দিনাজপুরের হাকিমপুরের সাদুরিয়া গ্রামের অসহায় বিধবা বেগম বিবির দুই শতক জমি কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় দুইজন তোসলিম আলী ও এনামুল হকের বিরুদ্ধে। সরকারি ঘর বরাদ্দ পেলেও তার জমিতে ঘর তৈরি করতে দিচ্ছে না তারা। মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকু হারাতে বসে মানবতার জীবন-যাপন করছেন তিনি। স্বামীর ভিটেবাড়ি রক্ষার্থে ঘুরছেন এখন সে মানুষের দ্বারেদ্বারে। উপজেলার সাদুরিয়া (ভাটরা) গ্রামের ৫৬ বছর বয়সী বিধবা বেগম বিবি। ২৫ বছর আগে স্বামী ওসমান আলী মারা গেছে। ছেলে সন্তান নেই, আছে তিন মেয়ে, মেয়েদেরও বিয়ে হয়ে গেছে। সব হারিয়ে আজ তিনি নিঃস্ব। মানুষের বাড়িতে কাজ করে পেট চলে তার। স্বামীর রেখে যাওয়া দুই শতক জমির উপর টিনে একটি ঝুপড়ি ঘর করে প্রায় ৩০ বছর যাবৎ বসবাস করে আসছেন এই বিধবা নারী। ঝড়-বৃষ্টি আর কনকনে ঠা-ায় তার কষ্টের জীবন। বিধবা অসহায় বেগমের কষ্টের জীবন চোখ পড়ে উপজেলা প্রশাসনের। তার দুই শতক জমির উপর বরাদ্দ হয় সরকারি পাকা ঘরের। পাকা ঘরের স্বপ্ন দেখতে থাকেন বেগম বিবি। পাকা ঘরের জন্য তার ভিটেবাড়িতে পড়তে থাকে সরকারি ইট, বালু ও সিমেন্ট। তার জমিতে সরকারি ঘরের ইট বালু আর সিমেন্ট পড়তে দেখে বাঁধা দেয় তার কুড়ে ঘরের সাথে থাকা তোসলিম আলী। সে দাবি করে এই দুই শতক জমি তার। বন্ধ হয়ে তার স্বপ্নে দেখা সরকারি পাকা ঘরের কাজ। জানা যায়, ৩০ বছর আগে তোসলিম আলীর বাবার নিকট থেকে ক্রয় করে এই জমি বেগম বিবি। এছাড়াও তার বাবা এই দুই শতক জমিতে ঘর করার অনুমতি দেয় বেগমকে। ৩০ বছর যাবৎ কোন বাঁধা দেয়নি তোসলিম। বর্তমান তসলিম আলীর দাবি, বেগমের দুই শতক জমি তার ঘরের পূর্বে পাশের এনামুল হকের জমির সাথে রয়েছে। এখন এনামুল হকও তার জমি দখল করে রেখেছে। দুই জনের খপ্পরে পড়ে আজ দিশেহারা হতদরিদ্র বেগম বিবি। একজন প্রতিবেশী বলেন, বেগম একজন অসহায় মানুষ। দীর্ঘদিন এই জায়গায় বসবাস করে আসছেন। তোসলিমের বাবা তাকে এই দুই শতক জায়গা বিক্রি করে গেছেন। তাকে এই জায়গায় বসবাস করতে দেওয়া হচ্ছে না। উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তোসলিম। খুবি কষ্টে জীবন-যাপন করছেন অসহায় মানুষটি। ন্যায্য বিচারের জন্য মানুষের দ্বারেদ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। অসহায় বেগম বিবি বলেন, আমি খুবি গরীব মানুষ। ২৫ বছর হলো স্বামী মারা গেছে, কোন ছেলে নেই। ৩০ বছর আগে এই দুই শতক জমি ক্রয় করে এখানে বসবাস করে আসছি। আমার দুনিয়াতে কেউ নাই, অসহায় আমি। এই সামান্য সম্বলটুকুই নিয়ে কোন রকম বেঁচে আছি। এখন এই সম্বলটুকু তোসলিম আর এনামুল কেড়ে নিতে চাচ্ছে। আমি কোথায় যাবো, কি করবো। পানি খাওয়া জন্য একটা টিউবওয়েল বসাতে দিচ্ছে না তোসলিম। মানুষের বাড়ি থেকে পানি নিয়ে আর কতদিন চলবো। সরকারি ঘর পেয়েও তা হারিয়ে গেলো। আমি আমার স্বামীর ভিটেবাড়িতে থাকতে চাই। তোসলিম আলী বলেন, এখানে আমার বাবা দুই শতক জমি বিক্রি করেছে। জমিটি চার জনের হাত বদল হয়ে বেগম বিবি কিনেছেন। তবে বেগম যে স্থানে আছে সেখানে তার জমি নেই, তার পূর্বপাশের এনামুলের জায়গার সাথে তার দুই শতক জমি আছে। এই জায়গা আমার আমি তাকে থাকতে দিবো না। এবিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুরে-আলম বলেন, উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের সাদুরিয়া গ্রামে বেগম বিবি নামে একজন অসহায় মহিলা রয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি সেখানে একটি মহল কিংবা পক্ষ তার ভিটেবাড়ি দখলের পায়তারা করছে। এছাড়াও উচ্ছেদের চেষ্টা করছে। সেটির কোন সুযোগ নেই। ঐমহিলা যদি প্রকৃত জমির মালিক হয়ে থাকে তাহলে তার স্থান থেকে কেউ উচ্ছেদ করতে পারবে না। ইতিমধ্যে ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তাকে নির্দেশ হয়েছে ঐস্থান পরিদর্শন করে সঠিক ব্যবস্থা নিতে।