প্রতিবন্ধী হাট মালিকের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত স্থানে থাকা ফুলের হাট কেড়ে নিয়ে ব্যক্তিগত জমিতে হাট বসালেন বালিয়াডাঙ্গা ফুল বাজার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা বাজারে জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পরিচালনায় ফুল বিপণন কেন্দ্রটি বাংলা ১৪৩১ সনের জন্য উপজেলা প্রশাসন দরপত্র আহ্বান করে। সরকারি নিয়ম মেনে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত হাতেম আলী বেগের ছেলে দুই পা হারা শারীরিক প্রতিবন্ধী আব্দুর রাজ্জাক বেগ চলতি ইংরেজি ২০২৪ সালে ২ লাখ ২০ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ফুলের হাটটি পান। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী হাট পাওয়ার পর তিনি সোনালী ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখায় ৬৬ হাজার ১১৬ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেন। অপরদিকে, ৮ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে ১২.০২.৪৪০০.২০৫.১৪.১৭৫.২৩-২৭৩ নং স্মারকে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ফুল বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা কমিটির সুপারিশক্রমে শারীরিক প্রতিবন্ধী আব্দুর রাজ্জাককে সপ্তাহের প্রতিদিন বেলা ১২ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত চলা ফুলের এই হাটটা এক বছরের জন্য ইজারা প্রদান করেন জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আদেশ পেয়ে আব্দুর রাজ্জাক ফুল বিপণন কেন্দ্রের ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেন। হঠাৎ ১৪ মে বালিয়াডাঙ্গা ফুল বাজার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান, মহিদুল খান ও মতিয়ার সহ কয়েকজন মিলে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত স্থানের ফুলের হাটটি জোরপূর্বক স্থানান্তর করে দাঁতপুর সড়কে কাঠকাটা মিলের সাথে ফজলুর রহমানের নিজ জমিতে নেন। সেখানে হাটে আসা ফুল চাষী ও ব্যবসায়ীদের নানারকম হুমকি-ধামকি প্রদান ও প্রলোভন দেখিয়ে ফজলুর রহমান নিজে হাটটি পরিচালনা করছেন। হাট সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা প্রচার হওয়ায় এলাকার ফুল চাষী ও ব্যাবসায়ীরা বালিয়াডাঙ্গার ফুল বিপণন কেন্দ্রে না যেয়ে ফজলুর রহমানের ব্যক্তিগত হাটে ফুল নিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে সরকারি ফুল বিপণন কেন্দ্রটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এতে করে খাজনা আদায় করতে না পারায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন হাট ইজারাদার। ভুক্তভোগী হাট মালিক প্রতিবন্ধী আব্দুর রাজ্জাক অবশেষে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট গত ১৫ মে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এ ব্যাপারে জানতে আব্দুর রাজ্জাকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই ঘটনা আমি জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা এবং কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান স্যারকে মুঠোফোনে জানাই। ইউএনও স্যার আমাকে তার অফিসে যেতে বলেন। অফিসে যেয়ে স্যারের সাথে কথা হলে আমাকে লিখিত অভিযোগ করতে বলেন এবং ফুলের হাটটি পুনরায় যথাস্থানে ফিরিয়ে আনতে ফুল চাষী ও ব্যবসায়ীদের বোঝাতে এমনকি প্রয়োজনে পেশী শক্তি প্রয়োগের পরামর্শ দেন। পেশীশক্তির ব্যাপারে স্যারকে আমি জানাই, আমার দুইটি পা নেই আমি অক্ষম মানুষ, আমি কিভাবে পেশী শক্তি ব্যবহার করব। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বালিয়াডাঙ্গা ফুল বাজার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অভিযুক্ত ফজলুর রহমানের নিকট ব্যক্তিগত জমিতে জোরপূর্বক ফুলের হাট স্থানন্তরের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের খাজনা নিয়ে কোন সমস্যা নেই। হাট মালিক এবং কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মিলে মার্কেটের একটি ঘরের তালা লাগিয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ দেখা দেয় ফুল চাষী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তাদের সিদ্ধান্তের আলোকেই সরকারের নির্ধারিত ফুল মার্কেট ছেড়ে আমার জমিতে ফুলের হাট বসানো হয়েছে। এখানে কারোর সাথে জোরজুলুম করা হয়নি। ঝিনাইদহ জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, ফুলের হাট নিয়ে একটি ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই ঝামেলা মিটে যাবে। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, স্থানীয় ফুল চাষী, ব্যবসায়ী, হাট মালিক এবং জেলা কৃষি বিপণন অফিসের সাথে বিরোধের জেরেই হাট নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি বিপণন কর্মকর্তা ইতিমধ্যে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছেন। আমিও ব্যাপারটি নজরে রেখেছি। আশা করছি সমস্যার সমাধান দ্রুতই হবে।