দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম আলাউদ্দিনের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে “সাতক্ষীরার উন্নয়ন ভাবনা এবং স. ম আলাউদ্দিন”শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে জেলা নাগরিক কমিটির আয়োজনে এই মতবিনিময় সভাঅনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক এড. আজাদ হোসেন বেলাল। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা জাতীয় পাটির সভাপতি শেখ আজাহার হোসেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী রিয়াজ, প্রফেসর আব্দুল হামিদ, কিশোরী মোহন সরকার। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন দৈনিক পত্রদূত এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক লায়লা পারভীন সেঁজুতি, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, জেলা জাসদের সভাপতি ওবায়দুস সুলতান বাবলু, বাসদ নেতা এড. খগেন্দ্র নাথ ঘোষ, দুদুকের পিপি এড. আসাদুজ্জামান দিলু, আওয়ামী লীগ নেতা এড. আজাহারুল ইসলাম, জেলা বাসদের আহবায়ক নিত্যানন্দ সরকার, আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আকতার হোসেন, ডা. সুব্রত ঘোষ, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী, জেএসডি নেতা আব্দুর জব্বার, মানবাধিকার কর্মী এড. মুনির উদ্দীন, ভূমিহীন নেতা কওসার আলী, বাংলাদেশ জাসদের জেলা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইদ্রিশ আলী, সদর উপজেলা জাতীয় পাটির সভাপতি প্রকৌশলী আনোয়ার জাহিদ তপন, সাংবাদিক রবিউল ইসলাম, এড. বদিউজ্জামান, সিপিবির জেলা সভাপতি আবুল হোসেন, এড. একে আজাদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির জেলা সম্পাদক মুনসুর রহমান, সাংবাদিক আবুল কাশেম, মহিলা যুবলীগের নেত্রী আয়েশা খাতুন খুকুমনি, বায়জিদ হোসেন প্রমুখ। সাতক্ষীরার উন্নয়ন ভাবনা এবং স.ম আলাউদ্দীন শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উদীচীর জেলা সভাপতি শেখ সিদ্দিকুর রহমান। মতবিনিময় সভায় বক্তারা দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা স. মআলাউদ্দীনের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন ও সৃষ্টিশীল চিন্তার উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা স. ম আলাউদ্দীন ছিলেন সাবেক সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। অন্যায় অসত্যের কাছে তিনি কখনো মাথা নত করেননি। তিনি ছিলেন সুদুর প্রসারি চিন্তার মানুষ। সাহসী ও আপষহীন নেতা। আপষহীনতার কারণেই তাকে জীবন দিতে হয়েছে। বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরায় রেললাইন নির্মাণ, পর্যটন শিল্পের বিকাশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, বসন্তপুর নৌ বন্দর চালু, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, ভোমরা স্থল বন্দরের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকার উদ্যোগ নেওয়ার পরও বাস্তবায়নের গতি ধীর। স. মআলাউদ্দীনের মত নেতা থাকলে এগুলো আরো দ্রুত বাস্তবায়িত হতে পারতো।বক্তারা বলেন, সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখি কারিগরি শিক্ষার বিকাশেস. ম আলাউদ্দীন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী স্কুল এন্ড কলেজ।কিন্তু ১৯৯৬ সালের ১৯জুন ঘাতকের গুলিতে নিহত হবার পর প্রতিষ্ঠানটি সাধারণশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তারিত হয়। অথচ বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় কারিগরিশিক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। সাতক্ষীরার কৃষি, শিল্প,ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে স. ম আলাউদ্দীনের ভাবনা ছিল খুবই প্রাসঙ্গিক। তার সেই ভাবনা বাস্তবায়িত হলে সাতক্ষীরা আরো বেশি উন্নত হতে পারতো। বক্তারা সাতক্ষীরায় নানা অনিয়ম দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে আরো বলেন,সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কের নকশা পরিবর্তন করে নির্মাণ করা হয়েছে। নদী ও খাল খননে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হলেও কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত জেলার ২২ লক্ষ মানুষ। রেল লাইন নির্মাণে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্ভাব্যতা করা হয়েছে। কিন্তু রেললাইন নির্মাণে কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সাতক্ষীরায় বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হলেও তা ঢেউ খেলানো অবস্থা। যে কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। ভোমরা স্থলে বন্দরে চলছে চরম নৈরাজ্য। সেখানে ব্যবসায়ীরা টিকতে পারছে না। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। ভোমরা বন্দর থেকে ব্যবসায়ীরা চলে যাচ্ছে অন্যত্র। এর কারণ একটি বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্র। পদ্মা সেতু নির্মাণ হলেও যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না হওয়ায় সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সুফল পাচ্ছে না। পণ্য পরিবহনে অধিক খরচ হচ্ছে। রেললাইন নির্মাণ হলে এ অঞ্চলের মানুষ পণ্য পরিবহনে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সুফল পাবে। সাতক্ষীরা পৌরসভার পানির বিল হঠাৎ চার গুণ বৃদ্ধি করায় বক্তারা কঠোর সমালোচনা করেন। বক্তারা বলেন, স. ম আলাউদ্দীন বেঁচে থাকলে এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি রখে দাঁড়াতেন। আজ সেই রুখে দাঁড়ানোর লোকটির বড় অভাব। বক্তারা স. ম আলাউদ্দীনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ভেদাভেদ ভুলে সাতক্ষীরার সামগ্রিক উন্নয়নে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল ন্যায় ভিত্তিক আন্দোলন সংগ্রামে কাজ করার আহ্বান জানান। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি ও সাহিত্যিক গাজী শাহজাহান সিরাজ, এসএম শহীদুল ইসলাম, শেখ তানজির আহমেদ, মোঃ রবিউল ইসলাম, আহসানুর রহমান রাজীব, মোঃ আব্দুস সামাদ, আসাদুজ্জামান সরদার, শেখ আব্দুল আলিম, আব্দুর রহিম, জিএম আমিনুল হক, শামীম রেজা, আবু সাঈদ, জহুরুল কবির, সেলিম হোসেন, আলতাফ হোসেন বাবু, জেলা নদী বন পরিবেশ রক্ষা কমিটির সভাপতি মফিজুর রহমান, উন্নয়ন কর্মী শ্যামল বিশ্বাস, আবু জাফর সিদ্দিকী প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব এড. আবুল কালাম আজাদ।