বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গণতন্ত্রের বিজয় পতাকা উড্ডীন না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘তৃতীয় দফায় ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের আজ শেষ দিন। শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিকে বানচাল করার জন্য সরকার তার চন্ডনীতির সবকিছু প্রয়োগ করেছে। নির্বিচারে গ্রেফতার এবং কোথাও কোথাও মুক্তিপণ আদায় চলছে গ্রেফতারের পর। অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের আরো নানা বিষয়ে এক দফা দাবিতে এই অবরোধ কর্মসূচি। র্যাব-পুলিশ, বিজিবি ও আওয়ামী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে যৌথভাবে যে গেস্টাপো বাহিনী তৈরি হয়েছে তারা জনগণের সাথে ‘সহিংস আচরণ’ করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য গোটা জাতির নিরাপত্তাকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে। এবং আরেকটি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। কিন্তু বঞ্চিত, ব্যথাহত, নিপীড়িত জনগণ সর্বশক্তি দিয়ে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন হতে দেবে না। সীমালংঘনকারী আওয়ামী লীগের বেপরোয়া দুর্বৃত্তপনার বিরুদ্ধে জনগণ পথে-পথে, সড়কে-মহাসড়কে মানবপ্রাচীর গড়ে তুলে অবরোধ অব্যাহত রাখবে। কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তি ও পরিত্রাণ পেতে এক দফার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ প্রেরণের দাবিতে অবরোধ চলবে। দলের মহাসচিবসহ সকল নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে অবরোধ চলবে। গণতন্ত্রের বিজয় পতাকা উড্ডীন না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে। আমাদের সংগ্রাম চলবেই।’
রিজভী বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেড় দশকে বাংলাদেশের জনপদ এক মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রহীন, মানবাধিকারহীন, মানবিক মর্যাদাহীন, নিষ্ঠুরতার যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ তথা আজকের বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আজ রক্তাক্ত, ক্ষত-বিক্ষত মানুষের করুণ আর্তনাদের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের সমগ্র মানুষ আজ ফিরে পেতে চায় হারানো গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে হাজারো অত্যাচার-নিপীড়ন সহ্য করে জনগণ আন্দোলন সংগ্রাম করছে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের দাবি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন, সকলের অংশগ্রহণ, নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া- যা বিগত দেড় দশকে এ সরকার রাষ্ট্র, সমাজ থেকে সেগুলো উচ্ছেদ করেছে। উল্লেখিত দাবি আদায়ে আন্তরিক ও নিরন্তর উদ্যোগে জনগণ দৃঢ় সংকল্পে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। অদ্ভুত এক শাসন চলছে বাংলাদেশে। ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের দাবি জানালে অগ্নিশর্মা ও নিষ্ঠুর হয়ে উঠে। কেউ দাবি জানালেও সে ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দল হোক তাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয় আর তার জন্য কারাবাস হয়ে উঠে অপরিহার্য। সংকীর্ণ রাজনৈতিক মনোবৃত্তি নিয়ে ডাকাতের ন্যায় আচরণ করছে শাসকগোষ্ঠী। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যেন উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়েছেন তারা। তাই সরকারের বিরোধিতাকে তারা বিপজ্জনক মনে করে। আর এই কারণেই শুরু হয়েছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর সর্বগ্রাসী ফ্যাসীবাদী অভিযান।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী, একদলীয় শাসনের ভিত বহুদিন ধরে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী। রাষ্ট্র সমাজে গণতান্ত্রিক বহুত্বের ধারণাকে ক্রমান্বয়ে অবলুপ্তির পথে ঠেলে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী ও নেতারা মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, আইনের শাসনের পরিবর্তে উন্নয়নের কুহকী অতি প্রচারণা চালিয়ে আসছে। শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই অভিযানও চলছে সমান্তরালভাবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন বাধ্য করা হচ্ছে একমাত্রিক আলাপ-আলোচনা। আওয়ামী ফ্যাসিজমের শিকড় বিস্তৃত করা হয়েছে চারিদিকে। উন্মত্ত ক্ষমতাক্ষুধা কাণ্ডজ্ঞানের বিলোপ ঘটিয়েছে ক্ষমতাসীনদের। দেশের বিরোধী দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বের কূটনীতিকদের মন্তব্যের ফ্যাসিজমের ক্রোধ ভয়ানক রূপ লাভ করেছে। একজন রাষ্ট্রদূতকে শারীরিক নির্যাতনেরও হুমকি হয়েছে। আর আওয়ামী মন্ত্রী-নেতারা ক্রমাগতভাবে কদর্য ও ভয়ানক বাণীমালা দিয়ে যাচ্ছেন। অবলীলাক্রমে তারা বাংলাদেশে শুধুমাত্র তাদের বিরোধী পক্ষই নয় জাতিসঙ্ঘ, মানবাধিকার গ্রুপ, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অচল, অবান্তর, বর্জনীয় শব্দে বাক্যবান নিক্ষেপ করে যাচ্ছেন।’
‘মিথ্যা প্রচার, নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে অন্যের ওপর দায় চাপাতে র্যাব-পুলিশকে দিয়ে তীব্র দমন-পীড়নের কৃতিত্বে আস্ফালনের দ্বারা আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র কায়েম করেছে’ অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, আওয়ামী লীগ নাকি কখনো গুম, খুন ও বিরোধী দলের দমনের রাজনীতি করেনি। তাহলে কারা ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরুসহ বিএনপি নেতাদের এবং অন্যান্য নিখোঁজ ব্যাক্তিদের নিরুদ্দেশ করেছে? গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে ভণ্ডুল করেছে কে?’
তিনি বলেন, ‘দেশকে এক অজানা গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী সরকার। দেশ অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে, রাজনীতিতে চলছে সর্বনাশা একনায়কতন্ত্র, একচ্ছত্র আধিপত্যে পর্যবসিত বাংলাদেশ। সামাজিক সংহতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। নিজস্ব স্বার্থে বাংলাদেশকে করা হয়েছে কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর তাঁবেদার। প্রবল অবহেলার মধ্যে রয়েছে দেশের জনগণ। শ্রমজীবী মানুষকে এখনো রক্ত দিয়ে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। আত্মম্ভরিতা জন্য বৈদেশিক বাণিজ্যে ধস নামতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে গত এক মাসে পোশাক রফতানি কমেছে ৩৫ শতাংশ।
এ সময় সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের বিবরণ তুলে ধরেন রিজভী।