কোরবানি মুসলিম মিল্লাতের ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয় এক ইবাদত। গোটা বিশ্বের মুসলমান ঈদুল আজহা শেষে আল্লাহ নৈকট্য লাভের জন্য এই কোরবানিতে অবতীর্ণ হবেন। মনে রাখা প্রয়োজন, কোরবানির ঐতিহাসিক চেতনাকে বিস্মৃত রেখে পালন করা হলে এ এক ব্যর্থ কসরত ছাড়া আর কিছু ফায়েদা বয়ে আনবে বলে মনে হয় না। এ জন্য পশু কোরবানিতে অবতীর্ণ হওয়ার আগে অবশ্যই এর ঐতিহাসিক চেতনাকে সামনে নিয়ে পালন করতে হবে।
আমরা যে পশুর গলায় ছুরি চালিয়ে প্রতি বছর কোরবানি করি এটি মূলত সবচেয়ে বড় কোরবানি। কিন্তু ইতিহাসকে সামনে নিয়ে এলে আমরা দেখতে পাই, এর আগে আরো কতগুলো কোরবানি রয়ে গেছে। ওই কোরবানিগুলো না দেয়া পর্যন্ত এ শেষ কোরবানি দেয়ার অধিকার কারো নেই। অবশ্য কোরবানি আমরা দিয়ে যেতে পারব বটে এবং দিয়ে যাচ্ছিও বটে কিন্তু তা আমাদের জীবনকে কতটুকু প্রভাবিত করতে পেরেছে তার বাস্তব ফলাফল তো আমাদের সামনেই আছে। কই কোথাও তো পরিবর্তনের চিহ্ন পরিলক্ষিত হয় না; বরং এটি একটি ট্রেডিশনাল সংস্কৃতির রূপ ধারণ করে আমাদের মহৎ উদ্যোগ ও উদ্দেশ্যকে সমূলে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কোরবানির সার্থকতা পেতে হলে আমাদেরকে প্রথমে কোরবানির ঐতিহাসিক চেতনাকে উপলব্ধি করতে হবে এবং নিজেদেরকে সেই চেতনার আলোকে প্রস্তুত করে নিতে হবে। হজরত ইবরাহিম আ: মূল কোরবানিতে অবতীর্ণ হওয়ার আগে নিজের মধ্যে কতগুলো পরিবর্তন এনে ছিলেন অর্থাৎ নিজের ভেতর লুকায়িত পশুবত কতগুলো জানোয়ারের গলায় তিনি আগে ছুরি চালিয়েছিলেন। যা প্রত্যেক কোরবানিকারীদের অবশ্যই পালন করতে হবে। পৃথিবীর প্রথম কোরবানি আমরা আল-কুরআনে বিবৃত হজরত আদম আ:-এর দুই সন্তানের কোরবানি থেকে জানতে পারি। কিন্তু আমরা যে কোরবানি করি এটি মূলত হজরত ইবরাহিম আ:-এর চেতনার পরিপ্রেক্ষিতে। অর্থাৎ এটি আমাদের পিতা ও নেতা হজরত ইবরাহিম আ:-এর সুন্নাহ।
আল-কুরআনে কোরবানি : আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানি নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুষ্পদ জন্তু জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। অতএব তোমাদের আল্লাহ তো একমাত্র আল্লাহ সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাকো এবং বিনয়ীদেরকে সুসংবাদ দাও’ (সূরা হজ-৩৪)।
‘আর কোরবানির উটগুলোকে তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছি। এতে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে বাঁধা অবস্থায় কোরবানি করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। যখন কোরবানি করা উটগুলো মাটিতে পড়ে নিথর হয়ে যায় তখন তা থেকে তোমরা খাও এবং যারা প্রয়োজনের কথা প্রকাশ করে এবং যারা প্রকাশ করে না তাদেরকেও খাওয়াও’ (সূরা হজ-৩৬)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘ইবরাহিম বললেন, আমি আমার প্রতিপালকের মুখাপেক্ষী হচ্ছি। তিনি আমাকে পথ প্রদর্শন করবেন। প্রভু আমাকে নেক সন্তান দান করুন। অতঃপর আমি তাকে একটি ধৈর্যশীল পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিলাম। পুত্রটি যখন কৈশোর বয়সে উপনীত হলো তখন ইবরাহিম তাকে বলল, হে আমার সন্তান! আমি স্বপ্নে তোমাকে কোরবানি করতে দেখেছি। এ ব্যাপারে তোমার অভিমত কী? পুত্র বললেন, হে আমার পিতা! আপনাকে যা হুকুম করা হয়েছে তা পালন করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অর্ন্তর্ভুক্ত পাবেন। অবশেষে উভয়ই আনুগত্যের মস্তক অবনত করলেন এবং ইবরাহিম তার পুত্রকে উপুর করে শুয়ে দিলেন। এমনি সময় আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহিম তুমি সত্যিই স্বপ্নকে বাস্তব রূপদান করেছ। নিশ্চয় আমি নেককারদেরকে এভাবেই প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিঃসন্দেহে এটি একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা ছিল। অতঃপর একটি বিশাল কোরবানির পরিবর্তে তোমার পুত্রকে রক্ষা করলাম’ (সূরা সফফাত : ৯৯-১০৭)।
প্রথমত : ইবরাহিম আ: মূল কোরবানিতে অবতীর্ণ হওয়ার আগে প্রথম যে ছুরি হ ৪র্থ পৃ: ৭-এর কলামেকোরবানি মুসলিম মিল্লাতের ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয় এক ইবাদত। গোটা বিশ্বের মুসলমান ঈদুল আজহা শেষে আল্লাহ নৈকট্য লাভের জন্য এই কোরবানিতে অবতীর্ণ হবেন। মনে রাখা প্রয়োজন, কোরবানির ঐতিহাসিক চেতনাকে বিস্মৃত রেখে পালন করা হলে এ এক ব্যর্থ কসরত ছাড়া আর কিছু ফায়েদা বয়ে আনবে বলে মনে হয় না। এ জন্য পশু কোরবানিতে অবতীর্ণ হওয়ার আগে অবশ্যই এর ঐতিহাসিক চেতনাকে সামনে নিয়ে পালন করতে হবে।
আমরা যে পশুর গলায় ছুরি চালিয়ে প্রতি বছর কোরবানি করি এটি মূলত সবচেয়ে বড় কোরবানি। কিন্তু ইতিহাসকে সামনে নিয়ে এলে আমরা দেখতে পাই, এর আগে আরো কতগুলো কোরবানি রয়ে গেছে। ওই কোরবানিগুলো না দেয়া পর্যন্ত এ শেষ কোরবানি দেয়ার অধিকার কারো নেই। অবশ্য কোরবানি আমরা দিয়ে যেতে পারব বটে এবং দিয়ে যাচ্ছিও বটে কিন্তু তা আমাদের জীবনকে কতটুকু প্রভাবিত করতে পেরেছে তার বাস্তব ফলাফল তো আমাদের সামনেই আছে। কই কোথাও তো পরিবর্তনের চিহ্ন পরিলক্ষিত হয় না; বরং এটি একটি ট্রেডিশনাল সংস্কৃতির রূপ ধারণ করে আমাদের মহৎ উদ্যোগ ও উদ্দেশ্যকে সমূলে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কোরবানির সার্থকতা পেতে হলে আমাদেরকে প্রথমে কোরবানির ঐতিহাসিক চেতনাকে উপলব্ধি করতে হবে এবং নিজেদেরকে সেই চেতনার আলোকে প্রস্তুত করে নিতে হবে। হজরত ইবরাহিম আ: মূল কোরবানিতে অবতীর্ণ হওয়ার আগে নিজের মধ্যে কতগুলো পরিবর্তন এনে ছিলেন অর্থাৎ নিজের ভেতর লুকায়িত পশুবত কতগুলো জানোয়ারের গলায় তিনি আগে ছুরি চালিয়েছিলেন। যা প্রত্যেক কোরবানিকারীদের অবশ্যই পালন করতে হবে। পৃথিবীর প্রথম কোরবানি আমরা আল-কুরআনে বিবৃত হজরত আদম আ:-এর দুই সন্তানের কোরবানি থেকে জানতে পারি। কিন্তু আমরা যে কোরবানি করি এটি মূলত হজরত ইবরাহিম আ:-এর চেতনার পরিপ্রেক্ষিতে। অর্থাৎ এটি আমাদের পিতা ও নেতা হজরত ইবরাহিম আ:-এর সুন্নাহ।
আল-কুরআনে কোরবানি : আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানি নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুষ্পদ জন্তু জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। অতএব তোমাদের আল্লাহ তো একমাত্র আল্লাহ সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাকো এবং বিনয়ীদেরকে সুসংবাদ দাও’ (সূরা হজ-৩৪)।
‘আর কোরবানির উটগুলোকে তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছি। এতে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে বাঁধা অবস্থায় কোরবানি করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। যখন কোরবানি করা উটগুলো মাটিতে পড়ে নিথর হয়ে যায় তখন তা থেকে তোমরা খাও এবং যারা প্রয়োজনের কথা প্রকাশ করে এবং যারা প্রকাশ করে না তাদেরকেও খাওয়াও’ (সূরা হজ-৩৬)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘ইবরাহিম বললেন, আমি আমার প্রতিপালকের মুখাপেক্ষী হচ্ছি। তিনি আমাকে পথ প্রদর্শন করবেন। প্রভু আমাকে নেক সন্তান দান করুন। অতঃপর আমি তাকে একটি ধৈর্যশীল পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিলাম। পুত্রটি যখন কৈশোর বয়সে উপনীত হলো তখন ইবরাহিম তাকে বলল, হে আমার সন্তান! আমি স্বপ্নে তোমাকে কোরবানি করতে দেখেছি। এ ব্যাপারে তোমার অভিমত কী? পুত্র বললেন, হে আমার পিতা! আপনাকে যা হুকুম করা হয়েছে তা পালন করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অর্ন্তর্ভুক্ত পাবেন। অবশেষে উভয়ই আনুগত্যের মস্তক অবনত করলেন এবং ইবরাহিম তার পুত্রকে উপুর করে শুয়ে দিলেন। এমনি সময় আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহিম তুমি সত্যিই স্বপ্নকে বাস্তব রূপদান করেছ। নিশ্চয় আমি নেককারদেরকে এভাবেই প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিঃসন্দেহে এটি একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা ছিল। অতঃপর একটি বিশাল কোরবানির পরিবর্তে তোমার পুত্রকে রক্ষা করলাম’ (সূরা সফফাত : ৯৯-১০৭)।
প্রথমত : ইবরাহিম আ: মূল কোরবানিতে অবতীর্ণ হওয়ার আগে প্রথম যে ছুরি চালিয়েছিলেন সেটি হলো সব প্রকার মিথ্যা প্রভু তথা তাগুতের গলায়। যেই তাগুত মানুষের জীবনের প্রতিটি বিভাগে প্রচ্ছন্ন বা অপ্রচ্ছন্নভাবে প্রভু সেজে বসেছিল। আমাদের জীবনেও প্রচ্ছন্ন বা অপ্রচ্ছন্নভাবে অসংখ্য মিথ্যা প্রভু বসে আছে, তাদের গলায় ছুরি চালাতে হবে।
দ্বিতীয়ত : হজরত ইবরাহিম আ: যে পরিবার ও সমাজ এবং পরিবেশে আগমন করেছিলেন তার পুরোটাই শিরকের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। এমন কি রাষ্ট্রশক্তি পরিপূর্ণভাবে শিরকের পৃষ্ঠপোষকতা করত। তিনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে এক আল্লাহর দিকে মুখ ফিরিয়ে ছিলেন। ফলে তিনি একদিকে একা অপরদিকে গোটা দেশ ও জাতি তাঁর মোকাবেলায় এক সারিতে এসে দাঁড়াল। কিন্তু এর পরও হতোদ্যম হননি, তার মুখ অবসন্ন হয়নি। তখন সিদ্ধান্ত হলো আগুনে পুড়িয়ে মারার। তাতেও তিনি বিরত হলেন না; বরং এ কাজের জন্য লেলিহান অগ্নিগর্ভে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে পছন্দ করলেন। এটি তাঁর দ্বিতীয় কোরবানি। সুতরাং প্রতিটি কোরবানিকারীদেরকে যেকোনো পরিবেশে শিরক উচ্ছেদ ও তাওহিদের দাওয়াত দানের জন্য দাঁড়াতে হবে। সব ধরনের ভয়ভীতি ও জানমালের ক্ষতির আশঙ্কা থাকতে পারে। এ সমস্ত আশঙ্কার গলায় ছুরি চালাতে হবে।
তৃতীয়ত : শিরকমুক্ত সমাজ কায়েমের আন্দোলনের জন্য নিজেদের সুখ-শান্তি, আরাম-আয়েশ ও লোভ-লালসার গলায় ছুরি চালাতে হবে। ইসলামের জন্য, আল্লাহর জন্য প্রয়োজনে নিজের মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করার মানসিকতা থাকতে হবে। যুগে যুগে, কালে কালে আল্লাহর প্রিয়জনদেরকে এ পথ অবলম্বন করার অসংখ্য নজির দেখতে পাওয়া যায়। মানবতার মহান বন্ধু রাসূল সা:-কে এ পথ অবলম্বন করতে দেখেছি। হজরত ইবরাহিম আ: আগুন থেকে বাঁচার পর এ দেশে থাকা তাঁর আর সম্ভব হলো না। তাওহিদের জন্য তিনি বহিষ্কৃত জীবনই পছন্দ করলেন।
শেষ ও চূড়ান্ত কোরবানি : দেশত্যাগ ও নির্বাসনের দুঃখ-কষ্ট ভোগ করার পর বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহ তাকে সন্তান দান করলেন হজরত ইসমাইল আ:। তিনি তাঁর জন্যও একই ধর্ম ও কর্তব্য ঠিক করলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘সে পুত্র যখন তার সাথে কাজকর্ম করার বয়সে পৌঁছল তখন (একদিন ইবরাহিম তাকে বলল) হে পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি তোমাকে আমি জবাই করছি, এখন তুমি বলো তুমি কী মনে করো? সে বলল, হে আব্বাজান! আপনাকে যা হুকুম দেয়া হচ্ছে তা করে ফেলুন, আপনি আমাকে ইনশা আল্লাহ সবরকারীই পাবেন’ (সূরা আস সাফফাত-১০২)।
সব কঠিন পরীক্ষায় পাস করার পর চূড়ান্ত ও শেষ কঠিন পরীক্ষা অবশিষ্ট রয়ে গিয়েছিল যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত হজরত ইবরাহিম আ: সব কিছু অপেক্ষা রাব্বুল আলামিনকেই বেশি ভালোবাসেন কি না, তার ফয়সালা হতে পারত না। তাই বৃদ্ধ বয়সে একেবারে নিরাশ হয়ে যাওয়ার পর তার যেই পুত্র ইসমাইল আ: জন্ম লাভ হয়েছিল সে প্রিয় সন্তানকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করতে পারেন কি না তারই পরীক্ষা নেয়া হলো। পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হলেন। লেখক : শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট