শব্দটি সিওয়াক শব্দমূল থেকে নিষ্পন্ন। এর আভিধানিক অর্থ হলো- ঘষা-মাজা বা মর্দন করা। এর বাংলা প্রতিশব্দ হলো দাঁতন। ইসলামী পরিভাষায়- দাঁত থেকে হলুদ বর্ণ বা এ জাতীয় ময়লা দূর করার জন্য কাঠ বা গাছের ডাল ব্যবহার করাকে মিসওয়াক বলা হয়। মিসওয়াক করা মহানবী সা:-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এতে রয়েছে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক অনেক ফায়দা। আল্লামা ইবনে আবেদিন বলেছেন মিসওয়াকে রয়েছে ৭০টির ঊর্ধ্বে উপকারিতা। প্রত্যেকটি হাদিসের কিতাবে মিসওয়াকের কথা গুরুত্বের সাথে বর্ণনা করা হয়েছে।
মিসওয়াক করার সময় : মিসওয়াক করার সময় ৯টি। যথা- ১. সালাতের সময়; ২. কুরআন মাজিদ তিলাওয়াতের সময়; ৩. অজু করার সময়; ৪. ঘুম থেকে জাগ্রত হলে; ৫. ঘুমানোর আগে; ৬. মুখ দুর্গন্ধযুক্ত হলে; ৭. দীর্ঘ সময় কথা বলার পর; ৮. পানাহারের পর ও ৯. দুর্গন্ধযুুক্ত খাদ্য খাওয়ার পর। অজুু ও সালাতের সময় মিসওয়াক করা সুন্নত। অন্যান্য সময় মিসওয়াক করা মুস্তাহাব।
মিসওয়াক প্রসঙ্গে দলিল : মিসওয়াক করা আল্লাহ তায়ালার কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয় কাজ। মহানবী সা: থেকে মিসওয়াক প্রসঙ্গে ৪০টি হাদিস বর্ণিত আছে। তিনি বলেছেন, যখনই হজরত জিবরাইল আ: আমার কাছে আসতেন, তখনই আমাকে মিসওয়াকের নির্দেশ দিতেন। এতে আমি আশঙ্কা বোধ করলাম যে, (মিসওয়াক করে) আমি আমার মুখের সম্মুখ দিক ক্ষয় করে দেবো।’ (আহমাদ-২২২৬৯, মিসকাত-৩৫৫) উম্মুল মু’মিনিন হজরত আয়েশা রা: বলেন, মহানবী সা: মিসওয়াক করতেন। অতঃপর মিসওয়াকটি ধৌত করার জন্য আমাকে দিতেন। আমি (ধৌত করার আগে) প্রথমে তা দিয়ে নিজে মিসওয়াক করতাম। তারপর তা ধৌত করতাম। (আবু দাউদ, মিশকাত-৩৫৩) হজরত আয়েশা রা: আরো বলেন, মহানবী সা: রাতে বা দিনে যখনই ঘুম থেকে উঠতেন তখনই অজু করার আগে মিসওয়াক করতেন। (আহামদ, আবু দাউদ, মিসকাত-৩৫২) মহানবী সা: বলেছেন, ‘নবী-রাসূলদের সুন্নাত হলো চারটি। যথা-১. লজ্জা করা, অন্য বর্ণনায় খতনা করা; ২. সুগন্ধী ব্যবহার করা; ৩. মিসওয়াক করা; ৪. বিয়ে করা।’ (তিরমিজি, মিশকাত-৩৫১) মহানবী সা: আরো বলেছেন, ‘মিসওয়াক হলো মুখ পরিষ্কার করার উপকরণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়।’ (আহমাদ, নাসায়ি, মিসকাত-৩৫০) রাসূলুল্লাহ সা: অন্যত্র বলেছেন, ‘যদি আমি আমার উম্মতের ওপর কষ্টকর মনে না করতাম, তবে অবশ্যই প্রত্যেক সালাতের আগে মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম।’ (বুখারি-৮৮৭, মুসলিম-২৫২, মিশকাত-৩৪৬) হজরত হুজাইফা রা: বলেন, মহানবী সা: যখন রাতে তাহাজ্জুদ সালাত পড়ার জন্য উঠতেন, তখন মিসওয়াক দ্বারা প্রথমে নিজের মুখ পরিষ্কার করতেন।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত-৩৪৮) রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘১০টি কাজ দ্বীনি স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত- ১. গোঁফ ছোট করা; ২. দাড়ি বড় করা; ৩. মিসওয়াক করা; ৪. পানি দিয়ে নাক সাফ করা; ৫. নখ কাটা; ৬. আঙুল খেলাল করা; ৭. বগলের চুল উপড়ে ফেলা; ৮. গুপ্তস্থানের চুল কাটা; ৯. পানি দিয়ে ইস্তেঞ্জা করা, ১০. কুলি করা। (মিশকাত-৩৪৯)
যে জিনিস দিয়ে মিসওয়াক করা উত্তম : তিক্ত, কাঁচা ও নরম গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা উত্তম। মহানবী সা: জাইতুন ও খেজুরগাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করতেন। পিলুগাছের মিসওয়াক ব্যবহারে মস্তিষ্ক সতেজ হয়। দাঁতের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অভাব পূরণ করে। ব্রাশ ব্যবহারে মুখ পরিষ্কার হয়, দুর্গন্ধ দূর হয় ও সুন্নত আদায় হয়। কিন্তু ডাল ব্যবহারে যে ফায়দা তা পাওয়া যায় না।
মিসওয়াক কেমন হওয়া উচিত : মিসওয়াক নিজ হাতের আঙুলের মতো মোটা এবং এক বিঘত পরিমাণ লম্বা হওয়া উচিত। এতে মিসওয়াক করতে সুবিধা হয়।
মিসওয়াক করার পদ্ধতি : মিসওয়াক করার সুন্নত পদ্ধতি হলো মুখের ডান দিক থেকে শুরু করা এবং উপর থেকে নিচে মিসওয়াক করা। আড়াআড়িভাবে না করা। দাঁতের ভেতর ও বাইরেসহ জিহ্বার গোড়া পর্যন্ত মিসওয়াক করা। মিসওয়াক করার সময় ডান হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলি মিসওয়াকের নিচে থাকবে। মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুলি উপরে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি নিচে থাকবে। লেখক : প্রধান ফকিহ, আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী