বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

জীববৈচিত্র্যবান্ধব আশঙ্কামুক্ত কৃষি পদ্ধতিই আধুনিক কৃষি

ড. মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

বাংলাদেশ কয়েক দশকে সবুজ বিপ্লবের কিছু যুগান্তকারী উদ্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ফসল উৎপাদনে ঈর্ষণীয় সফলতা পেয়েছে, তার দৃশ্যমান ফলাফল হলো প্রধান কিছু ফসল (ধান, আলু, সবজি, আম ইত্যাদি) উৎপাদনে বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে প্রথম দশে থাকা। সাফল্যের প্রতিদান হলো, বৃহৎ আকারের একক ফসলের কিছু বাছাই করা জাতের ওপর নির্ভরশীলতা এবং এ জাতগুলোর উচ্চফলনশীলতা বজায় রাখার জন্য রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগ, তদুপরি একক ফসল নিশ্চিত করার জন্য ভেষজনাশক বা আগাছানাশকের নির্বিচার প্রয়োগ। তাই দেশের সাফল্য কখনো কখনো ম্লান হয়ে যায়, যখন উৎপাদন ব্যবস্থার নেতিবাচক দিকগুলো মারাত্মকভাবে সামনে চলে আসে। এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যে শুধু বাংলাদেশে দৃশ্যমান তা নয়, সারা বিশ্বই এ ব্যবস্থার শিকার, তবে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশগুলোতেও এ ব্যাপকতা একটু বেশি। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান সবজি বেগুন ও তার জমিতে ভারী ধাতুর ক্ষতিকর উপস্থিতির বৈজ্ঞানিক প্রমাণে বর্তমান ব্যবস্থার ভয়াবহতা আরেকবার প্রকাশ পেয়েছে। শুধু কি ভারী ধাতু, মাটির উপরে ও নিচের পানির নাইট্রেটের ঘনত্ব বেড়ে গেছে, যা দেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণা ফলাফলে তুলে ধরা হয়েছে। কৃষিজমিতে ভারী ধাতুর প্রধানতম কারণ অযাচিত পরিমাণে ফসফেট (ভারী ধাতু ক্যাডমিয়াম-সমৃদ্ধ রক ফসফেটের কাঁচামাল) সার ও বালাইনাশক (লেড, ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক, নিকেল ইত্যাদি) প্রয়োগ এবং নাইট্রোজেন সারের অপরিণাম ব্যবহারের ফলে মাটির উপরে ও নিচের পানিতে নাইট্রেটের উপস্থিতি। মাটিতে বা ফসলে প্রয়োগ করার কোনো রাসায়নিক সারই ৩০ ভাগের বেশি ব্যবহার হয় না। বাকি অংশ মাটিতে সংবন্ধন, সেচের পানি বা বৃষ্টির পানির মাধ্যমে জলাধারে জমা হয়ে জলজ প্রাণীর ক্ষতিসহ পরিবেশেরও সীমাহীন ক্ষতির কারণ হয়। এছাড়া নাইট্রোজেন সার বেশি দিলে গাছের ভারী ধাতু শোষণ মাত্রা বেড়ে যায়। মানবদেহে ক্যাডমিয়াম ও নিকেলের উপস্থিতিতে কম ওজনের সন্তান প্রসব, হাড়ভঙ্গুরতার মতো রোগ দেখা যায়। নাইট্রেট-সমৃদ্ধ পানি পান করলে মেথামোগ্লোবিনিমিয়া হতে পারে, অন্ত্রে নাইট্রেটের রূপান্তর যৌগ ক্যান্সারের কারণ। এছাড়া কীটনাশক হিসেবে বিভিন্ন কার্বামেট, পাইরেথ্রয়েড এবং নিওনিকোটিনাইডের এন্ডোক্রাইনের কার্যকলাপ ব্যাহত করে এবং প্রাণী ও মানুষের প্রজননের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের প্রমাণ আছে। আবার কীটনাশক ক্লোরপাইরিফস, ফসফামিডন, ম্যালাথিয়ন, ফেন্থিয়ন, মিথাইল ফসফরোথিওয়েট, প্যারাথিয়ন, ক্লোরফ্লুজাউরন, সাইপারমেথ্রিন বা ফক্সিমিন জমিতে প্রস্তাবিত ঘনত্বে মাটি এবং রাইজোস্ফিয়ার মাইক্রোবায়োটার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে আসছে। ভেষজনাশক গ্লাইফোসেট মাটির রোগসৃষ্টিকারী অণুজীবের তুলনায় অনেক কম ঘনত্বে মাটি, উদ্ভিদ এবং অন্ত্রের উপকারী জীবাণুকে বাধা দেয়। সামগ্রিকভাবে, মাটি, উদ্ভিদ এবং মানব জীবাণুর ওপর গ্লাইফোসেটের এ পরোক্ষ প্রভাবগুলো মানুষের স্বাস্থ্যকে অস্বাভাবিকভাবে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ বর্তমান উৎপাদন ব্যবস্থা কোনো অবস্থাতেই ইতিবাচক নয় বরং বিষময়। যেভাবে চলছে তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ সবুজ বিপ্লবের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহারের মাত্রা বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় আছে; গত ১০ বছরে রাসায়নিক সার ব্যবহার প্রতি হেক্টরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, বালাইনাশকের ব্যবহারও বেড়েছে বিশেষ করে ভেষজনাশক। সমীক্ষায় দেখা গেছে, এশিয়ায় পৃথিবীর সর্বাধিক পরিমাণ হেক্টরপ্রতি ২৫ কেজি বালাইনাশক ব্যবহার হচ্ছে। চীন ও ভারত সেখানে শীর্ষস্থানে, বাংলাদেশও প্রায় ১০ কেজি ব্যবহার করছে। নীতিনির্ধারণী মহলও বর্তমান খাদ্য উৎপাদন পদ্ধতি নিয়ে উদ্বিগ্ন, প্রতিকার হিসেবে জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে যার মূল লক্ষ্য হলো নিরাপদ, লাভজনক কৃষি এবং টেকসই খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা অর্জন। অর্থাৎ বর্তমান কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থা নিরাপদ নয়, তা নতুন নীতির মূল লক্ষ্যেই উল্লেখ আছে। ফলে এ বিষময় ব্যবস্থায় মানুষ, মাটি, পরিবেশ, প্রতিবেশের স্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে, এমন বাস্তবতায় একটি বিষমুক্ত আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা সবার প্রত্যাশা।
আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা কৃষি উৎপাদনে অংশীজনদের অনুশীলনের স্থাযত্বিকে বিবেচনায় রেখে সুসংঘবদ্ধ পরিকল্পনা যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ও সুরক্ষা, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ করা, যা উৎপাদনকারী ও ভোক্তার স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে। আবার বাস্তুসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাবগুলো সংশোধন করার কার্যকর ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়। মাটি কৃষি উৎপাদনের অন্যতম স্থান এবং মাটির স্বাস্থ্যকে উন্নত করাই আধুনিক কৃষির প্রথম লক্ষ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়, সেজন্য এমন চর্চা মাঠপর্যায়ে উৎপাদনকারীদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে যাতে মাটির অনুজীবীয় কার্যাবলিতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। মাটিতে অণুজীব কার্যক্রম সচল থাকলে পুষ্টিসমৃদ্ধ উৎপাদন হবে, তা একটা উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হবে মানুষের জন্য ২০টি অ্যামিনো অ্যাসিড অত্যাবশ্যক, তার ১১টি মানুষের শরীরে তৈরি হয়। ১৩টি অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিনসহ নয়টি প্রোটিন মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, শাকসবজি, ফলমূলের মাধ্যমে গ্রহণ করে, কিন্তু কিছু অত্যাবশ্যকীয় উপাদান অণুজীব তৈরি করে যারা অ্যামিনো অ্যাসিড ও ভিটামিন তৈরিতে কাজ করে। যেমন কোবালমিন (ভিটামিন বি১২) উদ্ভিদ বা প্রাণী কেউ উৎপন্ন করতে পারে না, কিন্তু এটি উদ্ভিদের মাইক্রোবায়োটা বা রুমিন্যান্ট প্রাণীদের অন্ত্রে জীবাণু দিয়ে সংশ্লেষিত হয়। তাছাড়া এগ্রোইকোলজিকে গুরুত্ব দিয়ে স্থানীয় ফসলগুলো প্রজননগত উন্নয়ন করে উৎপাদন, দেশের ঐতিহ্য একই জমিতে একাধিক ফসলের চাষ; সে প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রেখে চাষ ব্যবস্থার বিন্যাস, কৃত্রিম দ্রব্যের পরিবর্তে রোগবালাইয়ের জৈব বালাই ব্যবস্থার শক্তিশালীকরণ, ফসল প্রক্রিয়া ও মোড়কায়নে পলিথিনের পরিবর্তে প্রাকৃতিক দ্রব্যের প্রয়োগ। জনসংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধি, নগরায়ণ ও শিল্পায়নের জন্য কৃষিজমি কমছে। ফলে একক ফসল একটি বিধ্বংসী প্রক্রিয়া হওয়ায় ফল, সবজি, মসলা, মূল জাতীয় ফসলের জন্য কৃষি বনায়নভিত্তিক উৎপাদন পরিকল্পনায় জোর দেয়া প্রয়োজন। কৃষি যান্ত্রিকীকরণকে বাদ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই তবে এমন যন্ত্র প্রবর্তন করা উচিত যাতে সৌরজ্বালানি দিয়ে চালানো যায় বা জীবাশ্ম জালানি কম লাগে। যন্ত্র আমাদের সময় বা মনুষ্যশক্তির সাশ্রয় দেবে পাশাপাশি তার নেতিবাচক দিকও দেখতে হবে। এখানে নতুন প্রজন্মের গবেষকদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ আছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব দেশে ভালোই হাওয়া দিচ্ছে, সেমিনার, কর্মশালা, একাডেমিক আলোচনার শেষ নেই, এটা খুবই ভালো লক্ষণ, তবে তাও কিন্তু ভাবতে হবে আমরা তা গ্রহণ করার জন্য কতটুকু প্রস্তুত, আমরা তো দ্বিতীয় প্রজন্মের কৃষিই পুরোপুরি বাস্তবায়ন করিনি। যা হোক, দেশে বর্তমানে সবুজ বিপ্লবের স্খলিত ধারা অনুসরণ করা হচ্ছে। এটা কোনো অবস্থাতেই নিরাপদ নয়। অনেকেই বর্তমান নেতিবাচক ব্যবস্থা আড়াল করার জন্য নানা ধরনের অজুহাত হাজির করেন, যেমন প্রায়ই বলতে শোনা যায় যে কীটনাশক প্রয়োগ করবেন তবে ফসল তোলার ব্যবধান (চৎবযধৎাবংঃ রহঃবৎাধষ) অনুসরণ করতে হবে, তাতে নিরাপদ ফসল নিশ্চিত হবে। একটা বাস্তব উদাহরণ দিলে এটা যে শুভংকরের ফাঁকি তা বুঝতে সহজ হবে। যেমন বেগুন, আমাদের জনপ্রিয় এ সবজির জন্য বাণিজ্যিক উৎপাদনকারী সপ্তাহে কমপক্ষে দুবার ফসল সংগ্রহ করেন। সাধারণ বালাইনাশক ব্যবহারে ফসল তোলার ব্যবধান ১০ দিন হলে সেখানে কীভাবে তা অনুসরণ হবে। ঢেঁড়স ফসল তুলতে হয় সপ্তাহে তিনবার, তাতে কি ফসল তোলার ব্যবধান বা পিএইচআই প্রয়োগ সম্ভব। ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করার জন্যই এমন ব্যবস্থার অ্যাডভোকেসি করা হচ্ছে বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মনে করেন।
কৃষি উৎপাদনের নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে, এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম। দেশে কৃষি গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণে ৩৯ ভাগ অবদান রাখছে, মোট নিঃসরণে ধান উৎপাদনে অবদান ৩২ ভাগ, গবাদি পশুর অ্যান্টারিক ফার্মেন্টেশন ৩১ ভাগ, এটা কমানো সম্ভব, ভাতভিত্তিক ফসলের ওপর নির্ভরতা কমানো দরকার। নিঃসরণ হিসাবেরও কিছু রাজনীতি আছে, যেমন ধান কী পরিমাণ বায়ুম-লীয় কার্বন সংবন্ধন করে তার কোনো হিসাব নেই। আধুনিক কৃষিতে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমবে, পাশাপাশি স্থানীয় জলবায়ু ও ফসলকে গুরুত্ব দেয়া হবে, তাতে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ হবে। যা হোক আধুনিক কৃষি প্রবর্তনে বাধা কোথায়, সে প্রশ্নের উত্তরটি হলো প্রথমত মনস্তত্ত্ব, তা নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে কৃষক পর্যন্ত সমভাবে বিরাজমান, যা সংশয় ও আশঙ্কা থেকে তৈরি। কৃষকরা তাদের লোকায়িত জ্ঞান হারাতে বসেছেন, পাশাপাশি নিজেদের প্রতি আস্থা নেই বললে চলে। দেশে অনেকগুলো কৃষিসংশ্লিষ্ট নীতি আছে কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নে কোনো সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নেই। প্রকল্পভিত্তিক কিছু কাজ হচ্ছে, তবে প্রকল্প সমাপ্তিতে তার ধারাবাহিকতা নেই। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশের কৃষি ব্যবন্থা সুস্থায়ী করতে ঘুরে দাঁড়াবার এখনই সময়। কারণ সংকটই সমাধানের পথ বাতলে দেয়, যা একটি ঐতিহাসিক নিয়ম। সংকটে সমাধানে পথ মসৃণ হয় না, যা খুঁজে নিয়ে যথাযথ কৌশল অবলম্বন করে পরিস্থিতির স্থায়িত্বশীল সমাধান দেয়া সম্ভব। বাংলাদেশের জন্য জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগের বিকল্প জৈব সার প্রয়োগকে উৎসাহিত বা বাধ্য করার কৌশল নেয়া যেতে পারে। যা স্থানীয় সম্পদ ব্যবহার করে সহজে তৈরি ও প্রয়োগ করা সম্ভব। জৈব সারের উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ বিশেষ করে পরিবহনে ভর্তুকি প্রচলন করা এখন সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত।
বিশ্ব সংস্থাগুলো সে লক্ষ্যে কাজ করছে, নানা ধরনের সন্ধি স্বাক্ষর হচ্ছে, কিন্তু দুঃখজনক বিষয় এ নিয়ে দেশে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও অগ্রগতি খুবই কম। জীববৈচিত্র্য রক্ষা আধুনিক কৃষির অন্যতম পদক্ষেপ, সেজন্য ‘?পিস প্যাক্ট উইথ নেচার’ নামের একটি চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছে, তাতে চলতি দশকের শেষ নাগাদ বন-জঙ্গল, পানি ও জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি বৈশ্বিক নাইট্রোজেন কমানোর চুক্তিতে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে, এখন কমানোর জন্য অ্যাকশন প্ল্যান দরকার। খাদ্য সামিটে অঙ্গীকার আছে যে বর্তমান স্খলিত চাষ ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে, অর্থাৎ আমাদের আধুনিক পরিবেশ অনুকূল কৃষিনীতি আছে, বিশ্ব সংস্থার সঙ্গে অঙ্গীকার আছে এখন শুধু বাস্তবায়নে কর্মসূচি দরকার।
সব প্রাণের বেঁচে থাকা সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন চক্রের জন্য খাদ্য অত্যাবশ্যক এবং এ খাদ্য নানা পরিবর্তন হয়ে বিভিন্ন স্তরের উপকারভোগীদের জোগান দিয়ে পুনঃ পুনঃ ব্যবহারই খাদ্য ব্যবস্থা। মানুষ এ খাদ্য ব্যবস্থার একজন উপকারভোগী। প্রকৃতিতে মানুষের আধিপত্যেই কৃষি পদ্ধতির পত্তন হয়। মানুষের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যের মূল উৎস কৃষিজ (ফসল, প্রাণী ও মৎস্য) বিধায় তার স্বাভাবিক জীবন চক্রের ধারাটি সুস্থ রাখার জন্য কৃষি উৎপন্নের নিরাপত্তা সামনে চলে আসে, যদিও শুরু থেকেই কৃষি নিয়ে শঙ্কা-আশঙ্কা ছিল। ক্রমবর্ধমান মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণে ফসিল জ্বালানি ও পানির প্রাপ্যতাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বব্যাপী গত শতকে কৃষি উৎপাদনে যুগান্তকারী সবুজ বিপ্লবের পত্তন হয়। সবুজ বিপ্লবকেন্দ্রিক কৃষি উদ্ভাবন ও বিস্তারও অনেক হয়েছে এবং এসব উদ্ভাবন গরিব ধনী সব দেশ প্রয়োগ করেছে, খাদ্য উৎপাদনে সফলতা ঈর্ষণীয়, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে যে স্খলিত ধারা চলছে তা সংশোধন না করলে হয়তো এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। লেখক: ড. মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন: গবেষক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com