বিএফইউজে ও ডিইউজে’র বিক্ষোভ সমাবেশ
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম এক ভয়ঙ্কর সময় পার করছে। মুক্ত সাংবাদিকতা দুরে থাক সাংবাদিকদের প্রাণ রক্ষাই এখন দায় হয়ে পড়েছে।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই গণমাধ্যমের উপর খড়গ নেমে এসেছে। ১৯৭৫ সালে ৪টি পত্রিকা রেখে সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এবারও ক্ষমতায় এসে অসংখ্য পত্রিকা ও টেলিভিশন বন্ধ করে দিয়েছে। ৫৪ জন সাংবাদিক হত্যা করেছে। দিনকাল, আমার দেশসহ অন্তত ৫০০ পত্রিকা বন্ধ হয়েছে এ সরকারের আমলে। এসময় নেতৃবৃন্দ প্রথম আলোর রিপোর্টার শামসুজ্জামান ও দৈনিক সংগ্রামের ফটো সাংবাদিক আজীজ ফারুকীর মুক্তি ও দিনকালসহ বন্ধ সকল মিডিয়া খুলে দেয়ার জোর দাবি জানান।
প্রথম আলোর রিপোর্টার শামসুজ্জামান ও সংগ্রামের ফটো সাংবাদিক আজীজ ফারুকীর মুক্তির দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে’র আজ সোমবার (০৩ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে ও ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম দিদারের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, বিএফইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশীদ আলম, ডিইউজের সহ সভাপতি শাহীন হাসনাত। আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব নাসির আল মামুন, কোষাধ্যক্ষ মুহাম্মদ খায়রুল বাশার, ডিইউজের কোষাধ্যক্ষ গাযী আনোয়ার, প্রচার সম্পাদক খন্দকার আলমগীর হোসাইন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক আবুল কালাম, জনকল্যান সম্পাদক দেওয়ান মাসুদা সুলতানা, দফতর সম্পাদক ডি এম আমিরুল ইসলাম অমর, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য আব্দুস সেলিম, আবু বকর, জাকির হোসেন, ডিইউজের নির্বাহী সদস্য শহীদুল ইসলাম, জেসমিন জুঁই, রফিক লিটন, মো. আব্দুল হালিম, ইউনিট চীফ গিয়াস উদ্দিন রাকিব, মিয়া আবদুল হান্নান, ফজলুর রহমান জুলফিকার, আবু হানিফ প্রমুখ।
এম আবদুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্র, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। অসংখ্য মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। একের পর এক সাংবাদিকরা নির্যাতিত হচ্ছে। মামলা-হামলার শিকার হচ্ছে। গত ৩ মাসে ৬০ জন সাংবাদিক নিগৃত হয়েছে। এই সরকারের রাত খুব পছন্দের। রাতে ভোট করে, রাতে সাংবাদিক তুলে নেয়। প্রথম আলোর রিপোর্টার শামসুজ্জামানকেও রাতের আধারে তুলে নিয়ে আড়াল করতে চেয়েছিল। গণমাধ্যমের চাপে আদালতে তুলতে বাধ্য হয়েছে। কাজেই এই স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় ছাড়া গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। এজন্য এই সরকারের পতন আন্দোলনে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। অবিলম্বে প্রথম আলোর রিপোর্টার শামসুজ্জামান ও সংগ্রামের ফটো সাংবাদিক আজীজ ফারুকীর মুক্তি দিন। তানাহলে পরিণাম ভাল হবে না। তিনি আরো বলেন, এই সরকার দিনকাল, আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ানসহ বহু সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে। এভাবে দিনের পর দিন মিডিয়ার উপর কালো থাবা আর সহ্য করা যায় না। নুরুল আমিন রোকন বলেন, এই সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই মিডিয়া বন্ধ করে বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়। এখনও তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। এরই অংশ হিসেবে প্রথম আলোর রিপোর্টার শামসুজ্জামান ও সংগ্রামের ফটো সাংবাদিক আজীজ ফারুকীকে আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছে। দিনকাল বন্ধ করেছে। দিনকালসহ সব মিডিয়া খুলে না দিলে সরকারের পরিণাম ভাল হবে না। তাই অবিলম্বে দিনকালসহ সকল বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দিন। কারান্তরিণ সাংবাদিকদের মুক্তি দিন, তানাহলে এই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন,বর্তমান সরকারের আমলে গণমাধ্যম কর্মীদের শঙ্কা ও ভয়ের মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তাই তারা এখন সত্য তুলে ধরতে পারছেন না। তাদেরকে এখন সেলফসেন্সরশিপ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের সমালোচনা করলে রোষাণলের শিকার হয়ে বন্ধ করা হচ্ছে বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন।সাংবাদিকরা খুন হচ্ছেন, বিচার পায়না। তিনি বলেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে গণমাধ্যমের যে স্বাধীনতা নেই শামসের গ্রেফতার ,প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা এবং দৈনিক দিনকাল বন্ধের মাধ্যেম তা আবারও প্রমাণিত হলো।
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, ,দেশে এক ভয়ানক ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম হয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকার গুলো আজ হরণ করা হয়েছে। ভাষা আছে কিন্তু বাক স্বাধীনতা নেই। গণমাধ্যম আছে ,কিন্তু গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। আদালত আছে ন্যায় বিচার নেই। সরকারের দু:শাসন ও লুটপাটের তথ্য যাতে প্রকাশ করা না যায় সেজন্য সাংবাদিক নির্যাতন এবং একের পর এক গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের কাজই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা। স্বাধীনতার পর তারা ৪টি পত্রিকা রেখে সকল পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল। এবারও তারা দিনকালসহ অসংখ্য মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তারা গণমাধ্যমের উপরে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাচ্ছে। এবার প্রথম আলোর রিপোর্টার শামসুজ্জামান ও সংগ্রামের ফটো সাংবাদিক আজীজ ফারুকীকে কারান্তরিন করে মুক্তি দিচ্ছে না। এভাবে চলতে পারে না। যে যেখানে আছে সবাই একত্রে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরে আসবে।