দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় যেখানে সরকার বিপ্লব ঘটাচ্ছে, সেখানে নতুন চার লেনের রাস্তায় কাজের মান কেন খারাপ হচ্ছে সেই প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফোরলেন দুই বছর পরে সংস্কার করতে হচ্ছে এই ফোরলেন করে লাভ কি? ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম দুই বছর পরে সংস্কার করতে হচ্ছে। এই জন্য আবার আলাদা প্রকল্প নিতে হচ্ছে। নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক এক বছর না যেতেই ছেড়া কাঁথার মতো জোড়াতালি অবস্থা? এই ফোরলেন দিয়ে কি হবে?’
সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ওয়ার্ক প্যাকেজ-৩ এর চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের কাজের মতো কাজ করতে হবে। আমাদের কোয়ালিটির বিষয় প্রথমে নজর দিতে হবে। আমাদের রাস্তুাগুলোকে রক্ষা করতে হবে। ২৮টি লোড কন্ট্রোল স্ট্রেশন হওয়ার কথা। কিন্তু এটা হবে কবে হবে কেউ জানে না। ‘আমরা রাস্তাগুলোকে রক্ষা করতে পারছি না। কিছুদিন পরে রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। রাস্তা রক্ষা করতে যা দরকার তা করতে হবে। ২৮টি এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন স্থাপন করতে হবে।’ সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প ডিএস-৫ এর আওতায় সরাইল ইন্টারসেকশন হতে বুধন্তী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত কাজের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন’ এ প্রকল্পের উব্লিউপি-০৩ প্যাকেজের লট নং ডিএস-০৬ এর নির্মাণকাজ যৌথ উদ্যোগে চীন ও বাংলাদেশের তিনটি কোম্পানি বাস্তবায়ন করবে। এর মধ্যে চীনের কোম্পানি দুইটি হলো-চেসিইটিস ও এসএলজিসি এবং বাংলাদেশের পিডিএল। এতে খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৫ কোটি ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ টাকা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা-সিলেট ফোরলেন প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এডিবি ঋণ দিচ্ছে ১৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এডিবি ও সরকার মিলে কাজটা করছি। কাজটা ভালো ঠিকাদার পেয়েছে। কাজটা সময় মতো শেষ করবে বলে আমরা আশা করি। এ সময় রাস্তা রক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সওজ-এর প্রধান প্রকৌশলী যে আসে তাকে প্রথমে বলি আপনার প্রধান কাজ সড়ক রক্ষা করতে হবে। এক্সেল লোড কন্ট্রোল মেশিন স্থাপন করতে হবে। নবীনগর-চন্দ্রার কি অবস্থা? একেবারে বেহাল অবস্থা। আমি যা দেখছি তাই বলছি। এসব নিয়ে দরকার হয় সেমিনার করেন।
‘আমরা যদি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে চাই তবে তবে স্মার্ট রাস্তা দরকার। নতুন রাস্তা দরকার নাই, বিদ্যমান সড়ক স্মার্ট করতে হবে। চলমান প্রকল্পগুলো শেষ করবো কোয়ালিটি বজায় রেখে। এই মুহূর্তে সড়কের নতুন প্রকল্প দরকার নেই।’ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গুরুত্ব তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, অনেক প্রাণবন্ত প্রয়াসে এটা সবুজ ফসল ঢাকা-সিলেট ছয়লেন। এই জন্য এডিবিকে বার বার ঋণ দিতে অনুরোধ করেছিলাম। সিলেট গুরুত্বপূর্ণ কান্টেটিভিটি। কিন্তু আমরা শুরু করতে পারিনি। মাঝে এমন একটি বাধা এসেছিল। এই সড়ক প্রথমে চারলেন করার উচিত ছিল। জানি না কেন এটা দুই লেন হলো। এটা আমাদের প্রথমে ভুল ছিল। সাইফুর রহমান সাহেব (সাবেক অর্থমন্ত্রী) কি হিসেবে এটা করেছিলেন জানি না। সিলেটের মানুষ আজকে সব থেকে বেশি খুশি হবে কারণ ছয়েলেন কাজ হচ্ছে। এডিবি অর্থায়ন করেছে এই জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
এ সময় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রিন্সিপাল রওশন আরা মান্নান এমপি, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, বাংলাদেশে নিযুক্ত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন জিনটিং, প্রকল্পের পরিচালক একে মোহাম্মদ ফজুলল করিম সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. মাছুম সারওয়ার।
প্যাকেজ-৩ এর লট ৬ এর আওতায় বুধন্তি বাস স্ট্যান্ড হতে এস এম স্পিনিং মিল পর্যন্ত ১৯ দশমিক ১ ফ্রেক্সিবল পেভমেন্ট কাজ করা হবে। এর চুক্তি মূল্য ১ হাজার ৮৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। কাজটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে পিডিএল ও চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান। এই লটে ১৫৫ মিটারের ২৫টি কালভার্ট, ৩৪৭ দশমিক ৫৩ মিটার দৈর্ঘ্যের সাতটি সেতু, ৩ দশমিক ৮৮৩ কিলোমিটার ড্রেন, ১ হাজার ১২০ বর্গ মিটারের বাস বে ও সার্ভিস লেরেনর রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ করা হবে। এছাড়া দুটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে এই প্যাকেজর আওতায়।