পটিয়ায় প্রথম বারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থাৎ ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’ যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ শুরু হয়েছে। এ নিয়ে স্হানীয় কৃষকদের মাঝে নানা উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। এই পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপণ করে উচ্ছ্বসিত কৃষকরা। ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’ মেশিন ব্যবহারের ফলে বীজ, শ্রম ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন ব্যয়ও কমবে। এছাড়া এই পদ্ধতিতে বাড়বে ধানের ফলনও। রবিবার বিকেলে কোলাগাঁও ইউনিয়নের বাণীগ্রাম এলাকায় রাইস ট্রান্সপ্লান্ট মেশিনের মাধ্যমে ধানের চারা রোপনের কার্যক্রমের উদ্ধোধন করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু রিয়াদ, রমা দত্ত, সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. বুলবুল, স্হানীয় কৃষক,আবদুস সবুর, ফোরকান, নুরুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, আবদুল জব্বার। জানা যায়, পটিয়া উপজেলার ৬০ ভাগ কৃষক কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এই মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন জমিতে ইরি-বোরো ধান আবাদে ব্যস্ত কৃষকরা। আর এ সময় বোরো আবাদে কৃষি খাতে ব্যাপক শ্রমিক সঙ্কট দেখা দেয়। বিশেষ করে ধান রোপণ ও কাটার মৌসুমে শ্রমিক সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করে। দ্রব্য মূল্য সহ কৃষিউপকরণের দাম বৃদ্ধি কারণে শ্রমিকদের পারিশ্রমিকও বেড়েছে। এ সঙ্কট মোকাবিলায় কৃষিযন্ত্রের ব্যবহারে শ্রমিক সংকট ও আর্থিক সংকট থেকে উত্তরণ পাবে বলে আশা কৃষকদের। এরই মধ্যে নতুন হিসেবে ধান রোপণে কৃষকের নজর কেড়েছে ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’। অল্প সময়ে অধিক জমিতে স্বল্প ব্যয়ে ধানের চারা লাগাতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের কোনো জুড়ি নেই। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চলতি বছর বোরো মৌসুমে রাইস স্বল্প মূল্যে ট্রান্সপ্লান্টার কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। এতে করে কৃষকরা দ্রুত জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারবেন। ফলে উপকৃত হবে স্হানীয় কৃষকেরা। উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নের বাণীগ্রাম এলাকার কৃষক আবদুল জব্বার সহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের চারা রোপণে শ্রমিক সঙ্কট দেখা দেয়। শ্রমিকের অভাবে অনেক জমি আবাদ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় কৃষকদের। অনেক জমি পতিত থেকে যায়। এই যন্ত্র দিয়ে দ্রুত চারা রোপণ করা সম্ভব হয়। তাই এই যন্ত্রটি সহজলভ্য করে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার দাবি তাদের। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান জানান, এই পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপণ করতে গেলে প্রথমে ট্রে পদ্ধতিতে চারা তৈরি করতে হয়। পরে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণ করা হয়। তবে এই পদ্ধতিতে জমি আবাদে কৃষকরা প্রথম দিকে তেমন আগ্রহী না হলেও ধীরে ধীরে তারা ব্যাপারটি বুঝতে পেরে এখন এগিয়ে আসছে। তাই কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে সরকার ৫০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্র দিচ্ছে। এ ছাড়া এই পদ্ধতিতে চারা রোপণে কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, বাণীগ্রামের এই বিলে আগে ২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হতো এই বছর প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনে অল্প তেল খরচে বেশি জমিতে ধানের চারা রোপণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে ধানের বীজতলা তৈরি করতেও কোন জমির প্রয়োজন হয় না। ছোট ছোট প্লাস্টিক বা ধাতব ট্রেতে খুব সহজেই বীজতলা তৈরি করা যায়। ১২ থেকে ১৫ দিন বয়সি ধানের চারা রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনে তুলে জমিতে রোপণ করা যায়।