রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে চাঁদা দাবির অভিযোগে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) এক ছাত্রলীগ নেতাসহ তিন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে মতিহার থানা সংলগ্ন সুইটের মোড় থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে বুধবার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর দায়ের করা মামলা ওই তিন জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
এর আগে গত সোমবার ছিনতাইয়ের অভিযোগ দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গ্রেফতার তিন জন হলেন রুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক শাহ আলম রাতুল (২৪), নূর মোহাম্মদ নাবিল (২৩) ও কামরান সিদ্দিক রাশেদ (২৩)। তারা তিন জনই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল অ্যান্ড ফুড প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী এবং শহীদ শহিদুল ইসলাম হলের বাসিন্দা। অন্যদিকে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নাজমুল হাসান রাজশাহীর ইনস্টিটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে নাজমুল তার বান্ধবীকে নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইবলিশ চত্বর সংলগ্ন আমতলার পুকুর পাড়ে বসে গল্প করছিলেন। সে সময় দুটি মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে আসেন রাতুল, নাবিল ও রাশেদ। তারা নাজমুলের কাছে পরিচয় জানতে চান। নাজমুল ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসেছেন জানালে, ওই তিন জন নাজমুলের বান্ধবীকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে চলে যেতে বলে। তার বান্ধবী ভয়ে রিকশায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। পরে ওই তিন জন নাজমুলকে জোর করে মোটরসাইকেলে তুলে রুয়েটে নিয়ে যান। সেখানে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু নাজমুল চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অভিযুক্তরা তাকে মতিহার থানা সংলগ্ন সুইটের মোড়ে একটি গ্যারেজে নিয়ে যান। সেখানে অজ্ঞাত আরও দুই ব্যক্তি তাদের সঙ্গে যুক্ত হন। তারা বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। একপর্যায়ে নাজমুল বাধ্য হয়ে তার কয়েকজন বন্ধুকে টাকার জন্য ফোন করেন। কিন্তু অনেক সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও টাকা না পাঠানোয় নাজমুলকে পাইপ দিয়ে মারধর করে অভিযুক্তরা। পরে নাজমুল বাধ্য হয়ে তার বাবাকে কল করেন। এ সময় অভিযুক্তরা তার বাবার সঙ্গে কথা বলে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এরই মধ্যে তার বন্ধুরা অপহরণের বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নাজমুলকে উদ্ধার করে এবং রাতুল, নাবিল ও রাশেদকে আটক করে।
মতিহার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় আমরা তিন জনকে আটক করি। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ৩৪২, ৩৬৫, ৩৮৫, ৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
জানতে চাইলে রুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মাহফুজুর রহমান তপু বলেন, ‘অপহরণের ঘটনায় আমাদের ছাত্রলীগের এক নেতা জড়িত। আমরা ইতোমধ্যে তাকে সংগঠনকে থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করেছি সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য।’ এ বিষয়ে রুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সেলিম হোসাইন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের কাছ থেকে মৌখিকভাবে জেনেছি। তার কাছ থেকে ঘটনাটি লিখিতভাবে নিয়ে শৃঙ্খলা কমিটিতে বিষয়টি আলোচনা করবো। সেখানে অভিযুক্তদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’- বাংলাট্রিবিউন