে। মোহনপুরের গোছা এলাকার আলী হোসেন বলেন, বীজতলা শুধু আমার একার না, সবারই নষ্ট হচ্ছে।পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দেওয়া হয়েছে। পবার বাকসারা এলাকার কৃষক মাহাবুর আলী বলেন, শীত আর কুয়াশায় ধানের চারা (বীজতলা) নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই ধানের চারা মরতে শুরু হয়েছে। চারা মরে গেলে পরে বেশি দামে কিনতে হবে। তখন বাড়তি খরচ লাগবে। এবার এমনিতেই ধান চাষে খরচ বাড়বে। আবার চারা ঠিকমতো না হলে আরও খরচ বাড়বে এমনটাই আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এদিকে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, এবার রাজশাহী জেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৮৭ হেক্টর জমিতে ধানের বীজ রোপন করা গেছে। অথচ এবার বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ২০০ হেক্ট জমিতে। কিন্তু তৈরী হয়েছে ৪ হাজার ৩৩৬ হেক্টর জমি। গত বোরো মৌসুমে রাজশাহীতে বোরো ধান চাষ হয়েছিল ৬৫ হাজার ৮৩৪ হেক্টর জমি এবং ধান উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪১০ মেট্রিক টন। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের পরামর্শ দিতে গিয়ে বলছেন, রাজশাহীতে ‘শীত ও কুয়াশার কারণে এখনো তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে ক্ষতি রোধে কৃষকদের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়া এবং রাতের বেলায় টিউবওয়েলের গরম পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। এতে শীত ও কুয়াশার হাত থেকে রক্ষা পাবে বীজতলা।