চৈত্রের তাপদাহের মতো এই বৈশাখের গরমেও অতিষ্ঠ জনজীবন। মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে হাঁপিয়ে উঠেছে খেটে খাওয়া মানুষ। অসহনীয় গরম আর তাপদাহে বিমর্ষপ্রাণ প্রকৃতি।
গতকাল সোমবার (৮ মে) বিকেলে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এসময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৩৪ শতাংশ।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। রাকিবুল হাসান বলেন, এ পরিস্থিতি থাকবে আরো কয়েকদিন। এ অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা আপাতত নেই।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর বাজারের ভ্যানচালক লিপু মিয়া বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত চার্জার ভ্যান চালাতে কষ্ট নেই। কষ্ট এ রোদে যাত্রী নিয়ে যেতে। আর বেশি তাপের কারণে মানুষ বের হয় না, এ জন্য আয় রোজগার কমে গেছে।’ চুয়াডাঙ্গা আলী হোসেন মার্কেটের ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি শিলন আলী বলেন, ‘গরমে নাভিশ্বাস অবস্থা। মার্কেটে প্রচুর গরম থাকায় দিনের বেলা অনেকটা ফাঁকা থাকছে।’ দিনমজুর সামসুল বলেন, ‘এত তাপদাহ সহ্য করা কঠিন। জমিতে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারলাম না। এখন এই ছায়ায় বসে আছি। আজ কাজ শেষ করতে দেরি হবে।’ রাস্তার পাশে বসে বেল ও কলা বিক্রেতা মুনছুর আলী বলেন, ‘কোনো বিক্রি নেই। গাছের নিচে শুয়ে-বসে কাটাচ্ছি। এভাবে চললে সংসার চালানোই দায় হয়ে যাবে।’ তরমুজ ও ডাব বিক্রেতা শামীম হোসেন বলেন, ‘এত গরম তারপরও দিনের বিক্রি নেই। কিন্তু এই তাপদাহে দোকানে বসে থাকায় কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
চুয়াডাঙ্গা শহরের আপন ফ্যাশনের মালিক শাকিল বলেন, ‘আমরা নিজেরাই দোকানে এই তাপমাত্রায় দোকানে বসতে পারছি না। কাস্টমার কেমনে আসবে।’ ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক লিয়াকত জানান, ‘গরমের কারণে দিনের বেলায় তেমন ভাড়া পাচ্ছি না। আর সন্ধ্যার পরও গরমের কারণে ভাড়া নেই।’ এর আগে চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, গত দু’দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে। আজও ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটা এখনো দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দিনের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
জামিনুর রহমান আরো জানান, জেলাজুড়ে গত এক সপ্তাহ ধরে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বিরাজ করছিল। তবে গতকাল ও আজ সেটা ৩৯ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। যেটা গত দু’দিন মৃদু তাপপ্রবাহ ছিল। আজ সেটা তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। গত শনিবার ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও গতকাল রোববার ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়, যা ছিল দেশের সর্বোচ্চ। সাগরের লঘুচাপের কারণেই তাপমাত্রা বেড়েছে বলেও তিনি জানান। এর আগে গত ২০ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।