ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চন’ শিরোনামে দুই পর্বের একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছে ব্রিটিশ সম্প্রচার মাধ্যম বিবিসি। বিবিসির এই তথ্যচিত্রের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে গত সপ্তাহে কট্টরপন্থী সংগঠনের হিন্দুসেনা দেশে বিবিসিকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার আবেদন জানিয়ে মামলা করা হয়। শুক্রবার সেই আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট।
বিবিসি ভারত এবং ভারত সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে বলে অভিযোগ করে, গত সপ্তাহে হিন্দু সেনার সভাপতি বিষ্ণু গুপ্ত এবং একজন কৃষক বীরেন্দ্র কুমার সিং এই মামলা দায়ের করেন। আবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপর তথ্যচিত্রটি ভারতের এবং তার প্রধানমন্ত্রীর বৈশ্বিক উত্থানের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের ফলাফল। এছাড়াও ভারতের সামাজিক কাঠামোকে ধ্বংস করার জন্য বিবিসি হিন্দুত্ব বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে বলে অভিযোগে করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার এই আবেদন খারিজ করে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, এই তথ্যচিত্রটি নিয়ে সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করছেন আবেদনকারী। ভ্রান্ত ধারণার উপর ভিত্তি করে করা আবেদনের ভিত্তিতে কী ভাবে এ ধরনের নির্দেশ দিতে পারে সুপ্রিম কোর্ট? দেশটির প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি এমএম সুন্দের্শের বেঞ্চের প্রশ্ন, একটি তথ্যচিত্র কী ভাবে দেশকে প্রভাবিত করতে পারে?
এরআগে জরুরি নির্দেশিকা জারি করে দেশের যাবতীয় সমাজমাধ্যম থেকে বিবিসির তথ্যচিত্র সরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। বিজেপি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গত ৩০ জানুয়ারী, সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন আইনজীবী এমএল শর্মা। দেশের শীর্ষ আদালতকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, তথ্যচিত্রটিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার এই সিদ্ধান্ত স্বেচ্ছাচারপ্রসূত এবং অসাংবিধানিক। একই বিষয়ে আর একটি মামলা দায়ের করেন সাংবাদিক এন রাম এবং আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য এটিকে দ্রুত শুনানির জন্য নির্দিষ্ট মামলার তালিকায় নথিবদ্ধ করার দাবি জানান আইনজীবী শর্মা। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রের খবর, আগামী সোমবার মামলাটি শুনবে তিন বিচারপতির বেঞ্চ। এই বেঞ্চে থাকবেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পিএস নরসীমহা এবং বিচারপতি জেবি পরদিওয়ালা।
আইনজীবী সিইউ সিংহ এই বিষয়ে আদালতে অভিযোগ জানিয়ে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে সমস্ত সামাজিকমাধ্যম থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বিবিসির তথ্যচিত্রটি। দেশের বহু বিশিষ্ট মানুষ তথ্যচিত্রটি সমাজমাধ্যমে শেয়ার করার পর সেগুলো তুলে নেয়া হয়। তথ্যচিত্রটি দেখাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীরাও।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় গুজরাট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মোদী, তখন এটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ১ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়, যাদের বেশিরভাগই মুসলমান। হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি ট্রেনে আগুন লেগে ৫৯ জন নিহত হওয়ার পর সহিংসতা শুরু হয়।
বিবিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘুদের মধ্যে উত্তেজনার উপরে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। ২০০২ সালের দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদীর যে ভূমিকা ছিল বলে অনেকে দাবি করে, সেই বিষয়েও তদন্ত করা হয়েছে।
বিবিসি আরও বলেছে, ভারতের মুসলিম জনসংখ্যার প্রতি তার সরকারের মনোভাব নিয়ে ক্রমাগত অভিযোগে, নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রীত্ব কীভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তাও দেখানো হয়েছে। এছাড়া, ২০১৯ সালে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পর মোদী সরকারের গ্রহণ করা বিতর্কিত নীতিগুলি নিয়েও চর্চা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, কাশ্মীরের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করা, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ইত্যাদি। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া