তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আপামর বাঙালি সাম্প্রদায়িক নয়। সবাই মিলেমিশে একাকার। সেই কারণে এ দেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাঝেমধ্যে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করলেও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেই অপশক্তি অবদমিত হয়েছে। তবে দেখা যায়, যখন নির্বাচন আসে, তখন এই অপশক্তি আবার ফণা তোলার অপচেষ্টা চালায়। তাই তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। গত শনিবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর বনানী মাঠে স্থাপিত পূজাম-পে গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন আয়োজিত শুভ মহালয়া-১৪৩০ অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা বাঙালি, তারপর ধর্মের পরিচয়। কিন্তু এই চেতনার মূলে আঘাতের ফলে পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সব সম্প্রদায়ের মানুষের মিলিত রক্তস্রোতে ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, লাল সূর্যখচিত সবুজ পতাকা ছিনিয়ে এনেছি।’ ১৯৭৫ সালের পর সেই সাম্প্রদায়িক ভাবধারা ফিরিয়ে আনা হয়েছিল উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজকেও সেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আমাদের দেশে আছে। তারা সময়ে সময়ে তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি বলেন, ‘আমরা গত ১৫ বছরের পথচলায় চেষ্টা করেছি, ৭৫-এর পরে বাংলাদেশের যে মূল চেতনা হারিয়ে গিয়েছিল, তা ফিরিয়ে আনার। একটি রাষ্ট্রের কখনও ‘‘শত্রু সম্পত্তি আইন’’ ধরনের আইন থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। সেটি বিলুপ্ত করে ভিন্ন আইন করা হয়েছে। এভাবে অনেক কাজ করা হয়েছে।’ দেশে সম্প্রীতির উদাহরণ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আজ বাংলাদেশে সবকিছু ছাপিয়ে বড় উৎসব, বাঙালির উৎসব হয়ে দাঁড়িয়েছে পয়লা বৈশাখ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের দেশে যেভাবে বাংলা নববর্ষ পালিত হয়, সরকারিভাবে ভাতা এবং ছুটি দেওয়া হয়, সেটি অনেক ক্ষেত্রে পাশের দেশেও নেই।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার, ধর্ম যার যার রাষ্ট্রও সবার। আর সেটির প্রতিফলন আমরা দেখি দুর্গাপূজা, ঈদ, প্রবারণা পূর্ণিমাসহ সব ধর্মীয় পার্বণে, যেখানে সব ধর্মের মানুষ উৎসবমুখর হয়ে শামিল হয়।’
মানুষের সামর্থ্য ও সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বিধানের কারণে প্রতি বছর পূজাম-পের সংখ্যা বাড়ছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই শুভ মহালয়ায় দেবী দুর্গার যে আগমনী বার্তা ধ্বনিত হচ্ছে, তা সব ধর্মের যে মর্মবাণী, মানুষে-মানুষে শান্তি-সম্প্রীতি, তা আরও দৃঢ় করবে বলে আশা করি।’ শিল্পী মনোজ সেনগুপ্তের স ালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গুলশান-বনানী পূজা উদযাপন ফাউন্ডেশনের সভাপতি পান্না লাল দত্ত, সাধারণ সম্পাদক প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ, সন্তোষ শর্মা প্রমুখ। শেষে ফাউন্ডেশনের শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।