বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনা করে কোরাআন খতম ও সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে ছাগল জবাই করে মাদরাসার এতিম ছাত্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার মোহাম্মদপুরে একটি মাদরাসায় দুটি ছাগল জবাই করে সাদকা হিসেবে এ গোশত বিতরণ করা হয়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর উদ্যাগে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী কোরআন তেলাওয়াত করা হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আব্দুস সালাম, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: রফিকুল ইসলাম, বিএনপির সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড.মোর্শেদ হাসান খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুল ইসলাম, ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদ হক প্রমুখ।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের রোগ মুক্তি ও সুস্থতা কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। এছাড়াও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্বাস্থ্য কামনা করেও বিশেষ দোয়া করা হয়।
খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলা চলবে: বহুল আলোচিত নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত। এর ফলে এই মামলা চলতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। গতকাল বুধবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
রায়ের শুনানিতে আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী এবং বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। একই বেঞ্চ গত সোমবার আলোচিত মামলায় অভিযোগ গঠন বাতিলের বিষয়ে করা আবেদনের পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি খন্ডন করে নানা দিক নিয়ে শুনানি শেষ করা হয়। গত ৯ই আগস্ট থেকে এই আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। পরে গত ১৬ই আগস্ট খালেদা জিয়ার আবেদনের পরবর্তী শুনানির জন্য গত ২২শে আগস্ট দিন ধার্য করেন আদালত। তার পরের দিন ২৩শে আগস্ট শুনানি করেছিলেন হাইকোর্ট। এরই ধারাবাহিকতায় ২৮ আগস্ট ফের শুনানি করে শেষ আদেশের দিন ঠিক করেন।
গত ১৯শে মার্চ কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার নবম (অস্থায়ী) বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালত এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর আদেশ দেন। এরপর গত ১৭ই মে নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন খালেদা জিয়া। এর আগে অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ১৭ই মে রিভিশন আবেদনটিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের করা দবিতে বলা হয়, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে দাবি করে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুল জার্রির জানানো হয় আবেদনে। একই সঙ্গে গত ১৯ মার্চের অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চাওয়া হয়।
গত ১৯ মার্চ নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্তের পর ২০১৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনে দুদক। একই মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
আসামিদের মধ্যে গিয়াসউদ্দিন আল মামুন বর্তমানে কারাগারে আছেন। নাইকো রিসোর্সেস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সাবেক প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ পলাতক রয়েছেন। বাকিরা জামিনে আছেন। মামলাটি এখন সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলার আসামিদের মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
দুদকের করা অন্য দুই মামলায় (জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট) ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সাজাভোগ করছেন খালেদা জিয়া। তবে বর্তমানে তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে অন্তর্র্বতীকালীন জামিনে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।