শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিদেশী বেসামরিক পর্যবেক্ষকদের যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে ঢাকা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০

রাখাইনের মূল ভূখন্ডে ফিরে যাওয়ার জন্য জোর পূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের মধ্যে আস্থা ঘাটতি কমাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় মিয়ানমারকে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ থেকে অসামরিক পর্যবেক্ষকদের সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে ঢাকা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, বিশ্বাসের ঘাটতি কমাতে এবং আস্থা বাড়াতে আমরা মিয়ানমারকে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ যেমন আসিয়ান, চীন, রাশিয়া, ভারত বা তাদের পছন্দের অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে বেসামরিক পর্যবেক্ষকদের যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছি। তিনি বলেন, বিদেশী বেসামরিক পর্যবেক্ষক অন্তর্ভূক্তি ‘টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য আস্থা ঘাটতি কমাতে পারে’ এবং রোহিঙ্গারা প্রাথমিকভাবে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাচ্ছে না কারণ তারা নিজেদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার ব্যাপারে তাদের সরকারকে বিশ্বাস করে না। রিজিওনাল ফোরামের (এআরএফ) এর চেয়ারম্যান ভিয়েতনামের উপ-প্রধানমন্ত্রী ফাম বিনহ মিনের সভাপতিত্বে তিনি ‘২৭তম আসিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস’ মন্ত্রীসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এআরএফ-এর অংশীদারদের কাছ থেকে সমর্থন চেয়েছেন যাতে অসহায় রোহিঙ্গারা সুরক্ষা, নিরাপত্তা এবং মর্যাদায় তাদের ভূখন্ডে ফিরে যেতে পারে, সেখানে পুনর্বাসিত এবং সমাজে পুনরায় সংহত হতে পারে। মোমেন তার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যদি এই সমস্যার দ্রুত সমাধান না করা হয়, তাহলে তা উগ্রবাদের পকেটে পরিণত হতে পারে এবং যেহেতু সন্ত্রাসীদের কোন সীমানা নেই, কোন বিশ্বাস নেই, এই অঞ্চলে অনিশ্চয়তা সৃষ্টির একটি ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে যা একটি শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ এবং স্থিতিশীল অঞ্চলের জন্য আমাদের আশাকে হতাশায় পরিণত করতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ গঠনমূলক কূটনীতির মাধ্যমে সংকট সমাধানে আগ্রহী এবং এরপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে ৩টি দলিল স্বাক্ষরিত হয়। তিনি উল্লেখ করেন, মিয়ানমার ভেরিফিকেশনের পর রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে এবং একই সঙ্গে সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার সঙ্গে তাদের স্বেচ্ছায় ফিরে আসার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সম্মত হয়েছে। তিনি বলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আজ পর্যন্ত কেউ ফিরে যায়নি এবং অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার পরিবর্তে রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধ এবং গোলাবর্ষণ চলছে। অর্থনীতি, পরিবেশ এবং সামগ্রিক সামাজিক প্রভাবের হুমকি সত্ত্বেও তিনি বলেন, বাংলাদেশ তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে গণহত্যা থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লাখ নির্যাতিত মানুষকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে।
মহামারী পরিস্থিতি সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন , একবার টীকা তৈরি হলে, এটা অবশ্যই বৈষম্যহীন ভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত হতে পারে। বাংলাদেশে কম মৃত্যুর হার বজায় রাখতে কোভিড-১৯ ছড়ানো রুখতে সময়মত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আসন্ন ‘প্লানেট ইমারজেন্সি’ অবস্থা থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে সহযোগিতা এবং যৌথভাবে সবাইকে একসঙ্গে পথ চলতে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা কোন বিকল্প পরিকল্পনা খুঁজতে পারি না, কারণ আমাদের দ্বিতীয় কোনো গ্রহ নেই। আমাদের অবশ্যই এই গ্রহকে বাঁচাতে হবে। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সবসময় সন্ত্রাসবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন, মানুষের অবৈধ চলাচল, মাদক পাচার এবং বহুজাতিক অপরাধসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ সবসময় এআরএফ-এর উদ্যোগকে সমর্থন করবে, যা বহুপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এআরএফ এই অঞ্চলে শান্তি বৃদ্ধির জন্য ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।
এটি ২৭ সদস্য নিয়ে গঠিত। এদের মধ্যে ১০টি আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্র হলো- ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম। এছাড়া আরো রয়েছে ১০টি আসিয়ান সংলাপ অংশীদার রাষ্ট্র এরা হলো – অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, জাপান, নিউজিল্যান্ড, কোরিয়া, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট। অপর ৭ সদস্য হচ্ছে : বাংলাদেশ, ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অফ কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং তিমুর-লেস্তে এবং একটি আসিয়ান পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র- পাপুয়া নিউ গিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com