মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

ভরা মৌসুমেও উৎপাদন কম, বিপাকে খাসিয়া পানচাষিরা

আব্দুল বাছিত খান কমলগঞ্জ
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৩

বর্ষাকাল হচ্ছে খাসিয়া পান উৎপাদনের ভরা মৌসুম। সাধারণত একটি পানগাছ থেকে অন্য সময়ে যে পরিমাণ পান তোলা হয়, বর্ষা মৌসুমে সে গাছ থেকেই অন্য সময়ের তুলনায় দেড় থেকে দুই গুণ বেশি পান পাওয়া যায়। কিন্তু এ বছর খরার প্রভাবে পান উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।অন্যদিকে যে পান তোলা হচ্ছে, সেই পান আকারে অন্য মৌসুমের চেয়ে অনেক ছোট। অনাবৃষ্টির কারণে পানের উৎপাদন স্বাভাবিক সময়ের মতো বাড়েনি। এতে পান চাষের ওপর নির্ভরশীল আদিবাসী খাসিয়া পানপুঞ্জির (আদিবাসী গ্রাম) ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আদিবাসী সংগঠন খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল ও পুঞ্জি সূত্রে জানা গেছে, অন্য সময় একটি পানজুম থেকে প্রতিদিন তিন কুড়ি পান তোলা গেলেও, জুন থেকে আগস্ট এই ভরা মৌসুমে পাঁচ কুড়ি পান তোলা যায়।২০ কান্তায় এক কুড়ি। এক কান্তায় ১৪৪টি পান থাকে।এবার ভরা মৌসুমে পানের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এদিকে এবার এক কুড়ি পানের (২৮৮০টি পান) দাম অন্য বছরের মতোই ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা। কিন্তু দাম থাকলেও পান উৎপাদন কম হওয়ায় চাষিদের লাভ হচ্ছে না। মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ছোট-বড় ৭৩টি খাসি পুঞ্জি আছে। এসব পুঞ্জিতে আদিবাসী খাসি (খাসিয়া) লোকজন বসবাস করেন। বৃহত্তর সিলেটে আছে ৮৩টি পুঞ্জি।৮৩টি পুঞ্জিতে প্রায় ৩০হাজার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজনের বাস। খাসিয়া জনগোষ্ঠীর জীবিকার প্রধান উৎসই হচ্ছে খাসিয়া পানচাষ। খাসিয়া পানচাষিরা বলেন, পাহাড়ি টিলাভূমিতে পর্যাপ্ত সেচসুবিধা নেই। এই পান চাষ পুরোটাই প্রকৃতি-নির্ভর। মৌসুমি বৃষ্টির ওপর চাষিদের নির্ভর করতে হয়। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না তাঁদের। বৃষ্টি না হলে পান উৎপাদন ক্ষতির মুখে পড়ে। এ বছর খাসিয়া পান উৎপাদন অনাবৃষ্টির কবলে পড়েছে। দীর্ঘ খরার কারণে সময়মতো পানগাছের পরিচর্যা করা সম্ভব হয়নি। পানগাছ পরিচর্যার সময় হচ্ছে জুন থেকে আগস্ট মাস। এই সময় পান উৎপাদনেরও ভরা মৌসুম। অনেক দেরিতে বৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পান উৎপাদনে। চক্রাকারে একটি পান গাছ থেকে এক থেকে দেড় মাস পরপর একবার পান তোলা হয়ে থাকে। এবার সেটা সম্ভব হচ্ছে না। একটি পানগাছ থেকে পান তুলতে দুই থেকে আড়াই মাস পর্যন্ত বিরতি দিতে হবে। সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় পানের উৎপাদন কম হচ্ছে। পানচাষিরা আরও বলেন, শুধু পান উৎপাদনই কমেনি, পানপাতার আকারও ছোট হচ্ছে। পানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটছে না। বাজারে বড় পানের চাহিদা বেশি। বড় পান হলে যে দাম পাওয়া যেত, ছোট পানে সেই দাম পাওয়া যায় না। কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির পানচাষি শামিম পামথেত বলেন, খরার কারণে সঠিক সময়ে গাছে পান আসেনি।এখন পানের ভরা মৌসুম। এখনো বৃষ্টি খুবই কম হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে পুরোপুরি পান তোলা যায় না,পরিচর্যা করা যায় না। আরেক পানচাষি জেসি পতমী বলেন,পানগাছ থেকে নতুন চারা কাটাকে বলা হয় ‘বুট টাং’। এবার খুব কমই চারা কাটা হচ্ছে।এখন গাছ পরিচর্যার মৌসুম।এ মৌসুমে একটি পানজুমে (পানখেত) প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। শ্রমিকের খরচ তোলাই কঠিন হয়ে পড়ছে। যেসব গাছ রোগাক্রান্ত হয় বা মরে যায়, সেগুলো পাল্টে পুনরায় চারা লাগানো হয়। এবার অনেক জুমেই চারা রোপণ করা হচ্ছে না। এতে আগামী মৌসুমেও পান উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। গত বছর ভরা মৌসুমে খাসিয়া পানের বৃহৎ বাজার সিলেট ও সুনামগঞ্জে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা হয়েছিল। বন্যার কারণে পানের চাহিদা কমে যায়। পানের প্রকৃত দাম পাননি পানচাষিরা। এবার খরায় পান উৎপাদন কমেছে। ধারাবাহিক আর্থিক লোকসানে রয়েছেন খাসিয়া পানচাষিরা। এ ক্ষেত্রে সরকার থেকে খাসিয়া পানচাষিদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এই চাষি। খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি ও মাগুরছড়া পুঞ্জির মান্ত্রী (সমাজপ্রধান) জিডিশন প্রধান সুছিয়াং বলেন, পানচাষ খুব সতর্কভাবে ও যত্ন নিয়ে করতে হয়। অনাবৃষ্টিতে পান পরিচর্যায় দেরি হয়ে গেছে। এতে পানের উৎপাদন কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। খাসিয়ারা পানের ওপরই নির্ভর করে থাকেন। পান উৎপাদন কম হওয়ায় কমবেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com