ভোলার চরাঞ্চল গুলোতে গাছে গাছে ঝুলছে হাইব্রিড জাতের ঝিঙা। ঝিঙের ফলন ও বাজার দাম পেয়ে ব্যাপক খুশি কৃষকরা। আর এ সব ফসল ভোলা ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। ভালো দাম পেয়ে কৃষকরাও খুব আনন্দিত। ঝিঙে এখন কৃষকদের কাছে অতি লাভজনক ফসল। তরকারী হিসেবে ঝিঙে একটি সুস্বাদু শবজি। ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চর চটকি মারার গাগুরিয়া চরের কৃষক হাফিজ চৌকিদার। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, অন্যের জমি লগ্নি নিয়েই তার কৃষিকাজ। গত দু’বছর ধরে সখের বসে ঝিঙে চাষ করে আসছেন মাত্র ৫ শতাংশ জমিতে। প্রথমদিকে ভালো ফলন দেখে পরবর্তিতে ১০ এবং চলতি বছর ২০ শতক জমিতে জিঙে চাষ করেন। গেলো কার্তিক মাসে জমি চাষ দিয়ে ২০ শতক জমিতে ৬০০টি ঝাড় তৈরি করেন। প্রতিটি ঝাড়ে তিনটি করে হাইব্রিড মেটাল সিটের ইউরেকা জতের বীজ বপন করেন। মাত্র দেড় মাসের মাথায় ফল ধরতে শুরু করে। সর্বপোরি তার খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে তিনি বিক্রি করেছেন ৫০ হাজার টাকা। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে। খেতে এখনও রয়েছে সাড়ি সাড়ি ঝিঙে। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। এখনও যে ফসল রয়েছে তা লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন। একই চিত্র দেখা যায় জেলার বিভিন্ন উপজেলাগুলোতেও। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়। চাষকৃত ঝিঙে সবজির কিছু অংশ চলে যায় ভোলার বিভিন্ন হাটবাজারে বাজারে, আর বাকিগুলো চলে যায় খুলনা, ঢাকা ও যশোর সহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। চর থেকে নদী পথে এবং পরে বাসে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান তারা। পাশাপাশি তারা এখানে চার থেকে পাঁচজন লোক কাজ করে জিবীকা নির্বাহ করছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় আরো অনেক কৃষক ঝিঙে চাষে জুকেছে তাদের দেখাদেখি, তারাও ফলন পেয়েছেন ভালো। ঝিঙে চাষে পরিশ্রম একটু বেশি হলেও ভালো ফলন, চাহিদা বেশি ও লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা খুশি। কৃষক মো. ইসমাইল ও মো. লোকমান জানান, তারা হাফিজ চৌকিদারের জমিতে কাজ করেন। তবে আগমীতে নিজেরাই ঝিঙে চাষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মেটাল এগ্রো লিমিটিডের মার্কেটিং অফিসার জানান, তারা প্রথমে কৃষকদের সাথে বিভিন্ন সভা ও সমাবেশ করে এই জাতের বীজ চাষ করতে আগ্রহী করেছেন। ফলে এবার চরে ভালো ফলন হয়েছে। ঝিঙ্গার সাইজ, কালার ও বাজার দাম খুবই ভালো। ইলিশা জংশনের মেটাল সিটের পরিবেশক মো. অবদুর রব দুলাল মিজি জানান, তাদের পরামর্শে এখন ভোলায় তাদের ২০ কেজি মেটাল ইউরেকা ঝিঙে বীজ এর মার্কেট রয়েছে। কৃষকরা ভালো ফলন দেখে এ জাতের ঝিঙে চাষ করতে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাসান ওয়ারেসুল কবির জানান, ভোলায় এই বছর ৩২৫ হেক্টর জমিতে ঝিঙে আবাদ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১৮ টন ফলন আসছে। কৃষি বিভাগ তাদের উপ-সহকারীদের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে ঝিঙে কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক হবে।