বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ একধরনের চাপা কষ্টে দিন অতিবাহিত করছে। রাজনৈতিক নিপীড়ন, অর্থনৈতিক শোষণ, দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে দেশ এক সঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। এর মাঝেই ক্ষমতালোভী আওয়ামী সরকার আগামী ৭ জানুয়ারি এদেশের মানুষের সাথে নির্মম উপহাস, প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করতে চলেছে। আওয়ামী সরকার নিজেরা নিজেরাই ডামি প্রার্থী দিয়ে, কে কোন আসনে নির্বাচিত হবে সেই তালিকা প্রস্তুত করে একটি নির্বাচনী নাটক ম স্থ করছে। এই নির্বাচন এদেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণের নির্বাচন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন এদেশের জনগণের কোনো নির্বাচন নয়, এটা আধিপত্যবাদের চাপিয়ে দেয়া নির্বাচন। আধিপত্যবাদের এদেশীয় দোসরেরা তা বাস্তবায়ন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যেই এদেশের মানুষ এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রহসনের এই নির্বাচনের সাথে সাধারণ জনগণের কোনো সম্পর্ক নাই। ফলে দেশপ্রেমিক ও ইসলামী চেতনায় বিশ্বাসী কোনো মানুষ এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে না। গণকারফিউ মত বাড়িতে অবস্থান করে এই প্রহসন ও তামাশার নির্বাচন বর্জন করতে হবে।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র উপহার প্রদানকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের খিলগাঁও দক্ষিণ থানার উদ্যোগে আয়োজিত এই শীতবস্ত্র উপহার প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবু ফাহিম। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য ও থানা আমির আশরাফুল আলম ইমনের সভাপতিত্বে এবং থানা সেক্রেটারি সাজেদুর রহমান শিবলীর পরিচালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন থানা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ মোহাম্মদ, জহিরুল হক সেলিম, কুদরাতুল ফাত্তাহ আজমল, ইসাহাক মিয়া, আবিদুর রহমান, ছামিউর রহমান শামীম, জামায়াত নেতা সাইফুল ইসলাম, আনিসুর রহমান, মাওলানা খলিলুর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী শুধু শীত বা বন্যা নয় বরং যেকোনো দুর্যোগ দুর্ভোগে সহযোগিতা নিয়ে এদেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ইসলামের নির্দেশনার আলোকে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আমরা আল্লাহর নির্দেশে যেমন নামাজ, রোজা, হজ করে থাকি সেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশেই আমরা এই সমাজসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। শত জুলুম নিপীড়ন ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও জামায়াতের এই সমাজকল্যাণমুলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। শীতার্ত মানুষের কাছে কম্বল দিয়ে মুলত আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাই। আজ দেশে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত থাকলে আপনাদের কষ্ট করে কম্বল নিতে আসতে হতো না। বরং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আপনাদের বাড়িতে গিয়ে এই উপহার সামগ্রী পৌছে দেয়া হতো। এই ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে যারা এদেশকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করে আসছে সেই আধিপত্যবাদী শক্তির চক্রান্ত এখনো চলমান রয়েছে। বাংলাদেশকে তাদের করদ রাজ্যে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আগামী প্রজন্মকে শেষ করে দেয়ার সকল ষড়যন্ত্র তারা করে ফেলেছে। শিক্ষায় মানুষ আলোকিত হয়, কিন্তু বর্তমান কারিকুলাম জাতিকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করছে। যারা মানুষ গড়ার কারিগর সেই শিক্ষকের কাছে আমাদের বোনদের-মেয়েদের শ্লীলতাহানি হচ্ছে, ছাত্র সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের ফলে ঘরে ঘরে ঐশীদের মত সন্তান তৈরি হচ্ছে। ফলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে নিয়ে আজ গভীর উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। আগামী প্রজন্মকে বিনষ্ট করার এই কারিকুলাম অবিলম্বে বাতিল করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আধিপত্যবাদের ক্রীড়নক হিসেবে এই ফ্যাসিস্ট সরকার জামায়াতে ইসলামীর ওপর দমন পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, আমরা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দাসত্ব করি ফলে দুনিয়ার কোনো রক্তচক্ষুকে আমরা ভয় পাই না, কোনো আধিপত্যবাদের পরোয়া করি না। আল্লাহর হুকুম মানতে গিয়ে শহীদ আমিরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ফাসির মে জীবন দিয়েছেন তবুও বাতিলের কাছে আত্মসমর্পণ করেননি। যারা জামায়াতে ইসলামীকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল তারাই আজ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশকে গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। অপরদিকে জামায়াতের এই ত্যাগ ও কুরবানীর জন্য আল্লাহ তায়ালা জনগণের কাছে জামায়াতের মর্যাদাকে আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীকে ফাসি, হত্যা করে, গুম করে, মামলা দিয়ে, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে, পঙ্গু করে থামিয়ে দেয়া যায়নি এবং ভবিষ্যতেও থামিয়ে দেয়া যাবে না। এদেশের দেশপ্রেমিক ইসলামপ্রিয় জনতাকে সাথে নিয়ে জামায়াতে ইসলামী সমস্ত আধিপত্যবাদ, জুলুমতন্ত্র ও স্বৈরাচারের মোকাবিলা করে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে সমুন্নত রাখবে ইনশাআল্লাহ। প্রেস বিজ্ঞপ্তি