ইসরায়েল রোববার সকালে দক্ষিণ গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে উত্তর গাজায় হামলার তীব্রতা আরও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, রোববার সকালে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। দক্ষিণের রাফাত শহরেও ইসরায়েল হামলা চালাচ্ছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী অবরুদ্ধ গাজায় ফিলিস্তিনিদের উত্তর থেকে দক্ষিণ অ লে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দক্ষিণ গাজায় এই হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা গাজা ভূখ-ে হামলা চালিয়ে যাব এবং হামলা তীব্রতা আরও বাড়াব। আপনার নিজের নিরাপত্তার জন্য দক্ষিণ দিকে সরে যান। গাজা উপত্যকার উত্তরে অবস্থান করলেন নিজেকে বিপদের মধ্যে ফেলবেন। কেউ যদি উপত্যকার দক্ষিণে না যান ও উত্তরা লে থাকার সিদ্ধান্ত নেন, তবে তাকে সন্ত্রাসী সংগঠনের সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করা হবে।’ উত্তর গাজার বাসিন্দাদের অভিযোগ, একদিকে গাজার উত্তরে হামলার তীব্রতা আরও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। অন্যদিকে গাজার দক্ষিণেও সমানতালে বোমাবর্ষণ করে চলেছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলায় এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৮৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৩ হাজারের বেশি। গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ইতোমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১০ লাখ।
গাজায় রাতভর বিমান হামলায় ৫৫ ফিলিস্তিনি নিহত: গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান যুদ্ধে বাড়তেই আছে নিহতের সংখ্যা। শনিবার গাজায় রাতভর ইসরাইলি বিমান হামলায় ৫৫ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। হামাস গ্রুপ বলছে, ৫৫ জনেরও বেশি নিহত হয়েছেন। এদিকে সরকারি প্রেস অফিস বলেছে, ইসরাইলি সামরিক মুখপাত্র অভিযান বাড়ানো হবে বলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৩০টিরও বেশি বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, রাতভর বিমান হামলায় অন্তত ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। এদিকে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪ হাজার অতিক্রম করেছে।
উল্লেখ্য, গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করেছে বলে ঘোষণা করে। এর প্রতিরোধে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরাইল। এক বিবৃতিতে হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফ বলেন, গত শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে ইসরাইলে পাঁচ হাজার রকেট বর্ষণের মাধ্যমে ‘অপারেশন আল-আকসা স্ট্রম’ শুরু হয়েছে। এ সময় ইসরাইল গাজা থেকে অনুপ্রবেশের কথা স্বীকার করে। বস্তুত, ১৯৫৩ সালের পর এই প্রথম এত বড় মাত্রার যুদ্ধ শুরু হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অ লে। সূত্র : আল-জাজিরা
২ সপ্তাহে ইসরায়েল ৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে: দুই সপ্তাহে ইসরায়েল পাঁচ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে। শনিবার আল-জাজিরা অনলাইন এ তথ্য জানিয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার আগে ইসরায়েলি কারাগারে প্রায় পাঁচ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি ছিল। এরপর থেকে, ইসরায়েল গাজা থেকে প্রায় চার হাজার শ্রমিককে গ্রেপ্তার করেছে। এরা ইসরায়েলে কাজ করতো। তাদের সামরিক ঘাঁটিতে আটক রাখা হয়েছে। পৃথকভাবে অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে সেনা অভিযানে আরও এক হাজার ৭০ জন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েল।
বন্দিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা রামাল্লাভিত্তিক অ্যাডামির প্রধান সাহার ফ্রান্সিস আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘২৪ ঘণ্টাই গ্রেপ্তার চলছে।’ তিনি জানান, গাজার বেশির ভাগ লোককে দক্ষিণ নাকাব মরুভূমিতে বিয়ার আল-সাবে (বিয়ের শেভা) এর কাছে সেডে টাইম্যান নামের একটি সামরিক ঘাঁটিতে আটকে রাখা হয়েছে। রামাল্লার কাছে ওফার কারাগারে এবং অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আনাতা গ্রামের কাছে আনাতোট সামরিক ক্যাম্পে আরও কয়েকশ বন্দি রয়েছে। যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের সঙ্গে ভয়াবহ দুর্ব্যবহার এবং নিপীড়নমূলক আচরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি আইনজীবী ও কর্মকর্তারা। সূত্র : আল জাজিরা, জেরুসালেম পোস্ট এবং অন্যান্য