বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৯ অপরাহ্ন

ধৈর্যের উপকারিতা

মো: আবদুর রহমান
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০২৩

ধৈর্যের আরবি প্রতিশব্দ হলো ‘সবর’। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বিরত থাকা, সহিষ্ণুতা, দৃঢ়তা, সহ্য করার ক্ষমতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। মানবজীবনে ধৈর্যশীলতার অপরিসীম কল্যাণ রয়েছে। এটি মানুষকে প্রকৃত মানুষে পরিণত করে। তাকে সবার কাছে সমাদৃত ও প্রিয় করে তোলে।
ধৈর্য কল্যাণকর : মানুষ সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধারণ করলে তা তাদের জন্য কল্যাণকর হয়। কেননা, ধৈর্য মানুষকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন- ‘আর যদি ধৈর্য ধারণ করো, তবে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়’ (সূরা আন নিসা-২৫)। একজন মুমিনের ওপর আপতিত বিপদসমূহ তার জন্য কল্যাণই বয়ে আনে। এতে করে তার গুনাহসমূহ দূর হয়ে যায়। রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলিমের ওপর কোনো যন্ত্রণা, রোগ-ব্যাধি বা এ ধরনের কোনো বিপদ আপতিত হলে, এর দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহগুলোকে ঝরিয়ে দেন; যেভাবে গাছ তার পাতাগুলো ঝরিয়ে ফেলে’ (বুখারি-৫৭৫/১১৮)।
একজন মুমিন যেকোনো বিপদে আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে ধৈর্য ধারণ করে। মুমিনের এ বিষয়টিকে রাসূল সা: অত্যন্ত কল্যাণকর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘মুমিনের বিষয়টি কত বিস্ময়কর! তার প্রতিটি কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। যদি সে সুখ-শান্তি লাভ করে তাহলে সে মহান আল্লাহর শোকর আদায় করে। তখন তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তার ওপর কোনো বিপদ আপতিত হয়, তাহলে সে আল্লাহর ওপর ধৈর্য ধারণ করে। ফলে তাও তার জন্য কল্যাণকর হয়’ (মুসলিম-২৯৯৯)।
হাসান বসরি রা: বলেছেন, ‘ধৈর্য হলো কল্যাণের ভা-ারসমূহের অন্যতম। আল্লাহ তায়ালা কেবল তাঁর বান্দাকেই তা প্রদান করে থাকেন।’ মাইমুন রা: বলেছেন, ‘সৃষ্টিকুলের মধ্যে নবী কিংবা অন্য কাউকে যে বিশাল কল্যাণ দেয়া হয়েছে তা কেবল ধৈর্যের কারণেই দেয়া হয়েছে।’ হাসান রা: বলেন, ‘ধৈর্য প্রভূত কল্যাণের চাবিকাঠি। কেবল মহৎ ও মহানুভব ব্যক্তির হাতেই আল্লাহ এই চাবিগুচ্ছ অর্পণ করেন’ (আস-সাবর ওয়াস সাওয়াব আলাইহি-১৬)।
ধৈর্য সাফল্যের চাবিকাঠি : মানুষের ওপর আপতিত বিপদকে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে মোকাবেলা করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে ওই কাজে সফলতা দান করেন। এ কারণে ধৈর্যকে যেকোনো সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে গণ্য করা হয়। পক্ষান্তরে অধৈর্য হয়ে পড়লে ওই কাজে সফল হওয়া যায় না। এ জন্য আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতএব তুমি উত্তমরূপে ধৈর্য ধারণ করো’ (সূরা মাআরিজ-৫)। তবেই সফলতার পথ খুঁজে পাবে, দুঃখ-যন্ত্রণার পথ থেকে পরিত্রাণ পাবে। তাই বিপদ-আপদে ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করতে চায়, আল্লাহ তায়ালা তাকে ধৈর্য ধারণ করার শক্তি দান করেন। ধৈর্যের চেয়ে অধিক কল্যাণকর ও প্রশস্ততর সম্পদ আর কাউকে দান করা হয়নি’ (মুসলিম-৭০৩৮ ও বুখারি-৬৪৭০)। পৃথিবীতে যারা সুন্দর জীবন গড়েছে, তারা ধৈর্যের মাধ্যমেই তা করতে পেরেছে। অনেকে ধৈর্যের মাধ্যমে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরেও আরোহণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এ ধরনের ব্যক্তি যেমন দুঃসময়ে ধৈর্য ধারণ করে, তেমনি সুসময় এলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। ধৈর্য ধারণ করলে সুখ ও প্রশান্তি আসবেই। যেমনিভাবে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন- ‘আল্লাহ শিগগিরই কষ্টের পর স্বস্তি দেবেন’ (সূরা তালাক-৭)। এ আয়াতেও এটি স্পষ্ট, কষ্টের পর সুখ ও স্বস্তি আসবেই। কিন্তু কষ্টের সেই সময়টুকুতে ধৈর্য ধরতে পারলেই সুখ অর্জন করা সম্ভব হবে। ঈমানের পূর্ণতা লাভ : ধৈর্য ঈমানের মূল। কারণ সর্বোত্তম নেকি হচ্ছে তাকওয়া; যা ধৈর্য বা সবরের মাধ্যমে অর্জিত হয়। রাসূল সা: বলেছেন, ‘সবর বা ধৈর্য ঈমানের অর্ধাংশ’ (বুখারি ও মুসলিম)। হজরত আলী রা: বলেছেন, ‘ঈমানের সাথে ধৈর্যের সম্পর্ক হলো শরীরের সাথে মাথার সম্পর্কের মতো। মাথা ছাড়া শরীর অর্থহীন।’ এরপর তিনি উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘শুনে রাখো, ধৈর্য ছাড়া ঈমান অপূর্ণাঙ্গ।’ বস্তুত ধৈর্য মানুষের মধ্যে এমন বহু আত্মিক ও নৈতিক গুণের বিকাশ সাধন করে, যা ছাড়া ঈমানের দাবি পূরণ হয় না।
আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন : আল্লাহ সব সময় ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। এই ‘সাথে থাকা’ বিশেষ ধরনের সাহচর্যকে বোঝায়। আল্লাহ তায়ালা আরশের ওপর থেকে ধৈর্যশীল বান্দাকে সাহায্য-সহযোগিতা করার মাধ্যমে তার সাথে রয়েছেন বলে বুঝে নিতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর তোমরা ধৈর্য ধারণ করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই আছেন’ (সূরা আনফাল-৪৬)। মহান আল্লাহর এই সার্বক্ষণিক সঙ্গ ও নিকট সান্নিধ্যের সুবাদে ধৈর্যশীলরা ইহকাল ও পরকালের প্রভূত কল্যাণ অর্জন করে এবং তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নিয়ামতরাজি লাভে ধন্য হয়।
আল্লাহর সাহায্য লাভ : ধৈর্য আল্লাহর বিশেষ গুণ। পবিত্র কুরআনে স্থানে স্থানে মহান আল্লাহ নিজেকে ধৈর্যশীল ও পরম সহিষ্ণুু হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। সহিষ্ণুতা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আল্লাহই তো সম্যক প্রজ্ঞাময় ও পরম সহনশীল’ (সূরা হজ-৫৯)। সে জন্য যারা ধৈর্য অবলম্বন করে তারাই আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’ (সূরা বাকারা-১৫৩)। সুতরাং যে তার ওপর নিপতিত কষ্টের জন্য ধৈর্য ধারণ করবে না, তার জন্য প্রিয়তম প্রভুর থেকে সাহায্যও আসবে না।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, ‘তুমি যা অপছন্দ করো তাতে ধৈর্য ধারণের বেলায় তোমার জন্য কল্যাণ নিহিত আছে। আর জেনে রেখো, রবের সাহায্য কেবল ধৈর্য ধারণকারীদের সাথেই’ (মুসনাদে আহমাদ-২৮০০)। ধৈর্য এমন এক মহৎ গুণ, যা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কল্যাণের জন্য অপরিহার্য। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি, শৃঙ্খলা ও কল্যাণকর জীবনযাপনের জন্য ধৈর্যের গুরুত্ব অপরিসীম। সুতরাং আমরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করব, তাহলেই আমাদের জীবন হবে সুন্দর ও সার্থক। লেখক : সম্পাদক, মাসিক সারস, পূর্ব রূপসা, খুলনা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com