কলেজ ফান্ডের অর্থ লোপাট, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়মিত কলেজে উপস্থিত না থাকাসহ ডজনখানেক অভিযোগ উঠেছে নওগাঁ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল শাফায়ত শামীমের বিরুদ্ধে। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে গত বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও নওগাঁ জেলা প্রশাসক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ডিপ্লোমা ইন হোমিওপ্যাথি মেডিসিন এন্ড সার্জাারি (ডিএইচএমএস) পেশাজীবী পরিষদের ২৫ সদস্যের স্বাক্ষরিত ওই লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটি ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই আব্দুল্লাহ আল শাফায়ত শামীম কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। কলেজের অনুমোদনের পর ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৮৪৭জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তি ও মাসিক বেতন বাবদ জমা নেওয়া টাকা থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। এছাড়া কলেজ ভবন নির্মাণের নামে প্রত্যেক শিক্ষক কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ও প্রত্যেক কর্মচারীর কাছ থেকে ২ লাখ করে টাকা আদায় করা টাকা ও শিক্ষক কল্যাণ পরিষদের নামে সংগ্রহ করা প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মাসাৎ করেন আব্দুল্লাহ আল শাফায়াত। কলেজ ফান্ডের অর্থ লোপাটের বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ করা সত্ত্বেও কলেজ পরিচালনা পর্ষদ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, স্বজনপ্রীতির অভিযোগও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল শাফায়াতের বিরুদ্ধে। কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড অনুমোদিত নিয়োগ পেলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজ ফান্ড থেকে দেওয়া বেতন-ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য করে থাকেন। তাঁর স্বজন ও পছন্দের শিক্ষক কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পেলেও অনেক শিক্ষক-কর্মচারীর ৪৪ থেকে ৫৭ মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের এসব অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও বেতন-বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেও ওইসব শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হয়রানি, চাকরিচ্যুতি করা ও নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়।
অভিযোগকারী ও কলেজ সংলগ্ন নওগাঁ পৌরসভার পিরোজপুর এলাকার বাসিন্দা রায়হান আলী বলেন, স্বজনপ্রীতি আর অনিয়ম কাকে বলে তার চূড়ান্ত উদাহরণ হলো নওগাঁ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তাঁর বাবা জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার বাসিন্দা হলেও এবং কলেজের নামে একখন্ড জমি দান না করলেও তাঁকে কলেজ পরিচালনা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য করা হয়েছে। এছাড়া তাঁর শালিকা হাফিজা আক্তার ও ভায়রা রুহুল আমিনকে প্রভাষক হিসেবে চাকরি দিয়েছেন। এছাড়া তাঁর চাচা শ^শুরের ছেলে কামরুল ইসলাম কলেজের কলেজের প্রশাসনিক শাখার একটি পদে চাকরি করেন। বলা যায়, নওগাঁ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। অহিদুজ্জামান নামে নওগাঁ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এক প্রভাষক অভিযোগ করেন, কলেজের প্রতিষ্ঠার সময় থেকে তিনি ওই কলেজে প্রভাষক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কলেজ অনুমোদনের পর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত ৬৬ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে তাঁর। বার বার বকেয়া বেতন চেয়ে আবেদন করেও তা পাননি। উপরোন্তু চলতি মাসের জুন মাসে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাঁকে জানান, তাঁকে কলেজ কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার করেছে। তাঁর কলেজে আসার প্রয়োজন নেই। অহিদুজ্জামান বলেন, আমাকে যে বহিষ্কার করা হয়েছে তাঁর কোনো কাগজ এখন পর্যন্ত আমি পাইনি। অথচ আমাকে কলেজে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ৭ লাখ টাকার ওপরে বকেয়া বেতন-ভাতা পাওনা রয়েছে সেটাও দেওয়া হচ্ছে না। এ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আমি মানবেতর জীবন-যাপন করছি। অহিদুজ্জামানের মতো আরও চার শিক্ষক ও তিন কর্মচারীকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বহিস্কার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল শাফায়াত শামীম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী অনুমতি ছাড়াই দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকায় কলেজ কলেজ পরিচালনা পর্ষদ তাঁদের বহিষ্কার করেছেন। বহিষ্কৃত শিক্ষক-কর্মচারীরা এখন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস,এম জাকির হোসেন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে তার সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।