উৎসবমুখর একটা পরিবেশ দেখাতে যত চেষ্টা
একতরফা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে বেশ চিন্তায় আওয়ামী লীগ। এজন্য প্রার্থীদের কড়া নির্দেশনা দিয়েছে দলটি। পাশাপাশি দলে আন্তঃকলহ বাড়লেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও সন্তোষজনক ভোটার উপস্থিতি নিয়ে এখনো চিন্তায় আওয়ামী লীগ।
দলটির নেতারা বলছেন, তারা তাদের সব কৌশল অবলম্বন করে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করার চেষ্টা করছেন। তাদের দাবি, এরই মধ্যে নির্বাচন জমে উঠেছে। আরও জমবে। উৎসবমুখর একটা পরিবেশ তৈরি হবে। সবাই উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দিতে যাবে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার পাশাপাশি সন্তোষজনক ভোটারের উপস্থিতি দেখাতে চান তারা।
আমেরিকার মতো গণতান্ত্রিক ও শিক্ষিত সমাজে ৪০ শতাংশ ভোটও কাস্ট হয় না। সেখানে আমাদের মতো দেশে সব মানুষ ভোট দিতে আসবে এমটা আশা করতে পারি না। তবে বাংলাদেশের নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে হয়। এবারও ভোটাররা আগ্রহ নিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসবে। গত ২৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে বসেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন তিনি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নির্বাচন বিষয়ে নির্দেশনা দেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আহ্বান জানাতে হবে ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য। কেন্দ্রে ভোটার আনতে কাজ করতে হবে। ভোটার টানতে যত কৌশল বা কর্মসূচি প্রয়োজন তা নিতে হবে।’
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির চ্যালেঞ্জ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি আমেরিকায় ছিলাম। সেখানে অনেক নির্বাচন দেখেছি। আমেরিকার মতো গণতান্ত্রিক ও শিক্ষিত সমাজে ৪০ শতাংশ ভোটও কাস্ট হয় না। সেখানে আমাদের মতো দেশে সব মানুষ ভোট দিতে আসবে এমটা আশা করতে পারি না।’ গত ২৬ নভেম্বর নৌকার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
তিনি বলেন, ‘তবে বাংলাদেশের নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে হয়। এবারও ভোটাররা আগ্রহ নিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসবে। বিএনপি আসলে ভোটার বেশি আসতো। তারপরও অনেক প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন, বিএনপিরও অনেক প্রার্থী এসেছেন। যে কারণে সারাদেশে অনেক মানুষের ভোটে অংশগ্রহণ থাকবে। ভোটার উপস্থিতি আশানুরূপ হবে বলে মনে করি।’ দলটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং চাঁদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. সেলিম মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘কেন্দ্রে ভোটার নিয়ে আসতে আমরা ভোটকেন্দ্র কমিটিকে অ্যাকটিভ করছি। তারা জনে জনে গিয়ে ভোট চাইবেন। ভোটারদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করবেন। আমার এলাকার (কচুয়া) মানুষ ভোট দিতে মুখিয়ে আছে।’ ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসানে নৌকার প্রার্থী এ কে এম শামীম ওসমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি পরীক্ষামূলক একটা প্রোগ্রাম করেছি যে কেমন সাড়া পাওয়া যায় দেখার জন্য। সেখানে আমি দেখেছি, কোথাও ৫ থেকে ৭ হাজার এসেছে, কোথায় ২ হাজার, কোথাও আবার ৫শ, দুইশ লোকও এসেছে। আমি দেখলাম, গড়ে কেন্দ্রপ্রতি আমার সাত থেকে আটশর বেশি সাড়া আছে। তাতে মনে হয়েছে, আমার ভোটার (সমর্থক) আমি ৫০ শতাংশের ওপরে উপস্থিত করাতে পারবো। বাকি দলগুলো তো আছেই।’
ভোটার উপস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা আশা করবো, ভোটারদের উপস্থিতি বাড়বে। এ নিয়ে আমাদের প্রচেষ্টা আছে। এবারে অনেকে বলবে, আওয়ামী লীগ জিতবে। খামোখা গিয়ে ভোট দিয়ে কী হবে! বিশেষ করে শিক্ষিত ও টাকাওয়ালা লোকেরা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে চান না। কিন্তু গরিবরা ভোট দেন। আমাদের দায়িত্ব হবে তাদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা। এজন্য আমাদের বাহন (রিকশা) দরকার হবে তাদের নিয়ে আসতে। আমরা চাইবো নির্বাচন কমিশন যাতে রিকশাটা চলাচলের অনুমতি দেয়। নাহলে বেশি লোক ভোটকেন্দ্রে আনা ও ভোট দেওয়া আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে।’ এরই মধ্যে ভোটার আকৃষ্ট করতে ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা ২০ ডিসেম্বর সিলেটে জনসভার মধ্য দিয়ে এই ক্যাম্পেইন বা প্রচারণা শুরু করেছেন। অনলাইনে ও সরাসরি প্রচারণা চলবে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।
আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান ৬ লাখ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্রশিক্ষিত এই কর্মী বাহিনী মাঠে কাজ করছে। এদের একেকজন আছেন ২০০ ভোটারের দায়িত্বে। এই পক্রিয়ায় তারা ১২ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে কাজ করছেন। এর বাইরেও এই ক্যাম্পেইনের আওতায় ৬ লাখ কর্মীর প্রশিক্ষিত বাহিনী ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান ৬ লাখ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্রশিক্ষিত এই কর্মী বাহিনী মাঠে কাজ করছে। এদের একেকজন আছেন ২০০ ভোটারের দায়িত্বে। এই পক্রিয়ায় তারা ১২ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে কাজ করছেন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ কর্মশালায় মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এই কার্যক্রমের আওতায় ২০০ মাস্টার ট্রেইনারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এসব মাস্টার ট্রেইনার সারাদেশে ৬ লাখ নেতাকর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
প্রশিক্ষিত ৬ লাখ কর্মী সব ভোটারের ঘরে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণের এই উদ্যোগকে বলা হচ্ছে ‘অফলাইন ক্যাম্পেইন’। এদের সবার ওপরে রয়েছেন ‘মাস্টার ট্রেইনার’। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৬ লাখ নেতাকর্মী সরাসরি ভোটারের মুখোমুখি হয়ে মাঠপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য তার ভাবনা কী, তা তুলে ধরছেন। তারা ভোটারদের নানান প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন। পাশাপাশি বিরোধীদলের অপপ্রচারের পাল্টা বক্তব্য তুলে ধরছেন, যা ভোটারদের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।
এই উদ্যোগ সমন্বয়ের জন্য একজন ফোকাল পয়েন্ট নিযুক্ত করা হয়েছে। কর্মীদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে কাজ করছে কেন্দ্রীয় কল সেন্টার। এছাড়া এই পুরো কর্মযজ্ঞ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে সমন্বয় করছে এক তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ দল। তাদের বিশ্বাস, এই প্রচারের ফলে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। -জাগোনিউজ২৪.কম