ভারতে আদানি গ্রুপ নিয়ে সাম্প্রতিক বিসম্বাদে পুরনো বিতর্ক সামনে উঠে এসেছে। বৃহৎ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে দেশের রাজনীতিবিদদের অসৎ সংযোগের রাশ টানা আবশ্যক কিনা। একই সুর প্রতিধ্বনিত হয়েছে থাইল্যান্ডের সাম্প্রতিক জাতীয় নির্বাচনে। রাজতন্ত্র, জান্তা ও বিজনেস এলিটদের সঙ্গে সরকারের দহরম-মহরম সম্পর্ক ছিল এ নির্বাচনের অন্যতম আলোচ্য বিষয়। এশিয়ায় এগুলো আসলে নতুন কোনো প্রপঞ্চ নয়। ২৫ বছর আগে ইন্দোনেশিয়ার স্বৈরশাসক সুহার্তোর পতনকালেও প্রধান সংক্ষোভের জায়গা ছিল এটা। অবশ্য তা ক্ষণকাল স্থায়ী হয়েছিল। ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজনীতিকদের সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে ফের প্রশ্ন সামনে এসেছে। বলা যায়, প্রশ্নের দৌড় বেশ প্রলম্বিতই হচ্ছে। এ অঞ্চলে বৃহৎ শিল্প বা ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সম্পদ পুঞ্জীভূতকরণ বেশ বিস্তৃত হচ্ছে। নিজ নিজ দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে বেশ প্রভাব রাখা এ গ্রুপগুলোর বড় অংশই গুটিকয়েক পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। ২০১৮-এর দিকে ভারত ও চীনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মোট আয় দেশগুলোর মোট জিডিপির ১০-১৫ শতাংশ ছিল। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ায় এ রেশিও ছিল ৩০-৪০ শতাংশ। শুধু স্যামসাংয়ের আয়ই দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিপির ২০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। এ রেশিও ক্রমেই বাড়ছে। ২০০০ সালের দিকে ভারতের জিডিপিতে ১৫টি বৃহৎ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর অবদান ছিল ৯ শতাংশ। ২০১৯ সালে তা ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
উৎকোচ ও আর্থিক প্রণোদনার আন্তঃসম্পর্ক: বাজার পুঞ্জীভূতকরণ ও করপোরেট যূথবদ্ধতা কাঁধে কাঁধ রেখে চলে। এর ফলে ‘?কানেকশনস ওয়ার্ল্ড’ নামে নতুন প্রপঞ্চ সামনে এসেছে। আমাদের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘?দ্য কানেকশনস ওয়ার্ল্ড: দ্য ফিউচার অব এশিয়ান ক্যাপিটালিজম’ বইয়ে আমরা দেখিয়ে দিয়েছি এ অঞ্চলে কীভাবে বৃহৎ গ্রুপগুলো অর্থনীতিতে বিস্তৃত প্রভাব রাখে। নির্বাচনী প্রচারণায় অর্থায়ন বা ব্যক্তিগত অনুদান, ঘুস, পরিবারের সদস্য বা সহযোগীদের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিতে, রাজনৈতিকভাবে সুবিধা হয় এমন অঞ্চলে কর্মসৃজনে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর দিকে চেয়ে থাকে রাজনীতিবিদরা। এমন ক্ষেত্রে তারা আসলে বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকেই পছন্দ করে। কারণ তার ব্যাপ্তি ও প্রভাবের কারণে নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া আরো সরল হয়। এদিকে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীও তার সুবিধা আদায়ের জন্য মুখিয়ে থাকে। কোনো কোম্পানি অধিগ্রহণ, লাইসেন্স প্রাপ্তি, পারমিট, সরকারি চুক্তি ভাগিয়ে নিয়ে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে।
আপাতদৃষ্টিতে দেখতে গেলে মনে হবে, ব্যবসায়ী গ্রুপ ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে দুর্নীতি বা স্বার্থ সংঘাতের সরাসারি সংযোগ নেই। তবে রাষ্ট্র ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর মধ্যে অন্তরঙ্গ সম্পর্কের কারণে সাম্প্রতিক দশকগুলোয় ‘?দ্য কানেকশনস ওয়ার্ল্ড’ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছে। বাজারে যেমন সুসংহত অবস্থান তৈরি করেছে এ যুক্ত বিশ্ব, তেমনি আয় ও সম্পদের ক্ষেত্রে বড় আকারের বৈষম্য তৈরি করেছে। কারণ বেশির ভাগ বৃহৎ প্রতিষ্ঠানই স্বল্পসংখ্যক সম্পদশালী পরিবারের নিয়ন্ত্রণে।
এমতাবস্থায় কী করা যেতে পারে? প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপ ভেঙে দেয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে বাজার প্রতিযোগিতা উসকে দেয়া ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজন যখন দেখা দিয়েছে। যেসব প্রস্তাব সামনে আসছে তার বেশির ভাগই আগে প্রয়োগ করা হয়েছে। ১৯১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্ট্যান্ডার্ড অয়েল ভেঙে দেয়া হচ্ছে তার ক্ল্যাসিক উদাহরণ। তবে এ ধরনের পদক্ষেপ সাধারণত গুরুতর একচেটিয়াত্ব কিংবা তীব্র সংকটকালের জন্য প্রযোজ্য। এশিয়ার বেশির ভাগ অংশেই তেমন বড় কোনো সংকট নেই (কিছুসংখ্যকের মধ্যে খানিক অসন্তোষ ছাড়া)। জাতীয় অর্থনীতিতে ওই গ্রুপগুলোর ভূমিকাকে বেশ ইতিবাচকভাবেই দেখা হয়। কোনো কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভ্যানগার্ড হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয় ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোকে।
অবশ্য ১৯৯৭-৯৮ সালে অঞ্চলটির সর্বশেষ বৃহৎ আর্থিক সংকটকালে বেশকিছু বৃহৎ প্রতিষ্ঠান স্বল্পমেয়াদে বিপাকে পড়েছিল। তবে তা রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সংযোগের ব্যবস্থা বা কানেকশনস সিস্টেমকে জোরালোভাবে প্রতিস্থাপিত করে। এ সময়ে এসে, গ্রুপ মালিক বলেন বা রাজনীতিবিদ কেউই বিদ্যমান বন্দোবস্তে পরিবর্তন আনতে চায় না। বরং এ স্ট্যাটাস ক্যু ধরে রাখার পক্ষে সাফাই দেয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে তাদের। তাছাড়া সংস্কারটা কীভাবে হবে তা নিয়ে অনেক বড় বড় প্রশ্ন তো আছেই। বিজনেস গ্রুপ ভেঙে দেয়া কি কাঙ্ক্ষিত কোনো বিষয় কিংবা তা কি সম্ভবপর, বেহতর বিকল্প রয়েছে কি?
কিছু দেশ যেমন ফিলিপাইনে দেশের আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ গুটিকয়েক পরিবারের হাতে। এতে দেশটির অর্থনীতিতে কিছুটা শৃঙ্খলা রয়েছে বৈকি। কিন্তু এশিয়ার কিছু দেশে যেখানে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্রতর তাদের অর্থনীতি বরং তমশাচ্ছন্ন। তাছাড়া সরকার যদি কোনো গ্রুপকে ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্তও নেয় তা কোন ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করে সম্পন্ন হবে বা কোন গ্রুপের বিরুদ্ধে সবার আগে পদক্ষেপ নিতে হবে সে বিষয়ে নীতিগত অবস্থান স্পষ্ট নয়।
এসব উদ্বেগের স্বাভাবিক জবাব হচ্ছে, এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি। কিন্তু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে যে গভীর সংযোগ তা আমলে নিলে সে আশা দুরাশাই বটে। মনে রাখতে হবে, এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে রাজনীতিবিদদের সামনে তেমন প্রণোদনা নেই। বরং বিস্তৃত ব্যবসা আস্থায় এ ধরনের পদক্ষেপের নেতিবাচক প্রভাব কেমন হতে পারে সে ব্যাপারে উদ্বেগ থাকতে পারে।
ঐতিহাসিক নজির: বিকল্প মডেলগুলোতে নজর দেয়ার আগে, ব্যবসায়ী গ্রুপ বিন্যাসকে সীমিত করা বা ভেঙে দেয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী কারণ অনুধাবন গুরুত্বপূর্ণ। করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলেও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো স্বাভাবিকভাবেই বাজারে শক্তি সঞ্চয় ও সুসংহতকরণে নেতৃত্ব দেয়। এর পেছনে প্রধান কারণ হলো রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতার মধু ভোগ করে। এদিক বিবেচনায় নিলে আরো প্রতিযোগিতামূলক ল্যান্ডস্কেপের পথ অনুসন্ধান সহজ হয়ে যায়।
বিকল্প কেমন হতে পারে তার কিছু নজির রয়েছে। ১৯৩০-এর দশকের গোড়ার দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের প্রশাসন ব্যবসায়ী গ্রুপের দিকে শ্যেন দৃষ্টি দিয়েছিল। করপোরেট স্তরবিন্যাস কতটুকু হবে, আন্তঃগ্রুপ লভ্যাংশের ওপর উচ্চ কর আরোপ, সমন্বিত কর দায়ের প্রক্রিয়ার ইতি টেনে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণকারী শেয়ারহোল্ডার হিসেবে কাজ করতে বাধা দিয়ে, সরকারি ইউটিলিটিতে ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর হস্তক্ষেপ কমানোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করেছিলেন। এ পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অতি ক্ষমতাধর ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর রাশ টানা সম্ভব হয়েছিল।
১৯৪৫ সালে জাপানের পরাজয়ের পর, মার্কিন নিয়ন্ত্রিত জাপানের প্রশাসক ডগলাস ম্যাকার্থার ‘?জাইবাতসু’ বা ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোকে বাগে আনতে একই ধরনের নীতি অনুসরণ করেছিলেন। জাপানের যুদ্ধবাদী শাসকগোষ্ঠীর অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল ওই প্রতিষ্ঠানগুলো। হোল্ডিং কোম্পানি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সঙ্গে পারিবারিক সম্পদ যুক্ত করার চর্চা নিষিদ্ধ করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো এ পদক্ষেপগুলো কেবল বাজারে কিছু গোষ্ঠীর একচেটিয়া আধিপত্যের অবসান ঘটায় তা নয়, বরং এর পেছনের ব্যবসায়িক কাঠামো ভেঙে ফেলে, যা জাপানের পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুত্থানের ক্ষেত্রেও কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
তাহলে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক, কেন আমরা এফডিআরের উচ্চাভিলাষী নীতি অনুসরণ করছি না? সহজ কথায় বলতে গেলে, এ ধরনের বড় আকারের পদক্ষেপ নেয়ার মতো রাজনৈতিক ঐকমত্য বা তাড়না নেই বাজারে। এমনকি ব্যবসায?িক গোষ্ঠীগুলোকে লাগাম দেয়ার অনেক ক্ষুদ্রতর প্রয়াসও সফলতার মুখ দেখছে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ক্রস হোল্ডিং নিষিদ্ধ করা বা সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সীমিত রাখার প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে। এখনকার প্রভাবশালী ব্যবসায?িক গোষ্ঠীগুলো প্রতারণায় অনেক ঝানু। অ্যান্টিট্রাস্ট নীতি থেকে উদগত ব্যবস্থাগুলো, সেই সঙ্গে করপোরেট সুশাসন নীতিমালায় পরিবর্তন (যা সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডারদের সুরক্ষায় করা হয়েছে) ব্যবসায?িক গোষ্ঠীগুলোর প্রবল প্রতাপ নিয়ন্ত্রণ ও বাজারে তাদের ক্ষমতা সীমিত করার ক্ষেত্রে অসম বলে প্রমাণিত হয়েছে।
অপরাপর আর কী ব্যবস্থা নেয়ার আছে? এখনো সব সুযোগ হাতছাড়া হয়নি। পদক্ষেপ নেয়ার বেশকিছু অপশন হাতে রয়েছে। যেমন উত্তরাধিকার কর পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার প্রণোদনাকে ব্যাপকভাবে হ্রাস করতে পারে। ১৯৪৬ সালে যেভাবে জাপান উত্তরাধিকার কর ৫৫ শতাংশ করার নীতিমালা গ্রহণ করেছিল। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া একই ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ করারোপের পথে গেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এ করারোপের ফলে স্যামসাং হয়তো ভবিষ্যতে পারিবারিক নিয়ন্ত্রণের গ-ি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
আরেকটি সম্ভাবনাময় বিকল্প হলো সম্পূরক করপোরেট কর আরোপ, যা সরাসরি বিজনেস-গ্রুপ-মডেলকে লক্ষ্যবস্তু করে। অন্য কথায়, যে ব্যবসাগুলো কোনো গ্রুপের সহযোগী হিসেবে কাজ করে সেগুলোকে সাধারণ করপোরেট করের বাইরেও সম্পূরক কর দিতে হবে। এ ধরনের নীতিতে সামগ্রিকভাবে করপোরেট খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
অ্যান্টিট্রাস্ট ও প্রতিযোগিতা নীতির কথা এলে এটা বলা যায়, কোনো নির্দিষ্ট শিল্পে বাজার হিস্যায় নজর রাখার যে নীতি অনুসরণ করছে নীতিনির্ধারকরা তা যথাযথ। কিন্তু অর্থনীতিতে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর একচেটিয়া আধিপত্যের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে এ নীতি। এ ব্যর্থতার পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে টেকনিক্যাল সক্ষমতা ও রাজনৈতিক প্রভাবের অভাব। যেভাবে বাজার পুঞ্জীভূত হচ্ছে তাতে আশু পরিবর্তন আবশ্যক। স্বল্পসংখ্যক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কাছে সম্পদ পুঞ্জীভূতকরণ ঠেকাতে যথাযথ পদক্ষেপের দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে ইসরায়েল। ২০১২ সাল থেকেই ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। এর মধ্যে রয়েছে করপোরেট স্তরের সংখ্যা সীমিত করা এবং আর্থিক ও অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠান একই গ্রুপের মধ্যে রাখা নিষিদ্ধ করা।
এ উদাহরণের ওপর ভিত্তি করে এশিয়ার নীতিনির্ধারকরা ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোর বাজার হিস্যার ব্যাপারে স্পষ্ট ও কঠোর সীমা নির্ধারণ করে দেয়ার চেষ্টা চালায়। যাতে তারা অন্যান্য খাতে তাদের সম্পদ ও বাজার ক্ষমতার অপব্যবহার না করে। কিন্তু আবারো প্রশ্ন হলো বিনিয়োগ কোনো একটা নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করার পর তার রাশ টেনে ধরার মতো প্রয়োজনীয় কৌশলগত সক্ষমতা ও রাজনৈতিক ইচ্ছে রয়েছে কি যথাযথ কর্তৃপক্ষের? এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের ক্ষেত্রে বলা যায়, তা নেই।
ধীরে চলো নীতি: রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা শক্তিশালী ব্যবসায?িক গোষ্ঠীগুলোরই আধিপত্য থাকবে এশিয়ার অর্থনীতিতে। কোন ধরনের ব্যবসায় এগোতে চায় তা নির্ধারণে বড় অংকের বিনিয়োগ করে এ বৃহৎ গোষ্ঠীগুলো। এর প্রধান লক্ষ্যই থাকে সরকার থেকে বিভিন্ন সুবিধা আদায় এবং বাজারে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান আরো সুসংহতকরণ। এরই মধ্যে অর্থনীতির বড় অংশেরই নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে তাদের কোর্টে। তাই বিষয়টি যে গভীর মনোযোগ দাবি করে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
কিন্তু আমরা যেমনটা আগেও দেখেছি, বৃহৎ ব্যবসায়ী গ্রুপকে ভেঙে দেয়ার বিষয়টি সমস্যা সমাধানের চেয়েও আরো অনেক সমস্যা নিয়ে আসে। এ ধরনের বড় পরিবর্তনের জন্য যে রাজনৈতিক পূর্বশর্তের উপস্থিতি জরুরি তা এখনো অনুপস্থিত। পরিস্থিতির উন্নয়নে সবচেয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত হবে বিজনেস-গ্রুপ-মডেলে অল্প অল্প করে পরিবর্তন আনা। ( দৈনিক বণিকবার্তার সৌজন্যে)লেখক: সাইমন কমান্ডার: লন্ডনভিত্তিক আলটরা পার্টনার্সের ব্যবস্থাপনা অংশীদার, আইই বিজনেস স্কুলের অর্থনীতির ভিজিটিং প্রফেসর। সল এস্ট্রিন: লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের ম্যানেজারিয়াল ইকোনমিকসের অধ্যাপক ভাষান্তর: সাবিদিন ইব্রাহিম