মন্তব্য প্রতিবেদন
চরম রাজনৈতিক সঙ্কটে উপনীত বাংলাদেশ। ২৮ অক্টোবরের সরকারি নীল নকশার তা-বের পর বিরোধী দলের ডাকা অবরোধে অচল সারা দেশ। রাজধানী কার্যত সারা দেশ থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। অবরোধের সাথে গার্মেন্টশ্রমিকদের আন্দোলন সরকার সহিংসতার মাধ্যমে দমন করায় উত্তেজনা বেড়েছে। শ্রমিকের রক্তে রক্তাক্ত হয়েছে রাজপথ। রাজধানী ও দেশের সর্বত্র বাসে আগুন, মহাসড়কে ব্যারিকেড ও জনরোষে আতঙ্কজনক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক, নৌপথ এমনকি আকাশপথে শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। ইতোমধ্যে শিল্পা লে উৎপাদন বিপর্যয় ঘটেছে। বিজিএমইএ’র একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির ভ্যালু কমেছে ৩৪.৪৭ শতাংশ। ডলার সঙ্কটের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সর্বত্র। উৎপাদন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে চলছে স্থবিরতা।
ইতোমধ্যে বহুল কথিত সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চালের দামে উল্লম্ফন ঘটেছে। ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন ক্ষমতালিপ্সার কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের ভয়াবহতা লক্ষ করছে দেশবাসী। শান্তিপূর্ণ উপায়ে সঙ্কট উত্তরণে সরকারের কাছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী ও সিভিল সোসাইটি বারবার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার কোনো কর্ণপাত করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ সুপারিশে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে। জি এম কাদের বলেছেন, একতরফা তফসিল ঘোষণা করলে আরো বড় স্যাংশন আসতে পারে। তারপরও দেশপ্রমহীন বেপরোয়া সরকার একতরফা নির্বাচনের দিকেই যাচ্ছে। সবমিলিয়ে দেশ কার্যত একটি যুদ্ধাবস্থায় নিপতিত হয়েছে। রাজনৈতিক অচলাবস্থা, অর্থনৈতিক অরাজকতা ও প্রশাসনিক অপারগতায় কার্যত বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে।
আওয়ামী লীগ সরকার এই সর্বাত্মক সঙ্কট থেকে দেশ রক্ষা করার পরিবর্তে চরম শক্তি প্রয়োগের নীতি বেছে নিয়েছে। বিগত দেড় দশক ধরে তারা জনগণের ওপর নির্মম নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চাচ্ছে। তারা হামলা-মামলা, গুম-খুনকে তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা রক্ষার বাহন করে নিয়েছে। বিশেষ করে সমাগত জাতীয় নির্বাচনের আগে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব, সেখানে একটি রাষ্ট্রিক যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে তারা ক্ষমতায় আরোহণকে নিষ্কণ্টক করতে চাচ্ছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়কাল বিশ্লেষণ করলে বাকশালের প্রতিরূপই দেখা যাবে। পার্থক্য শুধু আইন ও বেআইনি কাঠামোর।
গত ১৫ বছরে তারা অসংখ্য লোককে হত্যা করেছে। অসংখ্য পরিবারকে নিঃশেষ করেছে গুমের মাধ্যমে। বন্দুকযুদ্ধের নামে বেআইনিভাবে রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা করেছে। এ নিষ্ঠুর সরকার অনেকের চক্ষু নষ্ট করেছে। হাঁটুর নিচে গুলি করে টিপুর মতো অসংখ্য মানুষকে চিরতরে পঙ্গু করে দিয়েছে। লাখ লাখ মানুষকে গ্রেফতার করেছে। লাখো আজব গায়েবি মামলা দিয়ে কোটি কোটি মানুষকে নিপীড়ন করেছে। তাদের জেলখানা সবসময় পরিপূর্ণ রাজবন্দীতে। মৌলিক রাজনৈতিক অধিকার থেকে বি ত থেকেছে সাধারণ মানুষ। কথা বলার স্বাধীনতা অস্বীকার করা হয়েছে। সমাবেশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে।
সাংবাদিকদের জেলে যেতে হয়েছে। এভাবে পুরো দেশকে তারা জেলখানায় পরিণত করেছে। পুরো বাংলাদেশ যেন আজ একটি রুদ্ধ কারাগার। মার্কিন প্রভুদের চাপে কিছুটা সময় নমনীয়তা দেখালেও যখন তারা জনতার উত্তাল তরঙ্গ দেখেছে তখনই তারা হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে জনতার ওপর। যখন তারা শতভাগ নিশ্চিত হয়েছে যে, জনগণের ভোটে তাদের ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা নেই, তখন তারা ২৮ অক্টোবর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জনগণের বিজয়কে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা করেছে। এর আগে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর তারা লগি-বৈঠার তা-ব চালিয়ে বাংলাদেশকে আধিপত্যবাদীদের হাতে তুলে দেয়ার নীল নকশায় সফল হয়।
২৮ অক্টোবর থেকে এই কলাম লেখা পর্যন্ত অত্যাচার-অনাচার ও মিথ্যাচার ছাড়া জনগণ আর কিছুই প্রত্যক্ষ করেনি। ওই দিন বিনা প্ররোচনায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। কয়েকজন নিহত হয়, শত শত লোককে আহত করে। শত শত মামলা দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে আসামি বানায়। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের একে একে সবাইকে গ্রেফতার করে। বিএনপি অফিস গত ২০ দিন ধরে অবরুদ্ধ। নির্বাচন কমিশন তথাকথিত সংলাপের চিঠি দিয়েছিল। বিএনপি অফিসের চেয়ারের উপর পড়ে থাকতে দেখা যায় সেই চিঠি। বিএনপিকে নেতাশূন্য করার জন্য গ্রাম, উপজেলা ও জেলাপর্যায়ে ২৮ অক্টোবরের আগে-পরে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের ক্ষমতার প্রথম এবং প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতৃত্বকে নিঃশেষ করার জন্য ইতোমধ্যে তারা সাজানো মিথ্যা মামলায় বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়েছে। বিএনপির পরবর্তী উত্তরাধিকার তারেক জিয়াকে আজীবন শাস্তি দিয়ে দেশে ফেরার পথ বন্ধ করেছে। কোনোরকম ভদ্রতা ও সৌজন্যের তোয়াক্কা না করে তারেক জিয়ার রাজনীতিবিচ্ছিন্ন স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে আরেকটি সাজানো মামলায় শাস্তি দিয়ে রেখেছে- যাতে সে বাংলাদেশে এসে বিএনপির হাল না ধরতে পারে। এভাবে ইতঃপূর্বে তারা জামায়াতে ইসলামীর আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক রেখেছে। জামায়াতের সব স্তরের অনেক নেতাকর্মী এখন জেলে। দলটি কোনো ঘরোয়া বৈঠকও করতে পারছে না। অথচ যেকোনো ব্যক্তির রাজনৈতিক সংগঠন করার মৌলিক অধিকার রয়েছে। সরকার আন্দোলনরত ডান ও বামসহ সব রাজনৈতিক দলের প্রতি নিপীড়নের নীতি অব্যাহত রেখেছে।
২৮ অক্টোবর-পরবর্তী অবস্থায় কোনো রাজনৈতিক কার্যকলাপ চলছে না। হরতাল অথবা অবরোধ বৈধ রাজনৈতিক অধিকার। অথচ ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, অবরোধ করতে দেখলে কঠোরভাবে দমানো হবে। সরকারের ক্যাডাররা প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। এজেন্সিগুলোর অত্যাচারের পরও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিরোধীদের মুখোশ পরে হত্যা করছে। ইতোমধ্যে বিএনপি-জামায়াতসহ সব দলের অনেক নেতাকর্মী হত্যার শিকার হয়েছে। কোনো জায়গায় কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ করার অনুমতি পাচ্ছে না কোনো দল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যুদ্ধাবস্থার মতো মহড়া দিচ্ছে সর্বত্র। প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক ভাষায় কথা না বলে অপরাজনীতির ভাষায় কথা বলছেন। জনগণ আক্ষরিক অর্থেই তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। অবরোধ জনগণের সতত সমর্থনে ক্রমেই গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করছে। বলতে গেলে পুলিশ ও জনতা মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী যথার্থই বলেছেন, সরকার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
এ রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতির যথার্থতা ফুটে উঠেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম পীর সাহেব চরমোনাইয়ের ভাষ্যে। গত ১২ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, একজন নেতা ও একটি দলের গোঁয়ার্তুমির কারণে দেশ আক্ষরিক অর্থেই যুদ্ধাবস্থায় নিপতিত হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষমতার প্রয়োগ অর্থে স্বাধীনতার যে তাৎপর্য তা হারিয়ে গেছে। ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন ক্ষমতালিপ্সার কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের ভয়াবহতা ব্যাখ্যা করেন তিনি। পীর সাহেব বলেন- ১. রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সীমাহীন গোঁয়ার্তুমি; ২. আক্ষরিক অর্থেই পরাহত স্বাধীনতা; ৩. সমঝোতার সব পথ রুদ্ধ হওয়া; ৪. আওয়ামী লীগের উগ্রবাদী দলে পরিণত হওয়া; ৫. নির্বাচন কমিশনের কলঙ্কের নি¤œস্তরে পৌঁছে যাওয়া; ৬. জনপ্রশাসনের স্বকীয়তা ও আদর্শ হারানো ও ৭. দেশের অর্থনীতি, দ্রব্যমূল্য ও সুশাসনের চূড়ান্ত অবনতি- এসব প্রেক্ষাপটে তার বক্তব্য রাখেন।
তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল চার দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হচ্ছে- ক. নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন; খ. গ্রেফতারকৃত রাজনৈতিক ও ওলামায়ে কেরামকে মুক্তি প্রদান ও রাষ্ট্রপতির মধ্যস্থতায় সংলাপের আয়োজন; গ. দলান্ধ নির্বাচন কমিশন বাতিল ও রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির আগে কোনো অবস্থাতেই তফসিল ঘোষণা না করার দাবি। এসব দাবি পূরণ না হলে তিনি তা আদায়ের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেন। প্রথমত, একতরফা তফসিল ঘোষণা হলে সে দিনই ঢাকায় নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল করা। দ্বিতীয়ত, তফসিল ঘোষণার পরের দিন সারা দেশে প্রতিটি জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল। তৃতীয়ত, তিনি আন্দোলনরত অন্যান্য বিরোধী দলের সব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান।
উল্লেখ্য, ইতঃপূর্বে ৩ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত মহাসম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন অনুরূপ চার দফা ঘোষণা করে সরকারকে আলটিমেটাম দেয়। সেই সাথে বিএনপিসহ সব শীর্ষ নেতাদের মুক্তি দাবি জানায়। তারা সরকারকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ওই সব দাবি মেনে নেয়ার আলটিমেটাম দেয়। সরকার কোনো কর্ণপাত করেনি। ওই ঘোষণায় আরো বলা হয়, সরকার এসব দাবি মেনে না নিলে আন্দোলনরত সব বিরোধী দলের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সময়ে কঠোর ও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সুতরাং বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, সব দলের সাথে আলোচনাক্রমে হয়তো ঘোষিত কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। মূলত পীর সাহেবের ওই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিদ্যমান যুদ্ধাবস্থা থেকে রাজনৈতিক মুক্তির পথ দেখানো হয়েছে।
পুনশ্চ, এই লেখাটি যখন শেষ পর্যায়ে তখন একটি জনপ্রিয় দৈনিকের একটি প্রতিবেদনে অস্ত্রের ঝনঝনানির একটি খতিয়ান লক্ষ করা যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক কর্মসূচি ও প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সমর্থকরা। এভাবে বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ হলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না জেলা প্রশাসন অথবা পুলিশ। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার হলেও তা পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। তার অর্থ দাঁড়ায়, ওই অবৈধ অস্ত্র তারা উদ্ধার করতে চায় না। দেশে এখন বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে প্রায় আট হাজার অস্ত্র রয়েছে আওয়ামী লীগের হাতে। বাকি সব সাধারণ মানুষের। এই বৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্রের সংখ্যা অগণিত। আওয়ামী লীগের নিজের অবৈধ অস্ত্রের প্রদর্শনীকে বৈধ করার জন্য সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র আসছে বলে বারবার অভিযোগ করেছে। ভারত থেকে কার কাছে অস্ত্র আসবে সেটি সাধারণ মানুষ জানে। এখন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার একটি যুদ্ধাবস্থায় নিপতিত করেছে দেশকে। সাধারণত ভোটের সময় নির্বাচন কমিশন বৈধ অস্ত্র জমা দিতে বলে। কিন্তু এই সময়ে বশংবদ নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনকে নিরঙ্কুশ করার জন্য হয়তো সে দিকে নজর দেবে না। প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, ময়মনসিংহের নান্দাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিলে অস্ত্র প্রদর্শন করেন স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব:) আবদুস সালামের জামাতা জাহিদ হাসানের দেহরক্ষী কামরুজ্জামান। পুলিশ প্রকাশ্য অস্ত্র প্রদর্শনের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে গত ২২ মে প্রকাশ্যে পিস্তল হাতে মিছিল করে আলোচনায় আসেন চট্টগ্রাম-১৬ আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের কেউ কেউ বিক্ষোভ দমনেও বৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করছেন। গত ২১ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরের পল্লবীতে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মাঠে নামেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আওলাদ হোসেন ওরফে লাক্কু। এসব উদাহরণ প্রকাশ্য। অপ্রকাশ্যে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য তারা যে অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার করছে তা সহজেই অনুমেয়।
বাংলাদেশের এই যুদ্ধাবস্থার মূল কারণ হলো- সরকার পরিবর্তনে জনগণের সম্মতির বিপরীতে শাসকদলের শক্তি প্রয়োগ। নির্দিষ্ট মেয়াদের পর সরকার পরিবর্তনে জনমতের মুখোমুখি হওয়া আধুনিক বিশ্বে সর্বজনস্বীকৃত একটি রীতি। এই রীতি বাস্তবায়নে নির্বাচনকে অবাধ-নিরপেক্ষ করা অতীব জরুরি। বোধহীন সি¤œœস্তরের স্বৈরাচার ছাড়া আর কেউ এই প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে না। অথচ স্বাধীনতার পর ক্রমেই আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সেই অধিকার অস্বীকার করেছে। পীর সাহেব চরমোনাই এ অবস্থা ব্যাখ্যা করে বলেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে ১৯৯৬ সালে দেশে সর্বজনীন রাজনীতি ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সর্বজনীন সমর্থিত ব্যবস্থাকে আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে প ম সংশোধনীর মাধ্যমে ওই ব্যবস্থা বাতিল করেছে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এই রাজনৈতিক অবস্থায় শুধু শঙ্কিতই নয়; বরং একটি মনস্তাত্ত্বিক চাপে রয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সব দল, মত ও সিভিল সোসাইটির পক্ষ থেকে সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছে। সর্বশেষ মার্কিন আহ্বানের পর সরকার সংলাপে বসার ব্যক্তি, দল ও গোষ্ঠী খুঁজে পাচ্ছে না। এর আগে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেছিলেন, কে বিরোধী দল? কার সাথে সংলাপে বসব? রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহল সতর্ক করছে, সংলাপ বা সমঝোতা বা সরকার সরে না গেলে এই যুদ্ধাবস্থায় নিপতিত দেশকে উদ্ধার করা যাবে না। সুতরাং জেদ ও জুলুম পরিহার করে সরকার জনস্বার্থে, রাষ্ট্রের স্বার্থে ও তাদের নিজেদের স্বার্থে অবিলম্বে সংলাপে বসবে- এটিই আজকে জনগণের প্রত্যাশা। লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com