বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার গণতান্ত্রিক পরিসরকে সংঙ্কুচিত করে হত্যা, গুম, খুন ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শন করে বিরোধীদলকে নির্মূল করতে চায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। গত ৪ এপ্রিল বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সভায় ঢাকার বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে, পর পর এই ধরনের অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ফলেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর উদাসীনতা, অযোগ্যতা, দুর্নীতি ও নজরদারির অভাবের কারণে ভয়াবহ পরিনতির স্বীকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
তিনি বলেন, সভা মনে করে যে এই অনির্বাচিত সরকারের ব্যর্থতার কারণে সামগ্রিকভাবে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি বিভাগগুলোর কর্মকর্তাদের জালিয়াতির মাধ্যমে নির্বাচনের কারণে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধির কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সভায় বঙ্গবাজারসহ অন্যান্য স্থানে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং অবিলম্বে বঙ্গবাজারসহ সকল বাজারে অগ্নিনির্বাপন ও সকল নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের দাবি জানানো হয়। তিনি বলেন, সম্প্রতি জার্মান মিডিয়া হাউজ ‘ডয়েজ ভেল’ কর্তৃক স্যোশাল মিডিয়ায় র্যাবের অপকর্মের ডকুমেন্টারি প্রকাশিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে এই ডকুমেন্টারি প্রমাণ করেছে যে অনির্বাচিত সরকার আইন শৃংখলা বাহিনীকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। সভা অবিলম্বে সংবিধান বিরোধী, মানবাধিকার বিরোধী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জোর দাবি জানায়। সভা, র্যাব কর্তৃক বেআইনীভাবে গুম, হত্যা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা জানায় এবং এই সব সংবিধান ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী সরকারের পদত্যাগ দাবি করে।
মহাসচিব বলেন, সভায়, বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল ঘোষিত কর্মসূচি পালনের সময় দেশের বিভিন্ন জেলায় বিনা অজুহাতে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ কর্তৃক নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এ ধরনের হামলা ও গ্রেফতার থেকে প্রমাণ হয় যে গণতান্ত্রিক পরিসরকে সংঙ্কুচিত করে হত্যা, গুম, খুন ইত্যাদি সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শন করে বিরোধী দলকে নির্মূল করতে চায়। সভা অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানায়।
এছাড়া সম্প্রতি নওগাঁয় র্যাব কর্তৃক সরকারি প্রতিষ্ঠানের নারী কর্মকর্তা সুলতানা জেসমিনকে বেআইনীভাবে তুলে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার তীব্র নিন্দা জানায় এবং অবিলম্বে দায়ী র্যাব কর্মকর্তা, সরকারের যুগ্ম সচিব আজিজুল হকরে বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানায়। সভায় এ বিষয়ে জনমত গড়ে তুলোর জন্য যথাযথ কর্মসূচি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রয়োগ করে জনগণের স্বাধীন মতপ্রকাশ স্বাধীনতা হরণ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, সাংবাদিক এবং নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ও নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, যায়যায় দিন সম্পাদক শফিক রেহমান, দৈনিক সংগ্রামে পত্রিকার সম্পাদক মো: আবুল আসাদ সহ অন্যান্য সাংবাদিক এবং নাগরিকদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অবিলম্বে এই নিবর্তনমূলক কালো আইন, ডিজিটাল সিকিউটিরি আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়। ভার্চুয়াল সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। মহাসচিব সিদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে সভাকে অবহিত করেন।