ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির নির্মাণ ও উদ্বোধনের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা।
গত মঙ্গলবার ২৩ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে রাজধানীর বসুন্ধরায় মিছিল ও সমাবেশ করে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা। একই সময় রাজধানীর দয়াগঞ্জ এলাকায় কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহর নেতৃত্বে মিছিল ও সমাবেশ করে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা। মিছিল সমাবেশে মহানগর সভাপতি, সেক্রেটারিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করে।
মিছিলোত্তর সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, “ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদি ১৯৯২ সালে একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী জঙ্গিগোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিয়ে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদকে ধ্বংস করেছিল। সেই সাথে হত্যা করেছিল প্রায় দুই হাজার মুসলমানকে! ২০১৯ সালে সেই মোদি সুপ্রিম কোর্টের ওপর প্রভাব বিস্তার করে হিন্দুত্ববাদকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে মুসলিম জাতির ঐতিহ্যের প্রতীক ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদকে বিতর্কিত রায়ের মাধ্যমে উৎখাত করে। তারা সেখানে তথাকথিত রাম মন্দির নির্মাণ করেছে। এখন তারা সেটি উদ্বোধন করেছে। এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে ভারত আবারো একটি মুসলিমবিরোধী উগ্রবাদী রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের পরিচিত করেছে। আমরা এই বিতর্কিত ও অন্যায় অপকর্মের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। আমরা ছাত্রসমাজসহ সকলকে এ ঘৃন্য কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে আমরা মুসলমানদের ঐতিহ্য বাবরি মসজিদ ও ভারতের মজলুম মুসলমানদের পাশে দাঁড়াতে জাতিসংঘ, ওআইসি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।”
অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির নির্মাণে ছাত্রশিবিরের প্রতিবাদ: ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় অবস্থিত মুসলমানদের পনেরো শতকের ঐতিহাসিক স্থাপনা বাবরি মসজিদ ভেঙে সেখানে রাম মন্দির স্থাপনের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। সোমবার ২২ জানুয়ারি ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম এক যৌথ বিবৃতিতে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
ছাত্রশিবির নেতৃবৃন্দ বলেন, “মুসলিম জাতিসত্তার ওপর আঘাত হেনে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে এর স্থলে রাম মন্দির স্থাপন করে ভারত সরকার সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নরেন্দ্র মোদি সরকার মুসলমানদের এ ঐতিহাসিক স্থাপনাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার এক ন্যক্কারজনক নজির স্থাপন করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”
নেতৃবৃন্দরা বলেন, “বারবি মসজিদস্থলে কোনো মন্দির ছিল না, তা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। বাবরি মসজিদের নিচে ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বারবার খুঁড়েও কোনো মন্দিরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে ওই এলাকায় বেশ কয়েকবার খোঁড়াখুঁড়ি চালানো হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতœতাত্ত্বিকই মন্দির খুঁজে পাননি। এমনকি সর্বশেষ ভারতের প্রতœতত্ত্ব বিভাগ ‘দ্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এআইএ)’র প্রতœতাত্ত্বিক খননেও কোনো মন্দিরের অস্তিত্ব মেলেনি। এএসআই’র চূড়ান্ত রিপোর্টেও কোনো মন্দির থাকার কথা উল্লেখ করা হয়নি।” ঐতিহাসিক উদ্বৃতি তুলে ধরে নেতৃবৃন্দ বলেন, “পনেরো শতকের ঐতিহাসিক স্থাপনা বাবরি মসজিদ ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর গুঁড়িয়ে দেয় বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপি, শিব সেনা ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উগ্রপন্থিরা। মসজিদ ধ্বংসের প্রায় ১০ বছর পর ২০০২ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে অযোধ্যার বিধ্বস্ত বাবরি মসজিদের জমিতে খনন কাজ চালানোর নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে প্রতœতাত্ত্বিকদের একটি দল। ২০০৩ সালের আগস্টে ৫৭৪ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট কোর্টে জমা দেয় এএসআই।
রিপোর্টে সংস্থাটি দাবি করে, বিধ্বস্ত বাবরি মসজিদের নিচে মাটি খুঁড়ে তারা একটি ‘বিশালাকার কাঠামো’ খুঁজে পেয়েছে। তবে এ কাঠামো যে মন্দিরের এর সপক্ষে তারা তাদের রিপোর্টে কোনো শক্ত প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। তারপরও কট্টর হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার এবার পবিত্র বাবরি মসজিদকে ভেঙে রাম মন্দির উদ্বোধন করেছে! ভারতের সাধারণ নির্বাচনের আগে বিতর্কিত রাম মন্দিরের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী মোদির তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার অনানুষ্ঠানিক প্রচার হিসেবেই দেখছি আমরা। আমরা এহেন সাম্প্রদায়িক কর্মকা-ের প্রতিবাদ জানাই।” নেতৃবৃন্দরা আরো বলেন, “স্বাধীন ধর্মচর্চার কথা ভারতীয় সংবিধানে উল্লেখ থাকলেও উগ্রবাদী মোদি সরকার তা কখনোই মানেনি। উগ্রবাদী মোদি সরকারের এমন কর্মকা-ে মুসলিম বিশ্ব হৃদয়ে আঘাত পেয়েছে এবং কলিজায় রক্তক্ষরণ হয়েছে। মসজিদের জায়গায় মন্দির নির্মাণ মুসলমানরা কখনো মেনে নেবে না। আজ নয় কাল বিশ্ব মুসলিম বাবরি মসজিদকে পুনরুদ্ধার করবে, ইনশাআল্লাহ। ভারতীয় উগ্রবাদী মোদি সরকারকে এ ঘটনার চরম জবাবদিহি করতে হবে। বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির উদ্বোধন করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর উস্কানি দিচ্ছে মোদি সরকার। বিশ্বের যেকোনো জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সকল দায়ভার মোদি সরকারকে নিতে হবে।”