বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন

মৃত্যুপুরী নিউইয়র্কে উদ্বেগ-আতংকে বাংলাদেশিরা

খবরপত্র অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০২০

আমেরিকায় যত বাংলাদেশির  বসবাস তার বড় অংশই থাকেন নিউইয়র্কে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে সেই নিউইয়র্কই এখন করোনার এপি সেন্টার! এটি যেনো মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। উদ্বেগ -আতংকে আছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের তথ্য মতে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিউইয়র্কে এ পর্যন্ত মারা গেছেন পঞ্চাশের অধিক বাংলাদেশি। কনসাল জেনারেল ডা. সাদিয়া ফয়জুন্নেছার ভাষ্য মতে, কমিউনিটি মারফত আক্রান্ত এবং মৃত্যুর তথ্য পান তারা।  যুক্তরাষ্ট্র সরকার পরিবার ছাড়া অন্যদের কোনো রোগী বা রোগ সম্পর্কে তথ্য দেয় না। করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের তথ্য পাওয়া আরও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ফলে বেসরকারী তথ্য কম-বেশি হতে পারে। ডা. সাদিয়া এটা স্বীকার করেন যে অবস্থা মোটেও ভাল নয়।

বিশেষ করে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। বিবিসিও তাই বলছে। তাদের রিপোর্ট মতে, বিদেশে যত বাংলাদেশি করোনা আক্রান্ত  তার বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রে, প্রধানত নিউইয়র্কে।  তাদের হিসাব মতে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে ৬৩ জনের বেশি বাংলাদেশি মারা গেছেন। যার  প্রায় ৮৫ ভাগই নিউইয়র্কে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনও তাই বলছেন। তার মতে, করোনায় দুনিয়ার দেশে দেশে আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষত: নিউইয়র্কের সংখ্যাটা সবচেয়ে উদ্বেগজনক।

দুনিয়াজুড়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে নিউইয়র্ক নিয়ে উদ্বেগ, তখন মানবজমিন জানতে চেষ্টা করে সেখানে থাকা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা কেমন আছেন? সাংবাদিক, চিকিতসক, নার্স, সাধারণ শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবির সঙ্গে কথা হয়েছে। এই ক’দিনে পেশাগত প্রয়োজন ছাড়াও আত্মীয়তা এবং পূর্ব পরিচয়ের সুবাধে যুক্তরাষ্ট্রে অনেকের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। এমনকি নিউইয়র্কের শোচনীয় অবস্থা জানার পরও গত সপ্তাহে স্টেট ডিপাটমেন্টের ভাড়া করা স্পেশাল ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া ২৬৯ জন আমেরিকান নাগরিকের দলভুক্ত এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানের সঙ্গেও কথা হয়েছে  ওই প্রতিবেদকের। সবাই করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। যে যার মত করো সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। তবে বেশিরভাগই জানিয়েছেন তারা সেল্ফ কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। কিন্তু একটা বিষয়ে তাদের বক্তব্য ছিল খুবই তাতপর্যপূর্ণ। তা হলো- নিউইয়র্কের চিকিতসা ব্যবস্থা। এ নিয়ে তারা বেশ আশাবাদি। বলেন, ব্যক্তিগত সুরক্ষার সমুদয় চেষ্টার পরও যদি দুর্ভাগ্যজনকভাবে কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন, তাহলে চিকিতসা পাবেন এতে দ্বিধা নেই। নিউইয়র্কে চতুর্থ বৃহত্তম বরো সবচেয়ে জনবহুল এলাকা দ্য ব্রংক্‌সের অন্যতম বড় ( ২০০০ বেডের) মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল মন্টিফয়ের এ কর্মরত মিজ চৌধুরীর মতে, প্রতি মিনিটেই নতুন রোগী আসছে জানিয়ে তার হাসপাতালে। সর্দি কাশি হলেই লোকজন হাসপাতালে ছুঁটছেন। তবে করোনা রোগীই বেশি। হাসপাতালে ভর্তি অন্য জটিল রোগীর মধ্যেও করোনার সংক্রমণ ঘটছে। এতে রোগী মারা যাওয়ার সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, এখন আর মর্গে জায়গা নেই। লাশ রাখার জন্য লরি আনা হয়েছে। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের আদি বাসিন্দা মিজ চৌধুরীর বাসাও মন্টিফয়ের হাসপাতাল এলাকায়। ব্যক্তিজীবনে তিনি দুই সন্তানের জননী। তার মতে, হাসপাতালে আমরা যারা জেনারেল সেকশনে চাকরি করি তাদের পারসোনাল প্রটেকশন খুব একটা নেই। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি সব সময়। কখন যে কাজে যাওয়া-আসার পথে সংক্রমিত হয়ে পড়ি। আমাকে নিয়ে আমার দেশে এবং নিউইয়র্কে থাকা স্বজনরাও চিন্তিত। তিনি বলেন, আমার কোনো আত্মীয়ের এই পরিস্থিতিতে ঘরের বাইরে যেতে হচ্ছে না। এমনকি আমার স্বামীও কাজ বন্ধ করে সেল্ফ কোয়ারেন্টিনে আছেন প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে। কিন্তু হাসপাতালে চাকরির কারণে আমাকে প্রতিদিনই বাইরে যেত হয়। আমি নিজের চোখে দেখছি করোনা রোগীরা কতটা সেবা পাচ্ছেন। এটুকু বলতে পারি করোনা ইস্যুতে দুনিয়ার যে কোনো দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রর বিশেষত নিউইয়র্কের অবস্থা শোচনীয় বটে, কিন্তু এখানে কেউ অবহেলায় বা বিনা চিকিতসায় মারা যাচ্ছে না, এটা নিশ্চিত। নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশি সাংবাদিক মনির হায়দারও বলছিলেন, নিউইয়র্ক সিটিতে সাড়ে ৭ হাজার আইসিইউ বেড আছে। করোনার এই চরম মুহুর্তে সাড়ে ৩ হাজারের মত ব্যবহার হয়েছে। বাকীটা এখনও অব্যবহৃত। এ অবস্থায়ও নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এবং গভর্ণর কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে করোনা মোকাবিলায়  আরও প্রস্তুতি বিশেষত ইকুইপমেন্ট, হাসপাতাল ফ্যাসিলিটিজ বাড়ানোর জন্য। মনির বলেন, প্রায় এক মাস ধরে নিউইয়র্ক করোনার বিরুদ্ধে লড়ছে। এ পর্যন্ত ১ লাখ ২৩ হাজার রোগীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৪ হাজার ১ শ ৫৯। আমাদের পরিচিত অনেকে মারা গেছেন, অনেকে আক্রান্ত। কিন্তু কেউ চিকিতসা পাচ্ছেন না বা পাননি- এমন অভিযোগ এখনও শুনিনি। দৈনিক মানবজমিনের সূচনা থেকে বহু বছর মানবসম্পদ বিভাগে কর্মরত ছিলেন, বর্তমানে নিউইয়র্কে পরিবার নিয়ে বসবাসকারী আশরাফুল নওশাদ জানান, জ্যাকসন হাইর্টস এলাকার অনেক পরিচিত মুখ মারা গেছেন। সাংবাদিক এ হাই স্বপন, হলুদ ক্যাব চালক মনিরুল হুদা এবং ক্যান্ডির মালিক মানিক মিয়াকে স্মরণ করে তিনি বলেন, জ্যাকসন হাইটস এর বনফুল গ্রোসারির একজন মিট কাটার এবং সোনার বাংলা সেলুনের সত্বাধিকারীর অবস্থা সংকটাপন্ন। ওই এলাকায় আক্রান্ত অনেকে, ফলে গোটা এলাকাই নীরব হয়ে গেছে। তিনি নিজে ওই এলাকায় বাজার করতেন, আড্ডা দিতেন জানিয়ে নওশাদ বলেন, ওষুধ ক্রয় কিংবা বাজার করা ছাড়া এখন কেউই আর ঘর থেকে বের হচ্ছে না। জ্যামাইকার আল রাইয়্যান মসজিদের দ্বিতীয় খতিব মাওলানা নজরুল ইসলাম জানান, ৩ সপ্তাহ ধরে তার মসজিদ তালাবদ্ধ। সবাই ঘরেই ইবাদত বন্দেগী করছেন। জুম’আও ঘরেই আদায় করেছেন তারা। খতিব মিস্টার ইসলামের মতে, এই মহামারিতে বাঁচতে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনার বিকল্প নেই। তবে স্ব স্ব রাষ্ট্র ও সরকারের নির্দেশনা মানাও জরুরি। তার মতে পরিস্থিতি বিস্তারিত পর্যালোচনা করে ঐক্যমতের ভিত্তিতে যে কোনো সিদ্ধান্ত আসে। এটা মানা সব নাগরিকের অবশ্য কর্তব্য। সেটা যুক্তরাষ্ট্র বা বাংলাদেশ যেখানেই হোক না কেন। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৯ শ পঁচিশ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে রোববার পর্যন্ত দেশটিতে মোট ৯ হাজার ৬ শ ৬৪ জন মারা গেছেন। তবে ১৮ হাজার ২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সূত্র: মানবজমিন, এইচ আর/ খবরপত্র

 

 




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com