দেশে পণ্যের দাম বাড়ার সময় হঠাৎ করেই বেড়ে যায়, কিন্তু যখন কমার সময় হয়, তখন আর তেমনটি দেখা যায় না। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, আসলে আমদানি আমরা কতটুকু করেছি, আমরা আমদানি অনিয়ন্ত্রিতভাবে করেছি কি না। রশিদ সাহেব (মিল মালিক) বললেন অনিয়ন্ত্রিত আমদানির ফলে বাজারে ধস নেমেছে। আসলে ধস নামেনি। ধস যদি নামতো তাহলে কেজিতে পাঁচ টাকা, সাত টাকা কমে যেত। সেটা কিন্তু আমরা দেখি না। বাড়ার সময় লাফিয়ে পাঁচ টাকা বাড়ে, কমার সময় কিন্তু এক টাকা করে কমে বা কমে না। এই রকম কষিয়ে কষিয়ে কমে। এটাই কিন্তু বাস্তবতা। বাড়ার সময় হঠাৎ করে বেড়ে যায়।
গতকাল মঙ্গলবার (২১ মার্চ) খাদ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে মিল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চালের বাজার অস্থিতিশীল করলে বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমদানি করলেই যে বাজার নিয়ন্ত্রণ হবে তা আমি বিশ্বাস করি না। তার থেকে অনেক বেশি আমাদের দেশে মজুত থেকে যায়। আমাদের যদি সৎ লক্ষ্য থাকতো, সৎ উদ্দেশ্য থাকতো তাহলে ১০ লাখ টন আমদানির জন্য ফরেন কারেন্সি নষ্ট করার কোনো দরকার ছিল না বলে আমি জোর গলায় বলতে পারি। তবে রাস্তা ওপেন থাকলে চালের দাম কম থাকে। আমরা ১০ লাখ টন আমদানি করলাম, আমি মনে করি আরও ২০-২৩ লাখ টন মজুত আছে। আমরা কৃত্রিম সংকট করে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলি। এটা কোনোভাবে বরদাস্ত করা হবে না।
পবিত্র রমজানে পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রমজানে আমাদের শপথ নিতে হবে, রমজান মাসের মতো বাকি ১১ মাস যেন মানুষের সেবা করার সুযোগ পাই। চাল-আটা মানুষের জীবনে ক্ষুধা নিবারণের চরম দ্রব্য। রমজান মাস সিয়াম সাধনার মাস। সবাইকে অনুরোধ করবো আসুন এই মাসকে সামনে রেখে ৩০ দিনে ৩০টি রোজা যেন রাখি। তেমনি মানবসেবা করি। সেজন্য রমজান মাসকে উপলক্ষ করে সারা বছরের শপথ নেওয়ার জন্য আমার এই আহ্বান। মানুষকে যেন স্বস্তিতে রাখতে পারি।
মাঠ পর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমার নির্দেশ- আরসি ফুডরা (আ লিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক) ডিসি ফুডদের (জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক) সঙ্গে মিটিং করবেন। ডিসি ফুডরা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের নিয়ে মিটিং করবেন। মনিটরিং, পরিষ্কার মনিটরিং রাখবেন। মজুত কোথায় আছে, অবৈধ মজুত দেখবেন। মন্ত্রী বলেন, লাইসেন্সের সক্ষমতা কতখানি, সেই সক্ষমতার ওপর যেন মজুত করে। সক্ষমতার বাইরে হলে সেটা অবৈধ মজুত। সেটা যে কোনো ব্যবসায়ী হোক, যেন না করে।
এসময় খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকারসহ চাল ব্যবসায়ী নেতা ও মাঠ পর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।