মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার কনকসার গ্রামের বটতলা মোড়লবাড়ীর সোহগের স্ত্রী অন্ত:স্বত্তা সপ্না আক্তারের (২৩) কে ছয় মাসেও উদ্ধার করতে পারেনি থানা পুলিশ। থানা পুলিশের অবহেলায় নিখোঁজ হওয়ার ছয় মাস অতিক্রম হলেও তার কোন হদিস মিলাতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন। শুক্রবার মাওয়া ঘাটে গৃহবধু সপ্না আক্তারের মা বাবা ও ভাইয়ের সাথে আলাপকালে এমন তথ্য পাওয়া যায়। জিবীত কিংবা মৃত্যু কোনভাবেই সপ্নাকে উদ্ধার না করতে পারায় পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ে ধু¤্রজাল সৃষ্টি হয়েছে লৌহজং উপজেলায়। নিখোঁজ স্বপ্না আক্তারের মা রাশিদা হাওলাদার জানান, আমার মেয়ে ৫মাসের অন্ত:স্বত্তা ছিলো। তার একটা ৫ বছরের আয়শা নামের মেয়ে রয়েছে। আমার স্বামী আব্দুল সালাম হাওলাদার একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতা। মেয়ে হারিয়ে এখন পাগল প্রায়। কাজকর্মেও মন বসে না তার। মা রাশিদা জানান, আমার নাতিন আয়শা(৫)কে মেয়ের জামাই সোহাগ মেয়ে স্বপ্না নিখোঁজ হওয়ার পর আমাদের বাড়িতে দিয়ে যায়। তখন আমার নাতিন আয়শা বলে বাবা দা দিয়ে মাকে জবাই করে মেরেছে। এর পর পুন:রায় আমার নাতিনকে সোহাগ নিয়ে লুকিয়ে রেখেছে। এখন পর্যন্ত আমার নাতিনকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে পারিবারিকভাবে কনকসার গ্রামের চুন্নু মোড়লের ছেলে সোহাগের সাথে রানিগাঁও গ্রামের আব্দুল সালামের মেয়ে সপ্না আক্তারের ১লাখ টাকা কাবিনে বিবাহ হয়। বিবাহের ৫ বছরের মাথায় নিখোঁজ হন সপ্না আক্তার। মা রাশিদা বেগম আরো জানান, মেয়ের বিবাহের ৫বছরের মধ্যে অনেক বার যৌতুক চেয়ে সপ্নাকে চাপ দেয়। যৌতুক না দেওয়ায় অনেক নির্যাতন করে সোহাগ। পরবর্তীতে তার চাহিদা মাফিক যৌতুক না দেওয়ায় আমার মেয়েকে হত্যা করে গুম করে ফেলেছে সোহাগ। মেয়ের হত্যাকারীকে পুলিশ রিমান্ডে না নিয়ে জামিনের সুযোগ করে দিয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই কামরুজ্জামান নিখোঁজ সপ্নার স্বামী সোহাগকে জামিন করিয়ে মেয়ের বাবা মা ও ছেলেকে ৭বছরের সাজা দিয়ে দেওয়ারও হুমকি প্রদান করেছেন। এমন অভিযোগ করেেেছন মেয়ের মা, বাবা এবং প্রতিবেশী মোতালেব ঢালী। মা আরো জনান, থানায় একটি জিডি করেছি। পরবর্তীতে মামলা করতে গেলে তার মামলা না নিয়ে উল্টো হুমকি ধামকি প্রদান করে। পরবর্তীতে কোর্টে ৫নভেম্বর রাশিদা বেগম বাদী হয়ে সোহাগ (৩৬), সুজন (৪০) পিতা চুন্ন মোড়লের বিরুদ্ধে ৭/৩০, নারী ও শিশু নিযাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত/২০০৩) অপহরণ ও সহায়তা করার অপরাধে মামলা করেন। মামলাটি থানায় এফআইআর ভূক্ত কার জন্য নারী ও শিশু নিযাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মুন্সীগঞ্জের বিচারক ফাইজুন্নেছা। ০৪ নভেম্বর ২৪ইং তারিখে লৌহজং থানায় আদালতের নির্দেশে ৪নং মামলাটি রুজু হয়। এ বিষয়ে সোহাগের সাথে তার সেলফোনে জানান, ৩মাসের অন্ত:সত্মা স্বীকার করেন। তবে আমার স্ত্রী একজন টিকটকার। স্ত্রী সন্তানের খাবারের জন্য বাড়ির বাইরে যায়। কিন্তু সে আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। আমার ছোট বাচ্চাটি মায়ের হত্যার বিষয়টি যেভাবে বলেছে তা আমার শ্বাশুড়ী শিখিয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা লৌহজং থানার এস.আই কামরুজ্জামান জানান, আসামীকে গ্রেফতার করেছি কিন্তু কোন রিমান্ড চাইনি। বাদীকে কোন ধরনের হুমকি প্রদান করিনি। বাদী যা বলেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলেছে। তবে সপ্নাকে উদ্ধারের জন্য উভয় পরিবারকেই বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করেছি। হয়তবা সেটাই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আকারে বাদী বলেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই কামরুজ্জামান নিজে থেকে সাংবাদিককে ফোন করে আগামী ধার্য তারিখে বিমান্ড আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন। শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ তিনি এলাকার বিভিন্ন তদবির নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। সাংবাদিকদের সাথে দেখা করারও সময় তার নেই। ছয় মাস ধরে নিখোঁজ হওয়া সপ্নার কথা জিজ্ঞাসা করলে বলেন নিখোঁজ হওয়া সপ্না কোন মোবাইল ব্যবহার করেন না। স্বামী সোহাগ বাড়িতেই থাকেন সে বা তার ভাই সপ্নাকে অপহরণ বা গুম করেননি। কিভাবে নিশ্চিত হলেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন কয়েক দফা সোহাগের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। সোহাগের বাড়ির প্রতিবেশী সকলেই বলেছে সপ্না একা একা বাড়ি থেকে চলে গেছে। পরবর্তীতে তিনি বলেন নিখোঁজ হওয়া সপ্নাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।