প্রথম দিকে এ বছরের মার্চ-এপ্রিলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবির)দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সাবেক রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের মেয়াদ গত এপ্রিল মাসে শেষ হওয়ায় সমাবর্তনের অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেয় জবি প্রশাসন।নতুন রাষ্ট্রপতি আসলে খুব শীগ্রই সমাবর্তন আয়োজন করার কথা থাকলেও তার আর হচ্ছেনা চলতি বছরে। কিন্তু নতুন রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর মো. সাহাবুদ্দিন শপথ নেয় গত ২৪ এপ্রিলে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের যোগদানের প্রায় ছয় মাস শেষ হলেও দ্বিতীয় সমাবর্তন নিয়ে কোনো প্রস্তুতি নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের। সমার্বতন নিয়ে কথা উঠলে কিংবা প্রশাসনের কাউকে প্রশ্ন করা হলে বরাবরই এড়িয়ে যান বিষয়টি। এ-র ফলে দ্বিতীয় সমাবর্তন নিয়ে অনিশ্চয়তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ হাজার শিক্ষার্থী।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী এবং তৎকালীন শাখা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রথম সমাবর্তনের আয়োজন করে। যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লগ্নের ১৫ বছর পরে ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়।
দ্বিতীয় সমাবর্তনে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের নিয়ে এ সমাবর্তন আয়োজনের কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়াও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতকের ফলাফল প্রকাশ হওয়া সাপেক্ষে তারাও সমাবর্তনে অংগ্রহণ করতে পারবেন বলে জানানো হয়। এদিকে সমার্বতন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, ‘প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত যথা সময়ে সমাবর্তনের আয়োজন করা। তাহলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের সুন্দর সমাপ্তি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে প্রাণ চঞ্চলতা ফিরে আসে।’
সমাবর্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি কামরুল হুসাইন বলেন, ‘সমাবর্তন একটি উৎসব, প্রত্যেক শিক্ষার্থী চায় সমাবর্তন নিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করবে কিন্তু এক্ষেত্রে দুর্ভাগা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের । দাবির প্রক্ষিতে ২০২০সালে প্রথম সমাবর্তন হয়, এরপর ছন্নছাড়া। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ। অবিলম্বে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় সমাবর্তন আয়োজন ও প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষে সমাবর্তন আয়োজনের নিশ্চয়তার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রগতিশীল হওয়া অবশ্যাম্ভাবী হয়ে পড়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি সেই জানুয়ারির শুরুতে শুনেছি মার্চের সমাবর্তন হবে কিন্তু এখন দেখি এ বছর শেষ হবার পথে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কখনোই সমাবর্ত নিয়ে আন্তরিকতা দেখায়নি। এর আগের সমাবর্তন ছাত্রলীগ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলস্বরূপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বছরের শেষের দিকে কিংবা জানুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখনতো লাগাদার রাজনৈতিক কর্মসূচি লেগেই আছে তাহলে আমাদের সবাবর্তন টা কবে হবে বুঝতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি রাজনৈতিক ভয়ে নাকি নির্বাচনকে সামনে রেখে সমাবর্তন আয়োজন করতে চাচ্ছে না বিষয়টি নিয়ে সন্ধিহান আছি। নাকি সামনে নির্বাচন বলে সবাই নিশ্চুপ হয়ে আছে। আমরা চাই দ্রুততম সময়ে আমাদের সমাবর্তন আয়োজন করুক কারণ অনেকেই প্রথম সমাবর্তন পাইনি কিংবা উপস্থিত হতে পারেনি তখন।
অন্যদিকে সমাবর্তনের স্থান ধূপখোলা মাঠে নাকি কেরানীগঞ্জে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে হবে তা নিয়েও এখনো সংশয়ে রয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোনোকিছু বলতে রাজি নন। সমাবর্তন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হককে সামনাসামনি কিংবা মুঠোফোনে প্রশ্ন করা হলে তিনি বরাবরের মত বিষয়টি এড়িয়ে যান। এই নিয়ে কোন কথা বলতে রাজি নন উপাচার্য।
যদিও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক অসুস্থ থাকার ফলে বিদেশের চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। এজন্য সমাবর্তন নিয়ে আরও দুশ্চিন্তে বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর শেষ করা এসব শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য) কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,’ সমাবর্তন নিয়ে এই মুহূর্তে আমি কোন ধরনের কথাা বলতে চাচ্ছি না। উপাচার্য মহোদয় সুস্থ হয়ে দেশে ফিরলে তখন জানতে পারবে। ‘