শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন

কীটতত্ত্ববিদের অভিমত: ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের নামে দেশে তামাশা চলছে

শামছুল আরিফ:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০২৩

বাংলাদেশে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে। কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। সেই সঙ্গে ডেঙ্গু তথা মশা নিয়ন্ত্রণের নামে দেশে তামাশা চলছে। ‘কেন এই ডেঙ্গু মহামারি? পরিত্রাণ কোন পথে?’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের কয়েকজন শীর্ষ কীটতত্ত্ববিদ এমন মন্তব্য করেন। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজন করে বাংলাদেশ ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ নামের একটি সংগঠন। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব মার্গুব মোরশেদ, কীটতত্ত্ববিদ ইন্দ্রাণী ধর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুর রহমান প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। মশা মারতে তারা যে কীটনাশক প্রয়োগ করছে, তার প্রয়োগ প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে। মশা নিধনে পানিতে হাঁস ও ব্যাঙ ছাড়ানো কার্যক্রম খুবই হাস্যকর, লোক দেখানো। এসব কার্যক্রমের কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। পৃথিবীর আর কোথাও এমনটা দেখা যায় না।

মঞ্জুর আহমেদ বলেন, প্রাকৃতিক কারণে ডেঙ্গু বাড়ছে, প্রাকৃতিক কারণেই আবার কমে যাচ্ছে। মশা নিধনে সিটি করপোরেশনগুলো যেসব কর্মসূচি নিচ্ছে, সেগুলোর কোনো কার্যকারিতা নেই। সুতরাং ফগিং করলেও যা, না করলেও তা। সিটি করপোরেশন যদি এই মুহূর্তে তাদের মশা নিধন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় তাতেও যা হবে, কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও তাই হবে।
তিনি বলেন, মশা মারার জন্য যে সময়ে ফগিং দেওয়া হয়, সে সময়ে মশা তার নিজ জায়গায় থাকে না। বিভিন্ন দিকে উড়াউড়ি করে। ঠিক সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্তে মশা কামড়ায়। এজন্য ফগিংটা হওয়া উচিত সেই সময়ে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু কমাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, মশা ও মানুষের সংযোগের বিচ্ছেদ ঘটাতে হবে। এ জন্য মশারি ব্যবহার করতে হবে, মশা নিয়ন্ত্রণের স্প্রে ব্যবহার, ফুলহাতা জামা ও প্যান্ট পরা, নিয়মিত বিরতিতে জমে থাকা পানি ফেলে দেওয়াসহ পূর্ণাঙ্গ মশা মারতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল কীটতত্ত্ববিদ তাহমিনা আক্তার সংবাদ সম্মেলনে এডিস, ‘নালা-নর্দমায় এডিস মশার অস্তিত্বের যে কথা বলা হচ্ছে, তা পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক ও ভিত্তিহীন। এ নিয়ে কেউ পূর্ণাঙ্গ গবেষণা করেনি।’ এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘কিছু ব্যক্তির অবৈজ্ঞানিক কথাবার্তায় নীতিনির্ধারকেরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তাঁরা (নীতিনির্ধারক) অবৈজ্ঞানিক পন্থায় হাঁটছেন। এতে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মারা যাচ্ছেন মানুষ।’
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ও কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশে মশা নিয়ন্ত্রণের নামে তামাশা চলছে। ব্যাঙ, হরিণ আর হাঁস দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। পৃথিবীর আর কোথাও এমনটা দেখা যায় না।’
এ সময় মনজুর আহমেদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, মশা ও মানুষের সংযোগের বিচ্ছেদ ঘটাতে হবে। তা না হলে, ডেঙ্গু কমবে না। এ জন্য মশারি ব্যবহার করতে হবে, মশা নিয়ন্ত্রণের স্প্রে ব্যবহার, ফুলহাতা জামা ও প্যান্ট পরা, নিয়মিত বিরতিতে জমে থাকা পানি ফেলে দেওয়াসহ পূর্ণাঙ্গ মশা মারতে হবে।’ মশার লার্ভা নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) বিদেশ থেকে যে ব্যাকটেরিয়া (বিটিআই: বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস) আমদানি করেছে, তা আদতে বিটিআই কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন কীটতত্ত্ববিদেরা।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, বর্তমানে বলা হচ্ছে যে, দূষিত পানিতেও এডিস মশা জন্মায়। এটা পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক ও ভিত্তিহীন। এ নিয়ে কেউ পূর্ণাঙ্গ গবেষণা করেনি। এডিস মশা কখনওই দূষিত পানিতে জন্মায় না। এছাড়াও বলা হচ্ছে তিন দিনের জমা পানিতে এডিস মশা জন্মায়, কিন্তু বিষয়টি তা নয়। এডিস মশা জন্মাতে অন্তত সাতদিন সময় লাগে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com