গবেষণায় দেখা যায়, নৈতিক মূল্যবোধ মানুষের আচরণের অন্যতম প্রভাবক। অল্প বয়সে নীতিশিক্ষা মানুষকে অপরাধমূলক কর্মকা- থেকে বিরত থাকতে প্রভাবিত করে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা করে আমরা দেখতে পাই, আমাদের দেশে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে নীতিশিক্ষা সীমিত পরিসরে প্রদান করা হয়। অথচ, নানান ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-কে নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করার জন্য আইনের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। আর যেহেতু শৈশব ও কৈশোরে শিক্ষার্থীর মন থাকে কাদামাটির মতো, তাই ঐ সময় তার জন্য নীতিশিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারলে সামগ্রিকভাবে তার জীবনের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে সমাজ ও রাষ্ট্র উপকৃত হবে। সাধারণত মানুষের অসৎ ও আইনবহির্ভূত আচরণকে দুর্নীতি বলে। বর্তমানে আমাদের দেশে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সর্বক্ষেত্রেই দুর্নীতি অন্যতম সমস্যা এবং সুশাসনের জন্য প্রধান অন্তরায়। এখানে দুর্নীতি বহুমাত্রিক রূপ পেয়েছে ও সমাজ-রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে।
শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, অফিস, আদালত, গণমাধ্যম সর্বত্র লাগামহীন দুর্নীতি দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। ক্ষমতাবান মানুষেরা বেশি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে এবং সাধারণ দরিদ্র মানুষ ভুক্তভোগী হচ্ছে। এই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও দমনের জন্য দেশে অনেক সরকারি সংস্থা কাজ করলেও ক্রমেই তা বেড়ে চলছে। আমাদের দেশের পত্র-পত্রিকা, ইলেকট্রোনিক মাধ্যমে প্রায়শই দুর্নীতির নানান খবর প্রকাশিত হয়। এমনকি বিদেশি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রোনিক সংবাদ মাধ্যমেও বাংলাদেশের দুর্নীতি সংক্রান্ত সংবাদ প্রচারিত হয়। বিভিন্ন সংস্থা প্রতি বছর দুর্নীতির ওপর রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে। বাংলাদেশে দুর্নীতির মাত্রা কেমন, সারা বিশ্বে দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় সে বিষয়ে। এসব রিপোর্ট থেকে আমরা তথ্য জানতে পারি। যদিও এসব রিপোর্ট নিয়ে সরকারি পক্ষ আপত্তি করে। অন্যদিকে এসব রিপোর্টের প্রতি সিভিল সোসাইটিসহ সাধারণ মানুষের সমর্থন লক্ষ করা যায়। যাই হোক, দুর্নীতির মাত্রা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে দুর্নীতি যে একটি ভয়াবহ সমস্যা, সে বিষয়ে সকলেই একমত। দুর্নীতির মতো এমন অপরাধের কারণ অনুসন্ধানের জন্য মানব প্রকৃতির বিশ্লেষণ অতীব জরুরি। এই অপরাধমূলক প্রবণতার পশ্চাতে ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রভৃতি কারণ থাকতে পারে, যা অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। এজন্য একজন ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক গঠন কাঠামো নির্মাণে নৈতিক শিক্ষার গুরুত্বও যাচাই করা উচিত।
প্রশ্ন হচ্ছে এই কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রম কি আজকের বাংলাদেশের জন্য পর্যাপ্ত? বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বক্ষেত্রে অগ্রগতি দৃশ্যমান। বিজ্ঞানের জয়জয়কারের এই যুগে আজ বিজ্ঞানীরাও আতঙ্কিত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন এই অগ্রগতির ভবিষ্যত নিয়ে। কারণ, তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার ও অনৈতিক ব্যবহার হচ্ছে, যার ফলে মানুষের জীবন হয়ে পড়েছে নিরাপত্তাহীন। অন্যদিকে, মানুষের অর্থনৈতিক বিকাশ যু দ্রুত হচ্ছে তার চেয়ে দ্রুত ও সর্বব্যাপী রূপ নিচ্ছে দুর্নীতি-অন্যায়-অনিয়ম। একটি সমাজের টেকসই বিকাশের জন্য এসবই প্রতিবন্ধক। এই বাধা দূর করার জন্য প্রয়োজন যথোপযুক্ত শিক্ষা। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীর নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো বিষয় মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে লক্ষ করা যায় না। ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা নামের বিষয়গুলোতে মূলত ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা আলোচনা করা হয়েছে। সব ধর্মের মানুষের জন্য প্রযোজ্য নৈতিক শিক্ষা এখানে নেই। বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য ও আনন্দপাঠ পাঠ্যবিষয়সমূহে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু গল্পে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার উপাদান রয়েছে, যা একেবারে অপ্রতুল। অর্থাৎ নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কিত কোনো স্বতন্ত্র বিষয় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাক্রমে নেই।
ব্যক্তির চরিত্রবান হবার ক্ষেত্রে স্কুল পর্যায়ে নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এখন প্রশ্ন হলো, স্বতন্ত্র হিসেবে ‘নীতিশিক্ষা’ পঠনপাঠনের যৌক্তিকতা কতটুকু? এটা সর্বজনবিদিত যে, শৈশব ও কৈশোর কাল একজন ব্যক্তির মনন ও চরিত্র গঠনের জন্য উপযুক্ত সময়। তাই শিক্ষার্থীকে এই সময় নৈতিকতা সম্পর্কে সঠিক ও পর্যাপ্ত শিক্ষা দিতে পারলে তার মানসিক গঠন কাঠামোর উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। দার্শনিক জন লক মনে করেন, জন্মের সময় মানবশিশুর মন থাকে অলিখিত সাদা কাগজের মতো। সেখানে কোনো ধারণা মুদ্রিত থাকে না। পরবর্তীতে আমরা মানব মনে যে বিচিত্র ধারণার সহাবস্থান লক্ষ করি এবং যুক্তি ও জ্ঞানের সব উপাদান মনে আসে, তা সম্ভব হয় একমাত্র অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। অভিজ্ঞতার পূর্বে তার মনের মধ্যে কোনো ধারণা বা গুণ থাকে না। এ থেকে আমরা বলতে পারি, রাজা হিসেবে যেমন কেউ জন্মগ্রহণ করে না, তেমনি কেউই জন্মগত অপরাধী নয়। পারিপার্শ্বিক নানান কারণে একজন ব্যক্তি অপরাধী হয়। একজন ব্যক্তির শৈশব ও কৈশোরের পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ গঠনমূলক ও আনন্দময় হলে পরবর্তী জীবনে এর সুফল পাওয়া যেতে পারে।
একজন ব্যক্তি অন্যদের সাথে কীভাবে আচরণ করবে, তার উদ্দেশ্য কী হবে, এসব বিষয়ে তার ব্যক্তিত্বকে পরিশীলিত ও পরিচালিত করে নৈতিক শিক্ষা। নৈতিক মূল্যবোধ হলো, একগুচ্ছ নীতিমালা, যা সারাজীবন ব্যক্তিকে পরিচালিত করে। এই নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেওয়া উচিত কি না সে প্রশ্নে কিছু মতভেদ আছে। অনেকেই মনে করে, নৈতিক মূল্যবোধ শেখানো যায় না, এটা বরং মানুষ বয়োজেষ্ঠ্যদের নিকট শিখে থাকে। এক্ষেত্রে প্রথমেই যে প্রশ্নটি উঠতে পারে, তাহলো আমরা একটি ভ্রান্ত কাজ থেকে সঠিক কাজকে কীভাবে পৃথক করবো যদি না ঐ বিষয়ে জ্ঞান থাকে? একটি কাজকে কেউ সঠিক, কেউবা ভ্রান্ত বলে বিবেচনা করতে পারে। কাজেই সমাজে সবাই মিলে বসবাস করার স্বার্থেই নীতিশিক্ষা বা নৈতিক মূল্যবোধের সর্বজনীন মানদ- থাকা জরুরি। নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা তাই গুরুত্বপূর্ণ। স্কুল পর্যায়ে নীতিশিক্ষার গুরুত্বকে তাই কেউ অস্বীকার করতে পারে না। নীতিশিক্ষার প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ করলেই আমরা নীতিশিক্ষা পাঠের গুরুত্ব অনুধাবন করতে সক্ষম হবো। প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের নীতিবোধ শেখানোর কোনো সর্বজনীন পদ্ধতি কি আছে? সত্যিকার অর্থে বলা যায়, সবার নিকট গ্রহণযোগ্য সেরকম কোনো পদ্ধতি পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন উপায়ে ব্যক্তির নৈতিক শিক্ষা লাভ হয়ে থাকে। যেমন: একজন শিশুকে নৈতিক মূল্যবোধ শেখানোর ক্ষেত্রে শিক্ষক ও পিতামাতা মূল ভূমিকা পালন করে থাকে। শিশু অসদাচরণ করলে সাধারণত প্রথমেই তার পিতামাতা ও শিক্ষককে দায়ী করা হয়। শিশু সাধারণত নিজ নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য অনেক সময় মিথ্যা কথা বলে। শিক্ষকদের উচিত তাদের সঠিক নির্দেশনা ও উপদেশ দেওয়া। শিক্ষকরা শিশুদের সবচেয়ে বড় উৎসাহদাতা। শিক্ষার্থীরা সবসময়ই শিক্ষকদের আদর্শ হিসেবে মনে করে। তাই শিক্ষকদের উচিত নিজেদের নীতিবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেব গড়ে তোলা, যাতে শিক্ষার্থীদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এছাড়াও নৈতিক গল্প পড়ার মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নীতিবোধ গড়ে উঠে থাকে। নীতিবোধসম্পন্ন ও সংস্কৃতিবান পরিবারের শিশুরাও অনেক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মন্দ পরিবেশের কারণে নৈতিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলতে পারে।নৈতিক ভিত্তি একজন ব্যক্তির জন্য প্রয়োজন। এজন্য স্কুল পর্যায়ে নীতিবোধ শেখার ব্যবস্থা থাকা জরুরি। শৈশবে ইতিবাচক শিক্ষার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির নিষ্ঠুর হবার আশঙ্কা কমে যায় বলে বার্ট্রান্ড রাসেল মনে করেন। এক্ষেত্রে একটি উপায় হতে পারে, যেসব মনীষী জীবনে সঠিক পথ অনুসরণ করেছেন তাদের জীবনী পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা। একই সাথে বিভিন্ন নৈতিক গল্প পাঠ্য পুস্তকের মধ্যে সন্নিবেশিত করা, যাতে করে শিক্ষার্থী সেসব অধ্যয়ন করে নীতিশিক্ষা পেতে পারে। আরেকটি উপায় হলো স্কুল পর্যায়ে আলাদা পাঠ্যবই বা কোর্স হিসেবে ‘নীতিশিক্ষা’ বা এরূপ অন্য কোনো নামে স্বতন্ত্র কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। যদি স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের নীতিবোধ শেখানো যায় তবে ভবিষ্যতে নৈতিক সঙ্কট চিহ্নিত করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। নীতিশিক্ষার তাৎপর্য খুবই ব্যাপক। তাই নীতিশিক্ষা মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। সমকালীন দর্শনের গতিধারায় একটি যুগান্তকারী দিক হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় স্কুলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিশুদের দর্শন শিক্ষা দেবার লক্ষ্যে তাদের উপযোগী করে গ্রন্থ রচনা করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানব সভ্যতাকে দিয়েছে জ্ঞানের শক্তি, কিন্তু এই শক্তির দিক নির্দেশনা আসবে নৈতিক আদর্শের দৃষ্টিকোণ থেকে। তা না হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞানের শক্তির প্রয়োগ সভ্যতার জন্য সঙ্কট তৈরি করবে, যেমন ঘটেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। তাছাড়া আমরা মনে করি, মানুষের অপরাধপ্রবণতা দূর করার জন্য প্রয়োজন কী কারণে অপরাধ করছে, তা অনুসন্ধান করা এবং সেই কারণগুলো দূর করার চেষ্টা করা। অর্থাৎ তার অপরাধের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক বা নৈতিক কারণগুলো খুঁজে পেলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সহজ হতে পারে। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্যে দক্ষ মানবশক্তি প্রয়োজন, যার জন্য স্কুল পর্যায়ে, বিশেষত মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে সাহিত্য, ভাষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় পাঠদান করা হয়। কিন্তু বর্তমানের কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রমে ‘নীতিশিক্ষা’র সীমাবদ্ধতা আছে। মানুষের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত হলেও সর্বব্যাপী রূপ নিয়েছে দুর্নীতি, যা টেকসই উন্নয়নের জন্য বড় বাধা। এই বাধা দূর করার জন্য কেবল দক্ষ মানবশক্তি নয়, বরং নৈতিক ও মানবিক শক্তিরও প্রয়োজন। কিন্তু নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টির সহায়ক কোনো স্বতন্ত্র পাঠ্যবিষয় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাক্রমে না থাকার বিষয়টি মারাত্মক উদ্বেগজনক হয়ে দেখা দিয়েছে। অথচ, কৈশোরে নীতিবোধ জাগ্রত করতে পারলে ব্যক্তি ভবিষ্যতে নৈতিক সঙ্কট চিহ্নিত করে সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। তাই গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের শিক্ষাক্রমে স্বতন্ত্র কোর্স হিসেবে নীতিশিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। পরিশেষে, এ কথা বলা যায় যে, দুর্নীতিসহ সকল ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে নৈতিকতাবোধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই যুক্তিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের শিক্ষাক্রমে স্বতন্ত্র পাঠ্য বিষয় হিসেবে ‘নীতিশিক্ষা’ অন্তর্ভুক্ত করার বিকল্প নেই। লেখক: সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি